মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুনে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৮৫০ পরিবার। ভোরে আগুন লাগলে তারা পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিয়ে বের হতে পারেননি। খোলা আকাশের নিচে হাহাকার চলছে এসব মানুষের। একটু একটু করে জমানো আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের চোখের সামনে।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, বাসিন্দারা পোড়া টিন, আসবাবপত্রের অবশিষ্টাংশ সরানোর চেষ্টা করছেন। বস্তির অধিকাংশ ঘরই দোতলাবিশিষ্ট। একেকটি ঘরে রয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষও। চারদিকে ইটের দেওয়াল আর ওপরে টিন। ভেতরের কক্ষগুলো ছিল কাঠ দিয়ে সাজানো। ছিল নানারকমের আসবাবপত্র। সবকিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ৫ হাজার টাকা করে নগদ সহযোগিতা এবং চাল-ডালসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের তালিকায় ৮৫০ পরিবারের তথ্য উঠে এসেছে।
বস্তির বাসিন্দা নাসিমা বেগম নামে এক নারী জানান, আগুন লাগছে, গ্যাসের লাইন অফ করো- এমন চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। বাটন মোবাইলটা হাতে নিয়ে বের হয়ে এসেছি। এছাড়া আর কোনো জিনিসই বের করতে পারিনি।
বস্তির একটি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন সায়েরা বেগম। তিনি বুয়ার কাজ করেন। স্বামী দিনমজুর। সায়েরা বেগম বলেন, সকালে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে উঠি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনি আগুন লেগেছে। তিনি বলেন, বছরের পর বছর তিলে তিলে জমানো টিভি, ফ্রিজ সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটি জিনিসও বের করতে পারিনি ঘর থেকে।
বস্তির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তারা স্থানীয় স্কুলে এবং আত্মীয়স্বজনের বাসায় কাটিয়েছেন। সকাল থেকে খোলা আকাশের নিচে তারা অবস্থান করছিলেন। বাসিন্দাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তাদের নাম তালিকাভুক্ত না করার।
এদিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কিছু ত্রাণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্র্যাক থেকে যেসব ছাত্রের বই পুড়ে গেছে, তাদের বইখাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করার কথা ভাবা হচ্ছে। সোমবার ভোরে সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে একই দিন ভোরে ওয়ারীর সুইপার কলোনিতে লাগা আগুনে দ্বগ্ধ ৭ জনের চিকিৎসা চলছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের কারও অবস্থা এখনই শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। এদিকে ঘরবাড়ি পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪০টি পরিবারের লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন স্বজন এবং পরিচিতজনদের বাসায়।
এদিকে সোমবার রাতে নিউ এলিফ্যান্ট রোডে শেলটেক শায়েরা কম্পিউটার সিটির ৫ম তলায় আগুন লাগে। আগুনে তিনটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকান পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন