রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ যখন লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত, ঠিক তখন ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নির্ধারিত আসনগুলোর বেশিরভাগই ছিলো ফাঁকা।
ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার গত চৌদ্দ বছরেরও বেশি দুঃশাসনের ফলে মানুষ যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তা অনুমান করতে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগের আয়োজিত সমাবেশ গুলোতে ফাঁকা আসন দেখেই সেটা অনুমান করা যায়। যেমন ময়মনসিংহে ৩ ডিসেম্বরের সমাবেশে অধিকাংশ আসনই ফাঁকা রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের এরকম আরো অনেক সভা সমাবেশে আসন ফাঁকা থাকার খবর ইতোমধ্যে বের হয়েছে।
অথচ অহেতুক কথাবার্তায় পটু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হচ্ছে, জনসমাগম নেই, মাঠ ফাঁকা। আর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে জনতার ঢল। তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
শনিবার আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মিথ্যাচার করলেও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বেহাল দশার চিত্র।
রাজশাহীতে জনসমুদ্র:
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে বিভাগের অন্যান্য জেলা থেকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির লাখ-লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা ও পুলিশের বাধার কারণে তিনদিন আগে থেকেই সম্মেলনস্থলে আসেন হাজার হাজার মানুষ। শীতের মধ্যে তারা ছিলেন তাঁবুতে। রান্না করে নিজেরাই নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। গত তিনদিন ধরে বিএনপির স্লোগানে মুখরিত ছিলো শাহ মখদুম ঈদগাহ ময়দানসহ সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠের আশপাশের এলাকা।
শনিবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ চলাকালে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো নগরীর মাদ্রাসার মাঠ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষের চাপ পড়েছে সমাবেশস্থলের চারপাশেও। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিকেল অবধি আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। মাঠে জায়গা না পেয়ে ঈদগাহ মাঠে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেন।
কয়েকদিন আগে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে অবস্থান নিলেও শনিবার সকাল থেকে দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। শহরের প্রতিটি অলিগলিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে মানুষের উপস্থিতিও বেড়ে যায়।
শনিবার ভোর ৬টায় ঐতিহাসিক এই ময়দানের প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেয় পুলিশ। এর আগ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সমাবেশস্থলে ঢুকতে দেওয়া দেয়নি। এ ছাড়া নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আজ দুপুর ২টার আগে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা যাবে না- এমন কথাও বলা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে বিএনপির যে বিভাগীয় গণসমাবেশ হচ্ছে তার ধারাবাহিকতায় শনিবার এই মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহীর সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টাতেই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
ময়মনসিংহে কাদের, সমাবেশস্থল ফাঁকা:
রাজশাহীতে জনতার সমুদ্রে বিএনপির মহাসমাবেশ হলেও ঠিক উল্টো চিত্র ছিলো ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে।
ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের মঞ্চ ওঠার পরেও নেতা-কর্মীদের সারিতে অর্ধেকের মতো আসন ফাঁকা দেখা গেছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলীয় কোন্দলে নেতাদের ওপর থেকে কর্মীদের আস্থা হারানো আর সম্মেলনের প্রচারণার অভাবে নেতা-কর্মীরা উৎসাহ নিয়ে আসছেন না।
যদিও শনিবার (৩রা ডিসেম্বর) সম্মেলন শুরুর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সম্মেলনে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।
ফাঁকা আসনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, সম্মেলনটা সকালে হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা তেমন আসতে পারেননি। শীতের সকাল না হলে মানুষের উপস্থিতি আরও দ্বিগুণ হতো।
শনিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মঞ্চে ওঠেন ওবায়দুল কাদের। সে সময় বিচ্ছিন্নভাবে নেতা-কর্মীদের সার্কিট হাউজ মাঠের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মজিবুর রহমান সোহাগ বলেন, সম্মেলনের সময়টা সকালে হওয়ায় লোকজন আসতে সমস্যা হচ্ছে। লোকজনের আগেই আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের চলে আসছে। তবে লোকজন হবে আশানুরূপ।
ফুলপুর উপজেলার রুপসী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মতিউর রহমান উজ্জল বলেন, লোকজন আস্তে-ধীরে আসছে।
সাড়ে ১২টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন ওবায়দুল কাদের। তার পরেও বেশির ভাগ আসন খালি দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দলের মধ্যে ভেতরে ভেতরে অনেক কোন্দল রয়েছে। তাই কর্মীরা নেতাদের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। সাধারণ কর্মীদের বিগত সময়ে তেমন মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই দলের আজ এই অবস্থা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন