দেশের জাতীয় ঐতিহ্য ও জাতীয় সংস্কৃতি বিরোধী তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাজানো পাঠ্য পুস্তকের বিষয়ে এবার ইউটার্ন দিলেন ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি এবং বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদী ইসকনের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। যদিও মাত্র তিন দিন আগে দীপু মনি চাঁদপুরে এক সমাবেশে এসব পাঠ্যপুস্তকের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন। অথচ সাফাই গাওয়ার ৩দিন পর এখন ভুল স্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার (২৪শে জানুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ইউটার্নের বিষয়টি প্রকাশ করেন ফ্যাসিবাদী সরকারের আওয়ামী শিক্ষামন্ত্রী।
মঙ্গলবার (২৪ই জানুয়ারি) আওয়ামী শিক্ষামন্ত্রী তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে নিজের পিঠ বাঁচাতে তথাকথিত একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেছেন।
সপ্তম শ্রেনীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে জাতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য বাদ দিয়ে ভারতীয় ঐতিহ্য দিয়ে সাজানোর বিষয়টি নিয়ে আমার দেশ একটি শীর্ষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এরপরই এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় সামাল দিতে শেখ হাসিনার সরকার পাঠ্য পুস্তুকে হিন্দুত্ববাদ প্রচার থেকে ইউটার্ন দিয়েছে।
দীপু মনি পাঠ্যবইয়ে দেশের মানুষের ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য বিরোধী অধ্যায়, ছবির বিষয়টি অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই প্রণয়নে কিছু ছবি ও পাঠ বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল আগেই। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটি মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছে। আমাদের নির্দেশনার পরও ছাপানোর পর দেখা যাচ্ছে বইয়ে সেগুলো রয়ে গেছে।
স্কুলের শিশু-কিশোরদের পাঠ্য বইয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শিক্ষা দিতে তৈরি করা পাঠ্য বইয়ের বিষয়ে এখন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বললেন দীপু মনি। কঠোর সমালোচনার মুখে মূলত নিজেদের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর জন্যই এখন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলে পার পেতে চাচ্ছেন হিন্দুত্ববাদের তাবেদার শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী।
দীপু মনি বলেছেন, বইয়ের এসব ভুল ইচ্ছাকৃত নাকি, ভুলবশত যুক্ত করা হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
এ কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করা হবে। তারা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। এতে কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী মোদী ও তার সরকারকে খুশি করতে চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে হিন্দুত্ববাদের ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, ইসলামবিদ্বেষী কনটেন্ট এবং এই উপমহাদেশে ইসলামের ইতিহাস গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
মাত্র দুইদিন আগে দীপু মনি সাফাই গেয়ে বলেছিলেন পাঠ্য পুস্তক নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার করা হচ্ছে। অথচ, দুইদিন পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এক বছরে এ পাঠ্যবই একেবারে সঠিক করে ফেলা এ কথা দুরূহ। এ বছর আমরা বইগুলো পরীক্ষামূলক হিসেবে দিয়েছি। সারা বছর আমরা সবার কাছ থেকে মতামত নেবো। সেই পরামর্শ অনুযায়ী পরিমার্জন পরিশীলনের সুযোগ থাকবে। বইগুলো প্রণয়নের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বইয়ের কোথাও যেন ধর্ম, বর্ণ, পেশা, লিঙ্গ বিদ্বেষ-বৈষম্য না থাকে তার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ভুলটা হয়তো বড়, যা আরও আগে চিহিত হওয়া দরকার ছিল, সংশোধন হওয়া দরকার ছিল। আগে না হলেও এটি নিয়ে এখন যে আলোচনা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সে সংশোধন হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকাল সামাজিক মাধ্যম অনেক সরব। সেই মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, রাজনীতির মাঠ সব জায়গা থেকেই আমরা বইয়ের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা শুনছি। আমরা আগেও বলেছি বইগুলো নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা প্রণয়ন করেছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত পাচ্ছি। আমরা শিক্ষার দায়িত্বে যারা আছি এবং এ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছি, মানুষের মধ্যে বইগুলো নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে সেটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষার তিন বিভাগের তিন সচিব, জাতীয় শিক্ষা কর্ম ও পাঠ্যপুস্তক বইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরাদুল ইসলাম প্রমুখ
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হচ্ছেন দীপু মনি। ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে যখন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকেই বাংলাদেশে ভারতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য বিস্তারের প্রথম প্রক্রিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় শিক্ষামন্ত্রী হবার হবার পর শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য দেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার মধ্যেও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংযোজন করে ইসলামী ও মাদরাসা শিক্ষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নষ্টের গভীর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।
বিজ্ঞানমনস্ক বানানোর নামে ৯ম-১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে বিতর্কিত ‘ডারউইন তত্ত্ব’ বহাল করা হয়েছে।
তার সময়কালে দেশের প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহ। তার বদলে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন গল্প ও কবিতা। দেশের জনসাধারণের মধ্যে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত নাগরিক এবং সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমের সিলেবাস থেকে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম চেতনা-বোধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের লেখাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে হিন্দুত্ববাদ বিষয়ক লেখাসমূহ প্রবেশ করানো নিয়ে তৈরি হয়েছে অভিভাবক মহলে চরম উদ্বেগ ও বিতর্ক।
এরমধ্যে চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কৌশলে ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা এবং সুচতুর ভাবে পীর মাশায়েখদের চরিত্র হননের চেষ্টায় এই উদ্বেগ আরো গভীর হয়েছে।
ইসলাম ও মুসলিম রীতিনীতি, ঐতিহ্য, ঈমান ও আমল নিয়ে আজগুবি মিথ্যা গল্পের অজুহাতে ইসলাম ও পীর মাশায়েখদের খারাপ ও জঘন্য হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অবমাননা করা বিভিন্ন ইসলামী পরিভাষাসহ মুসলিম সংস্কৃতির অংশ দাঁড়ি ও টুপিকে। শুধু তাই নয়, অতীতে চট্টগ্রাম বোর্ডের প্রশ্নপত্রে রীতিমতো সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে এমনভাবে প্রশ্ন সাজানো হয়েছে যে, যাতে মুসলমানকে সন্ত্রাসী এবং হিন্দুদের মহানুভব হিসেবে চিত্রিত হয়।
দেশের ওলামা-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ, অভিভাবক-মহল ও শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। তাদের মতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িকতা ও নাস্তিকতাবাদ উস্কে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি মহল এই কাজ করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন