মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বদলি ও এমপিওভুক্তিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত কথিত সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে! এই সিন্ডিকেট এখনো প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
সম্প্রতি মাউশি অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার মিল্টনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকার ডিবি পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি মাউশি কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার ফাঁস করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষার ইডেন কলেজ কেন্দ্র সমন্বয় করার দায়িত্বে ছিলেন। মাউশি কার্যালয় থেকে প্রশ্ন নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তিনি প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাইফুলের কাছে পাঠিয়েছিলেন। গত ২৫ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তেজগাঁও ডিবির একটি দল মিল্টনকে গ্রেফতার করে।
মাউশি সূত্র জানায়, মিল্টনসহ একটি চক্র মাউশিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বদলি ও এমপিওভুক্তি, পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবেদন দেওয়াসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। মিল্টনের সহকারী হিসেবে মাউশি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উচ্চমান সহকারী মো. বেল্লাল হোসেনেরও নাম আসে। ঘটনার পর বিল্লালকে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে হিসাবরক্ষক পদে বদলি করা হয়। তবে বিল্লালকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। বিল্ললা এবং আরেক উচ্চমান সহকারী নাজমুল হোসেনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ আছে।
গত ১৩ মে মাউশির ৫১৩টি পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে গোয়েন্দা দল প্রশ্নফাঁসের খবর পায়। ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে প্রথমে প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ চাকরি প্রার্থী সুমন জোয়ার্দার নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার প্রবেশ পত্রের উল্টো পিঠে ৭০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। সুমন ও সাইফুলকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা পরীক্ষার আগেই প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে।
ইতিমধ্যে প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারিতে মাউশির নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক আবদুল খালেক বাদী হয়ে লালবাগ থানায় মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয় যে, মাউশির অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পরীক্ষা শুরু হয় বিকেল ৩টায়।
পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জোয়ার্দার জানান, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে তার মোবাইলে পটুয়াখালীর সাইফুল ও টাঙ্গাইলের খোকন উত্তরপত্র পাঠান। এ তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ মে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক রাশেদুল, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেফতার করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন