আইনে থাকলেও মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়নি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ও জাতীয় পার্টির কার্যালয়েও পতাকা ছিল পতাকাদণ্ডের চূড়ায় পূর্ণ উত্তোলন করা।
সরকারি সুষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ আইন ও বিচারবিভাগ ও সংসদের বিরোধী দলের কার্যালয়ে পতাকা অর্ধনমিত না রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে বিভিন্ন মহলে। তারা বলছেন, রাষ্ট্রের উঁচু পর্যায়ে এ কেমন ভুল! অবশ্য প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টরা দায় স্বীকার করে বলেছেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে সচিবালয়, রেল ভবনসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই জাতীয় পতাকা যথাযথ মর্যাদায় অর্ধনমিত দেখা গেছে।
গেল বছরের ৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নতুন নিয়ম জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সে অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ জাতীয়ভাবে শোক পালনের দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। পতাকাদণ্ডের ওপর থেকে চার ভাগের একভাগ দৈর্ঘ্যের সমান নিচে পতাকা বাঁধতে হবে।
তবে সরেজমিনে বুধবার বেলা ১১টা ৮ মিনিটে রাজধানীর কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে পতাকাদণ্ডের চূড়ায় পূর্ণ উত্তেলন করা দেখা গেছে জাতীয় পতাকা। দুপুর ১২টা ৮মিনিটে সেখানে পুনরায় ফিরে এসেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় পাওয়া যায়নি।
একইসঙ্গে গুগল ম্যাপ অনুযায়ী এই বাসভবনের ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বেলা সোয়া ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধনমিত নেই জাতীয় পতাকা। দুপুর ১টায় আবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে একই দৃশ্য দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে সরকারের প্রধান ও মুখ্য আইন পরামর্শক অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। যদি এমন হয়ে থাকে, জেনে জানাব।
বিষয়টি অবহিত করলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ রহমত আলী বুধবার দুপুর ১টা ১২ মিনিটে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান রয়েছে। সকলেই এটি মানতে বাধ্য।’
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ভবনের সামনে কেন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা না। আমি এখনই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। পতাকাটি ঠিক করার জন্য।’
এরপর উপসচিব ঢাকা টাইমসের কাছ থেকে পতাকা অর্ধনমিত না থাকার একটি ছবি হোয়াটসঅ্যাপে নিয়ে তা দেখার পর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
এদিকে সচিবালয় সড়কে গিয়ে রেল ভবনে সকাল থেকেই পতাকা অর্ধনমিত দেখা গেছে। দেশের প্রশাসনিক সদর দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়েও জাতীয় পতাকা যথাযথ মর্যাদায় অর্ধনমিত রাখা ছিল।
বেলা ১১টার দিকে কাকরাইলে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তাদের দলীয় পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা টানানো। কিন্তু মহান ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়নি। পতাকাদণ্ডের চূড়ায় উড়ছিল জাতীয় পতাকা।
এবিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আজকের দিনে পতাকা অর্ধনমিত না রাখা এক ধরনের অজ্ঞতার কাজ। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। এটা আমারসহ গোটা দলের ভুল। এর দায় আমারও।’
এর আগে গুলিস্তানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে তারা জাতীয় পতাকা রাষ্ট্রীয় বিধিমালা অনুযায়ী অর্ধনমিত রেখেছে। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও পতাকা অর্ধনমিত দেখা গেছে।
বেলা ১১টা ৬ মিনিটে কাকরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রোডের পাশে অবস্থিত শ্রম আপ্রিল ট্রাইব্যুনালেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত নেই।
এ বিষয়টি মুঠোফোনে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অধীর চন্দ্র বালার কাছে জানতে চাইতেই তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে নাম থাকা সদস্য হোসনে আরা বেগমের মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি অবসরে গিয়েছি, ট্রাইব্যুনালে নেই। তবে বিষয়টি আমি অফিসে (ট্রাইব্যুনালে) বলে দিচ্ছি, পতাকাটি ঠিক করার জন্য।’
জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার নতুন নিয়মে যা আছে:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ সংশোধন করে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ জাতীয়ভাবে শোক পালনের দিন সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
পতাকা অর্ধনমিত রাখার ক্ষেত্রে পতাকাদণ্ডের ওপর থেকে চার ভাগের একভাগ দৈর্ঘ্যের সমান নিচে পতাকা বাঁধতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংগীত, পতাকা এবং প্রতীক অধ্যাদেশ, ১৯৭২ এর আর্টিকেল-৫ এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার পতাকা বিধিমালা সংশোধন করেছে।
সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, পতাকা অর্ধনমিত রাখার ক্ষেত্রে পতাকা প্রথমে পতাকাদণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে। এরপর পতাকা দণ্ডের এক-চতুর্থাংশের দৈর্ঘ্যের সমান নিচে নামিয়ে পতাকাটি স্থাপন করতে হবে। পতাকা নামানোর সময় ফের পতাকা দণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত তুলে এরপর নামাতে হবে।
পতাকা অর্ধনমিত রাখার সময় মনে রাখতে হবে অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের প্রাক্কালে পতাকাটি পুরোপুরি উত্তোলন করে অর্ধনমিত অবস্থানে আনতে হবে এবং নামানোর প্রাক্কালে পতাকাটি শীর্ষে উত্তোলন করে নামাতে হবে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন