গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগরীতে পানির চাহিদা বেড়েছে, তবে পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে পানি উত্তোলনে বেগ পেতে হচ্ছে। এ জন্য পানির চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারি এই সেবাদানকারী সংস্থাকে।
জানা গেছে, মহানগরীর প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ওয়াসা। সংস্থাটির অধীনে বৈধ সংযোগধারী গ্রাহকের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার। এর বাইরে বস্তি এলাকা এবং নতুন ভবনের সংখ্যাও কম নয়। অবৈধ সংযোগের কোনো পরিসংখ্যান সংস্থাটির কাছে নেই। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর পানির চাহিদা পূরণে ৯৬০টি গভীর নলকূপ রয়েছে ওয়াসার। তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত ৩০টি গভীর নলকূপ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে দাবি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। অর্থাৎ এখন প্রতিদিন ৯৯০টি পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা।
গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ওয়াসা পরিসংখ্যান দিচ্ছে- ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার পানি লাগে। তবে গরমের সময় এই চাহিদা ২৮০-২৮৫ কোটি লিটারে পৌঁছে যায়। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, সবগুলো পাম্প সচল থাকলে প্রতিদিন ২৮৫ থেকে ২৯০ কোটি লিটার পর্যন্ত পানি সরবরাহ করার মতো সক্ষমতা সংস্থাটির রয়েছে। তবে সংস্থাটির তথ্য, পানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিদিন ২০ শতাংশ সিস্টেম লস হয়। অর্থাৎ ৫৭ কোটি লিটার পানি তারা দিতে অপারগ। এ তথ্যই বলছে, পানির ঘাটতি রয়েছে।
এদিকে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে তা উত্তোলনেও বেগ পেতে হচ্ছে। এ জন্য ঢাকা মহানগরীতে পানির চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারি এই সেবাদানকারী সংস্থাকে।
পাইপলাইনের মাধ্যমে বৈধ গ্রাহকদের পানি সরবরাহের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে খাবার পানি ও হাতমুখ ধোয়ার পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। তীব্র গরমের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকটের
অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা। মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক ৬ নম্বর সড়কের একাধিক বাড়ির পাম্পে পানি না থাকায় ওয়াসার গাড়ি দিয়ে বাড়তি পানি নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অভিজাত এলাকা গুলশানেও পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জুরাইন, নন্দীপাড়া, আদাবর, মিরপুর, সায়েদাবাদ এলাকার কিছু কিছু বাড়িতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জুরাইনের মাদ্রাসা গলির বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে লাইনে পানি নেই। পানি না থাকায় গোসল করতে পারি না ঠিকমতো। দিনে দুই-একবার লাইনে পানি আসে, তাও অল্প।
একই অভিযোগ শেখেরটেক ৬নং রোডের বাসিন্দা হাসিনা বেগমের। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বাসায় ঠিকমতো পানি আসে না। তাই বাড়ির মালিক বাধ্য হয়ে দুই বেলা দুই গাড়ি পানি কিনে ভাড়াটিয়াদের রান্না ও গোসলের সুযোগ করে দিচ্ছেন। গরমে পানি বেশি লাগে। আর সেই সময় ওয়াসার পানির সংকট দেখা দেয়।
এ সংকটের বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানা গেছে। রাজধানীর দুই এক জায়গায় সংকট সাময়িক সমস্যা বলে মনে করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। কোথাও অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ওয়াসার প্রতিনিধি গিয়ে সেই পাম্প চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ও অ্যান্ড এম) প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, গরমে পানির চাহিদা একটু বাড়ে। সেজন্য আমরা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পাইপলাইনের মাধ্যমে ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ও বিভিন্ন পয়েন্টে পানির ট্যাংক বসিয়ে পথচারীদের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মহানগরীর কোথাও পানির পাম্প বন্ধের খবর পাওয়ার পর ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে তা চালু করার জন্য সব জোনে নির্দেশ দেওয়া আছে। কাজেই কোথাও ১৫ ঘণ্টার বেশি পাম্প বন্ধ থাকতে পারে না। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি সময় পাম্প চালু রাখতে হয়। যে কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতেই পারে। তবে অভিযোগ পাওয়ামাত্র আমরা সেই পাম্প চালুর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সংকটের খবর আসেনি।
ঢাকা ওয়াসার তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে ১০টি জোনে ভাগ করে পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। এ জন্য ৯৬০টি পাম্প রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে ২ হাজারের অধিক গভীর নলকূপের অনুমোদন রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মডস জোন-৫ এর আওতায় পড়েছে গুলশান-২। এ এলাকার ৫৫ থেকে ৭৪ নম্বর রোড পর্যন্ত বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনে পানির সংকট রয়েছে। ফলে গৃহস্থালির কাজ যথাসময়ে করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন