তীব্র তাপপ্রবাহের পর কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ২০ মিনিটের ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির। বিশেষ করে বোরোধান, মরিচ, বেগুন, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শসা, করলা, ডাটা, আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে। পাকা ধানের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে।
উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচরনওপাড়া (বনপাড়া), উজানচর-নওপাড়া (ফকিরপাড়া) বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের নওশতি গ্রাম এবং উচাখিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার (৫ মে) বিকেল ৫টার দিকে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। সন্ধ্যার পর বাতাসের গতি বাড়তে থাকে। পরে আনুমানিক রাত ১২টার দিকে ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। এরপর থেমেও যায়। রাত ২টার দিকে ফের শুরু হয় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। মাত্র ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে শেষ হয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন।
এলাকাবাসী বলছেন, বিগত ৩০ বছরেও এমন শিলাবৃষ্টি তারা দেখেনি। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ফসলের ক্ষেত ও টিনের ঘরবাড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে অনেকের ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যায়। ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ২ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হেক্টর জমির। ফলে শিলাবৃষ্টিতে ধান ও সবজির আনুমানিক ক্ষতির মোট পরিমাণ ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর-নওপাড়া গ্রামের কৃষক আল-মামুন বলেন, 'আমার ৬০ শতাংশ জমিতে প্রতিবছর ধান ৪২-৫০ মণ পেতাম। এ ছাড়া ৩৫ শতাংশ জমিতে মরিচ করে গত বছর ১ লাখ টাকার ওপর বিক্রি করেছিলাম। এবার ফসল ভালো হয়েছিল। আশা করেছিলাম ফলন ভালো পাবো, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ঋণ করে এসব ফসল চাষ করেছে।
সরকারের কাছে কৃষিঋণ মওকুফ করে কৃষিকাজে সার্বিক সহযোগিতার দাবি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।
একই গ্রামের আরেক কৃষক আবুল কাশেম বলেন, মাত্র ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আমার মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মরিচ ঝরে পড়ে গেছে, শুধু গাছ দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোও হয়তো মারা যাবে।
ওই গ্রামের গৃহবধূ শামীমা আক্তার সীমা বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। আমার ঘরের অধিকাংশ টিন ছিদ্র হয়ে ঘরের ভেতরেও শিলা পড়েছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো। এই ভাঙা ঘরে কীভাবে থাকবো বুঝতে পারছি না। আমার আশপাশের কয়েকটি বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান বলেন, শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বোরোধান ও সবজির কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সরকারিভাবে যদি কৃষকদের সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ আসে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ইতোমধ্যে কৃষি ডিপার্টমেন্ট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে আমাকে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকলে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ঝড়ে ঘরবাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ভোক্তভোগীরা আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন