সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনায় উঠে এসেছেন সোহেল তাজ। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এবং ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের হাল ধরা নেতা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের সন্তান তিনি। বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কাজে বেশি সময় কাটে তার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আকস্মিক পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে এক রকম দূরে সরে যান। তবে সোহেল তাজের বোন মাহজাবিন আহমদ মিমির এক ফেসবুক পোস্টের পর তার রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। দলে ফেরাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে মুঠোফোনে আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা হয় তানজিম আহমদ সোহেল তাজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহম্মদ আকবর
শুরুতেই সোহেল তাজ বলেন, ‘দলীয় পদে আসার বিষয়ে তো আমি লিখিনি। লিখেছেন আমার বোন। তিনি কোথা থেকে জেনেছেন তাকেই জিজ্ঞেস করুন। তাকে তো ফোনে পাওয়া যায়। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল করতে তো হাইকমান্ডের
ক্লিয়ারেন্সের বিষয় নেই। দল তো আমাদের সবার। এখানে অবদান রাখতে হলে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে’।
দলে কীভাবে অবদান রাখতে চান? গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে থেকে? এ দুই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই অবদান রাখা যায়। আমি সক্রিয় রাজনীতির বাইরে আছি। যদিও আমি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। আমার পজিশন যত ক্ষুদ্রই হোক অবদান তো কিছু রাখা যাবে। তাই আমি কোনো পদ-পদবির কথা বলছি না। আমি বলেছি, দলের যদি প্রয়োজন হয় আমি দলের প্রয়োজনে ছিলাম, আছি, থাকব’।
কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যজনিত একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট (নেতিবাচক প্রভাব) আছে। স্বাস্থ্য খাতে ধস নেমেছে। সেখানে কাজ করার সুযোগ আছে। সেখানে কাজ করে যাচ্ছি।’ আপনার এ বক্তব্যটা কী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার...কথা শেষ না করতেই তিনি হাসলেন। বললেন, ‘না, না, এমন কোনো বিষয় না। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা বলছি না। বলেছি এ দেশের অনেক মানুষ স্বাস্থ্যের নানা জটিলতায় আছে। আমি এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আমি মনে করি এ বিষয়ে প্রচুর জনসচেতনতা জরুরি।’
সাবেক এ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথাটা খুব স্পষ্ট। আমার বোনের পোস্টের যে প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলাম- আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, থাকব। এটা আমার বাবা-মায়ের দল। ১৯৭১ সালে ...বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আমার বাবা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭৫ পরবর্তীতে ...আমার মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন সেই দুঃসময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুর্নগঠিত করেছিলেন। সুতরাং সব সময় তো দেশের জন্য, দলের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের পরিবারের অবদান আছে। আমিও এ পরিবারের সন্তান। আমারও দায়িত্ব আছে। অতীতে আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি, করে যাচ্ছি। এখনো যদি আমাকে দলের প্রয়োজন হয়, দেশের প্রয়োজন হয়, ডাক দিলেই আমি সাড়া দেব’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে সোহেল তাজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবকাঠামোগত যে সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে তা তো আমরা দেখতেই পারছি। পদ্মা সেতু এর জ্বলন্ত উদাহরণ। ঢাকা মেট্রোরেল প্রজেক্ট চলছে। বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট চলছে। তাই না? সুতরাং উন্নয়নের দিকে তো আর বলার জায়গা নেই। সার্বিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি এসব উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মানবসম্পদেরও উন্নয়ন জরুরি।’ তিনি বলেন, আমাদের সুনাগরিক তৈরি করতে হবে। দেখতে হবে আগামী, পঞ্চাশ বছর-একশ বছর পর বাংলাদেশ কোথায় যাবে। বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তখনই হবে আমরা যদি সেই কারিগরগুলো এখনই সৃষ্টি করতে পারি। এ কারিগর হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে একটা সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করতে হবে।
সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাদের দলকে নতুন প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করতে হবে। আর নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে হলে আওয়ামী লীগেরই দায়িত্ব দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। কারণ আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। এ গুরু দায়িত্ব আওয়ামী লীগের ওপরই বর্তায়। আমরা যদি এ বার্তাটা পৌঁছতে পারি তা হলে আগামী নির্বাচনে আমাদের আর ভোট চাওয়া লাগবে না। জনগণ এমনিতেই আমাদের ভোট দেবে। সে জন্য প্রয়োজন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে, স্লোগান েহওয়া উচিত অনিয়মের বিরুদ্ধে, স্লোগান হওয়া উচিত অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। আমি সেই কথাটাই বলেছি। সর্বদাই প্রস্তুত আছি দেশের জন্য ও দলের জন্য।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন