গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, একই সঙ্গে জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও আপত্তি ছিল দেশটির। তবে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপনের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাবও প্রস্তুত করেছে দেশটি। এতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফাহতে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের বিরোধিতা এবং যত দ্রুত সম্ভব সাময়িক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এই খসড়া প্রস্তাবে ৩টি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে- যত দ্রুত সম্ভব সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। হামাসের কাছে থাকা সব জিম্মির মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলোও দূর করার প্রস্তাব জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়াও রাফায় স্থল অভিযান না চালাতে ইসরায়েলকে সতর্ক করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে। এতে আরও বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েল যাতে বড় ধরনের স্থল অভিযান না চালাতে পারে, সে ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
এর আগে ইসরায়েলের বিপক্ষে আনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবে দুবার ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দুবার ভোটদানে বিরত থাকে।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর প্রায় এক মাস পর গত অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তুলেছিল রাশিয়া; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভেটো বা আপত্তির কারণে তা পাস হতে পারেনি।
তারপর আরও দু’দফায় নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে একাধিকবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠেছে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে; সর্বশেষ প্রস্তাবটি উঠেছিল গত সপ্তাহের মঙ্গলবার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির জন্য কোনো প্রস্তাবই আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে আল-জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বায়েস বলেন, এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি শব্দ ব্যবহার করেছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগে কোনো খসড়া প্রস্তাবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির কথা বলেনি। এখন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিল।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারীও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৬৯ হাজারের বেশি।
গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩৪ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন