চট্টগ্রামের একটি আদালতের বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়েছেন এক আসামি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের এজলাসে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আসামির নাম মো. মনির খান মাইকেল। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর গোকর্ন এলাকার গোলাপ খাঁর ছেলে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার আসামি।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিচারকাজ শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবিরকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি জুতা নিক্ষেপ করেন আদালত কক্ষের ডকে থাকা (আসামিদের অবস্থানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান) মনির খান মাইকেল। দ্রুত তাকে নিবৃত্ত করেন আদলতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। মামলার শুনানির জন্য এই আসামিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিচারক এজলাসে বসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে লক্ষ্য করে স্যান্ডেল নিক্ষেপ করেন আসামি মনির। তবে তা বিচারকের গায়ে লাগেনি। তিনি বসা অবস্থায় থাকার কারণে স্যান্ডেল মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে।
মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, আসামি মনিরের মামলার ধার্য তারিখ ছিল। এছাড়া তার আইনজীবী জামিনের দরখাস্ত দিয়েছিলেন। পুলিশ আসামিকে আগেই এনে আদালত কক্ষের ডকে রেখেছিল। তিনি স্যান্ডেল খুলে প্রবেশ করেছিলেন; কিন্তু কোনো এক ফাঁকে দুটি স্যান্ডেল হাতে নিয়ে একটার পর একটা বিচারককে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন। বিচারক তার চেয়ারে মাত্র বসেছেন, তখনো বিচার কাজ শুরু করেননি। আমরা আদালত কক্ষে উপস্থিত আইনজীবীরা রীতি অনুযায়ী দাঁড়িয়ে আদালতকে সম্মান দেখাচ্ছিলাম। সেই মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই আসামি মনির এ ঘটনা ঘটান। ওই সময় তিনি গালাগাল দেন এবং তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অথচ তখনো তার জামিনের শুনানিই হয়নি। দ্রুত পুলিশ ও আইনজীবীরা ছুটে এসে ওই আসামিকে নিবৃত্ত করেন।
এডিশনাল পিপি মেজবাহ জানান, যেহেতু আসামি ছিল পুলিশ কাস্টডিতে, তাই পুলিশই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। আমার জানামতে, পুলিশ এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করবে। এছাড়া আসামি মনিরের আইনজীবী তার পক্ষে যে জামিন আবেদন করেছিলেন, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি ওই আসামির পক্ষে আর জামিনের জন্য লড়বেন না বলে জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে দুটি ফেসবুক লাইভে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ আছে মনিরের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানায় মনির খান মাইকেলের (৩২) বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সহকারী পরিদর্শক (এসআই) তপু সাহা। পরদিন ২৩ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ মামলায় মাইকেলের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ জুন অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এরই মধ্যে তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মঙ্গলবারও এক আসামির সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন