পেশায় ফটোকপি দোকানের কর্মচারী আরিফ ইউটিউব থেকে কৌশল শিখে কেনেন জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন মেশিনারি। এরপর রাজমিস্ত্রি অনিক ও পদ্মা নদীর জেলে জাহিদকে নিয়ে শুরু করেন জাল টাকা তৈরির কারবার। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে কম দামে জাল টাকা বিক্রির পোস্ট দিয়ে সংগ্রহ করতেন ক্রেতা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল চক্রটি।
তবে গত কয়েক দিনে প্রায় ১৩ লাখ জাল টাকার অর্ডার সরবরাহের সূত্র ধরে বুধবার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার দুর্গম চরমোহনসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট ও জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়। চক্রের মূল হোতা আরিফ ব্যাপারী (২০) শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চরমোহন এলাকার রতন ব্যাপারীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
অধিনায়ক বলেন, ‘নড়িয়া থানার ঘড়িষাড় ইউনিয়নের বাংলা বাজারে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতেন আরিফ। তিনি ইউটিউব থেকে জাল টাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে জাল নোট তৈরি শুরু করেন। পরে এ কাজে জাহিদ ও অনিককে সহযোগী হিসেবে নেওয়া হয়। এরপর তারা মিলে জাল টাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে।'
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা প্রতি এক লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি শুরু করে।
র্যাব জানায়, তৈরিকৃত জাল নোটগুলো বিক্রয়ের জন্য আরিফ, জাহিদ এবং অনিক মিলে ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রয়ের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের (যেমন- এ গ্রেড জাল নোট, টাকা চাই, জাল নোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেস ইত্যাদি) পোস্টে জাল টাকা ক্রয়ে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সঙ্গে ভুয়া আইডি খুলে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরে তারা হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইমো প্রভৃতি অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জাল টাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে।
এ চক্রটি বিগত সময়ে জাল টাকার বড় ধরনের একাধিক চালান ডেলিভারি দিয়েছে বলে জানান মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, চক্রটি পাঁচ লাখ টাকার জাল নোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিকালীন টাকা, মেশিন ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ র্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। তারা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর এলাকায় জাল নোট সরবরাহ করত বলে স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত আরিফ এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি পড়ালেখা বাদ দিয়ে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজারে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতেন। দোকানে আয়ের টাকা জমিয়ে জাল নোট ছাপানোর জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন। পরে তিনি নিজের ঘরে কম্পিউটারের দোকানে কাজের আড়ালে জাল নোট ছাপানোর কাজ শুরু করেন। আরিফের অন্যতম সহযোগী জাহিদ ও অনিক। তারা জাল নোট বিক্রি করে যে টাকা পেতো তার অর্ধেক আরিফ নিতো এবং বাকি অর্ধেক জাহিদ ও অনিক ভাগ করে নিতো।
জাহিদ নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে এবং পেশায় জেলে। ২০২১ সালে সৌদি ফেরত জাহিদ পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল বলে জানায়। কিন্তু সে অল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থের আশায় মাছ ধরার আড়ালে আরিফের সঙ্গে জাল নোট ছাপানোর কাজ শুরু করে। গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি অনিক পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি পেশার আড়ালে আরিফ ও জাহিদের সঙ্গে জাল নোট ছাপানোর কাজে যোগ দেয়। জাল টাকা ছাপানোর পর সঠিক সাইজ অনুযায়ী কাটিংয়ের কাজ করতেন অনিক। পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছে জাল টাকা পৌঁছাতে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র্যাব।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন