বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আমেরিকা সফরে পৌছার পর এয়ারপোর্টে রিসিভ করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা। একটি দেশের বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের কতটা তলানিতে গেছে সেটা অনুমান করার জন্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হাসান শাহিনের আমেরিকা সফরই যথেষ্ট। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হাসান শাহিন বর্তমনে আমেরিকা সফরে রয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র পৌছালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদসহ দলীয় নেতারা এয়ারপোর্টে তাঁকে স্বাগত জানান।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের জন্য একটি আরচণবিধি রয়েছে। এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই তিনি দলীয় লোকদের সংবর্ধ্বনা নিচ্ছেন। শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডাররা আচরণবিধির তোয়াক্কা করেন না। ওবায়দুল হাসানের ঘনিষ্ট বন্ধু এবং জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইনায়েতুর রহিম তো প্রকাশ্যে জনসভায় বলেছেন-ই তারা রাজনৈতিক শপথবদ্ধ বিচারক। ওবায়দুল হাসান যখন জাতীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইনায়েতুর রহিম তখন সংগঠনটির সেক্রেটারির দায়িত্বে ছিলেন। এখন ওবায়দুল হাসান প্রধান বিচারপতি এবং ইনায়েতুর রহিম সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়রিটির তালিকায় এক নম্বরে। সাবেক ছাত্রলীগ দিয়ে সাজানো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষা করবেন এটাই এখন স্বাভাবিক।
ওবায়দুল হাসান শাহিনের পিতা এক সময় আওয়ামী লীগের নেতা এবং নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর ভাই শেখ হাসিনার সচিব ছিলেন। বর্তমান ডামি নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন ওবায়দুল হাসান শাহিন। তিনি বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার কয়েক মাস পরই তাঁকে কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। শেখ হাসিনার অতি বিশ্বস্ত হিসাবে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাঁকে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার হাইকোর্টে ফিরিয়ে এনে আপিল বিভাগের বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তাফাজ্জাল ইসলামকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁর সময়েই বিচার ব্যবস্থার আওয়ামীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তিনি অবসরে যাওয়ার পর ফজলুল করিম বিচার ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগের হাতে সমর্পন করেন। ফজলুল করিমের বিদায়ের পর বিচারালয় সরাসরি আওয়ামী ক্যাডারদের হাতে উঠে খায়রুল হকের মাধ্যমে। এরই ধারবাহিকতায় আসেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। মাঝে অবশ্য আবদুল ওয়াহাব মিয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়ে বিচার ব্যবস্থা পৃথকীকরণের বিষয়টিতে চুড়ান্তভাবে পেরেক মেরে দিয়েছেন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের এবং হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও আওয়ামী লীগের ক্যাডার হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে রয়েছেন জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল হাসান শাহিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন