জোরপূর্বক বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য মা-বাবার চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। এ কারণে টানা দুই সপ্তাহ ধরে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারা ফারজানা ইয়াছমিন তানিয়া (১৩) নামের কিশোরীটি স্কুল কর্তৃপক্ষের তদারকিতে গত রবিবার আবার স্কুলে ফিরে এসেছে। সাহসী কিশোরী তানিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছে-‘স্যার বিয়ে নয়, আমি লেখাপড়া করতে চাই।’
কিন্তু হবু বরের পক্ষ কিছুতেই কিশোরীর ঘর ছাড়ছে না।
অভিযোগ উঠেছে, বরের পরিবার সাম্প্রতিক সময়ে ‘ইয়াবা কারবারিতে’ নেমে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে গেছে। এ কারণে কিশোরী তানিয়ার মা-বাবাও এক পায়ে খাড়া মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়।
এ ঘটনা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির কিশোরী ছাত্রী ফারজানা ইয়াছমিন তানিয়াকে কেন্দ্র করে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল করিম কালের কণ্ঠকে জানান, ওই কিশোরী প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে জানিয়েছে- ‘আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে কিন্তু আমি পড়ালেখা করতে চাই এবং বিদ্যালয়ে আসতে চাই।’
প্রধান শিক্ষক বলেন, ছাত্রী তানিয়া গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে না আসার কারণ সন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে এরকম বাল্যবিয়ের আয়োজনের ঘটনাটি। এমনকি গত ১৫ সেপ্টেম্বর মেয়েটির বিয়ের আয়োজনও হয়ে গিয়েছিল। পরে উপজেলা প্রশাসনের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পুলিশ সহকারে গিয়ে হস্তক্ষেপ করায় রক্ষা পাওয়া গেছে।
এসময় মেয়েটির বাবা-মা লিখিত মুচলেকাও দিয়েছেন।
মেয়েটি প্রধান শিক্ষককে জানায়, তার বাবা-মা এক প্রকার জোর করেই তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে চেয়েছিল। এজন্য টানা ১৪ দিন স্কুলেও উপস্থিত হতে পারেনি তানিয়া। প্রধান শিক্ষক আরো জানান- সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কিশোরীটি নিজেই বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং সে বলছে-‘আমি বিয়ে করব না-আমি লেখাপড়া করব।’
বিষয়টি নিয়ে কিশোরী মেয়েটির মামা উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহির আহমদ কালের কণ্ঠকে জানান- ‘মেয়েটি ছোট থেকেই আমার ঘরে থেকে লেখাপড়া করে আসছিল।
আমারই অজান্তে তার বাবা-মা টাকার লোভে পড়ে একজন কিশোরী মেয়েকে এক ইয়াবা কারবারির ঘরে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
জহির আহমদ আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে আপাতত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ঠেকানো গেছে বটে কিন্তু বরাবরই আশংকা থেকেই যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে তাকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ের পিঁড়িতে বসানোও হতে পারে বলে আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এজন্য তিনি উখিয়া থানায় রবিবার একটি লিখিত আবেদনে নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং জামবাগান গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে আলাপকালে জানান- ‘আমরা ভুল করেছিলাম বাল্যবিয়ের আয়োজন করে। এমন কাজ আর করব না বলে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত মুচলেকা দিয়েছি। এছাড়া আমার মেয়েটিও পড়ালেখা করতে চায় তাই পড়ুক সে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন