৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ৮ মে। এবারের ভোটে চেয়ারম্যান পদের জন্য লড়ছেন চারজন। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে দুজনকে।
তারা দুজন হলেন, নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতার উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু ও আপন ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস পারভেজ। তারা দুজনই এমপির প্রার্থী বলে মাঠে ভোটারদের কাছে ভোটের প্রচার করছেন।
গত ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচার প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা। শুরু করেন পথসভা ও মাইকযোগে প্রচারণা। ভোটযুদ্ধে উপনীত হওয়ার আগে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দ্বারে দ্বারে কুড়িয়ে বেড়াচ্ছেন জনসমর্থন। এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (২ মে) এক নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন এমপির ভাতিজা আনারস প্রতীকের প্রার্থী ফেরদৌস পারভেজ। তিনি বলেন, ‘ভোটে জয়ী হতে হলে নরমালে যদি না হয়, সিজার করে করা হবে। মাথার ওপরে এমপির হাত আছে।’
তার এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ভিডিওতে তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘আগে ছিলো দশ হাজার টাকা জামানত এখন দেড় লাখ টাকা এটা কি মুখের কথা ওটে কি আছে আমি দেখব নরমালে না হলে আমি সিজার করে ভোট করব। এমপি সাহেব মাথার উপর আছে, আমাদের কি উন্নয়ন করা যাবে না?’
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আরও দেখা যায়, তিনি উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নে এক পথসভায় মাইক হাতে নিয়ে দাড়িয়ে সামনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য এসব মন্তব্য করছেন। এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ঠিক ঠিক বলে চিৎকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ভোটাররা জানান, এমপি সাহেবের ভাতিজা পারভেজ নিজ মুখে কেন্দ্র দখলের কথা বলেছেন, যার ভিডিও ইতোমধ্যে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলেন, ভোট যদি সিজার বা দখল করে হয় তাহলে ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে লাভ কি? আর ভোটের জন্য সরকারের এত টাকা খরচ করার দরকার কি? তাদেরকে এমনিতেই দিয়ে দিলে হয়।
হেনস্তার শিকার হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক ভোটার বলেন, প্রকাশ্যে এমন বক্তব্যের কারণে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণ আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। এসব বক্তৃতা শুনে ভোটারদের মনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, সরকার যেখানে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে এমপির ভাতিজার এমন বক্তব্য এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। এতে ভোটাররা তার হাত থেকে বাঁচতে তাকেই (ফেরদৌস) ভোট দিতে পারে।
তিনি আরো বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ডিমলা প্রিজাইডিংদের মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে তিনি বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন কারো প্রভাব বিস্তারে নয় -ভোট হবে স্বচ্ছ। অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দিতে চাই আমরা। রাজনৈতিক দলের এমপি-মন্ত্রী যেই হোক না কেন অবৈধ প্রেসার দিলে তা আমলে নেয়া হবে না। বরং সেদিনে সন্ধ্যায় মতবিনিময় সভার পর এমপির ভাতিজার এমন বক্তব্য- আমাদেরকে শঙ্কায় ফেলেছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকের ফেরদৌস পারভেজের মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, ভিডিওটা সুপার ইডিট করে আমার শত্রু পক্ষ ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি এসব কথা বলিনি।
জনসভায় উপস্থিত ভোটাররা বলছেন আপনি এসব কথা বলেছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তারা আমার শত্রু পক্ষের ভোটার সমর্থক। আপনারা সাংবাদিকরা যাচাই করে সংবাদ উপস্থাপন করবেন বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
এ বিষয়ে জানতে নীলফামারী-১ (ডোমার ও ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে দেখবেন। সে এমন বক্তব্য দিয়ে থাকলে তার প্রার্থীতা কমিশন বাতিল করবে।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও ডিমলা রিটানিং অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বক্তৃতার বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে কোনো প্রার্থী বা ভোটারগণ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ, ডিমলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগ দলীয়। একজন রয়েছেন নির্দলীয়।
তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তবিবুল ইসলাম (কাপপিরিচ), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু (ঘোড়া), উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফেরদৌস পারভেজ (আনারস)। নির্দলীয় প্রার্থী গয়াবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান (মোটরসাইকেল)।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন