[ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় তারকা শাকিব খান জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুর রব ছিলেন একজন সরকারি দপ্তরের কর্মচারী ও মাতা নূরজাহান একজন গৃহিণী। ১৯৯৯ সালে ‘অনন্ত ভালোবাসা ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালি জগতে তার অভিষেক ঘটে। যদিও আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায় ২০০০ সালে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন আরেক নবাগত কারিশমা শেখ। ২৮মে এই তারকার অভিনয় জীবনের দুই যুগ পূর্ণ হলো।]
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। প্রতি বছরই তার একাধিক সিনেমা মুক্তি পায়। ভক্তরা বলে থাকেন শাকিব খান একাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির হাল ধরে আছেন। যদিও প্রতি বছর ক্রমেই কমে যাচ্ছে সিনেমা হলের সংখ্যা। এমনকি ঢাকার অভিজাত সিনেমাহলগুলোও বন্ধের মুখে। ফলে শাকিবের হাল ধরে রাখার বিষয়টি পুরোটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
একটা সময় বছরে শাকিব খানের ১০/১২টি সিনেমা মুক্তি পেত। ইদানীং সিনেমা মুক্তির হার কমেছে। বছরে তিন চারটায় নেমে এসেছে। যদিও শাকিব খান জানিয়েছেন, যেন তেন মানের ছবি না করে ভালো মানের সিনেমার দিকে নজর দিয়েছেন তিনি। যাই হোক না কেন, শাকিব খানের হাতের সিনেমার সংখ্যা যেমন কমছে তেমনি শাকিব খানের ‘ওয়ান টাইম’ প্রযোজকের সংখ্যাও বাড়ছে। কারণ ইদানীং দেখা যাচ্ছে শাকিব খানকে নিয়ে একবার বা দুইবার লগ্নি করলেও তৃতীয়বারের মতো লগ্নি করতে ভয় পাচ্ছেন প্রযোজকেরা। ফলে শাকিব খানের সুনাম শুনে প্রযোজকেরা আসলেও এক দুইবারের বেশি কেউ রিস্ক নিচ্ছেন না।
বেশ কয়েক বছর আগে প্রযোজক পারভেজ চৌধুরী শাকিব খানকে নিয়ে মেন্টাল সিনেমা করলেও এর পর তাকে নিয়ে আর কোনো সিনেমা বানাননি। কারণ লোকসান গুনতে হয়েছিল তাকে।
২০১৬ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়া শাকিব খানকে নিয়ে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু দুটি সিনেমা বানানোর পর শাকিব খানের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আর কোনো সিনেমা বানায়নি। ভারতের এসকে মুভিজের পর শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসও শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছে। কিন্তু শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসও শাকিব খানের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কারণ শাকিব খানের সিনেমা কলকাতায় চলে না। অপরদিকে বাংলাদেশে যৌথ প্রযোজনার কঠিন নিয়ম মেনে সিনেমা বানানো সহজ নয়। ফলে শাকিব খানের ওপর থেকে ভরসা হারান কলকাতার প্রযোজকেরা।
কলকাতার প্রযোজকদের কাজ করার সময় শাকিব খান দেশীয় পরিচালক প্রযোজকদের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেও সমালোচিত হয়েছেন। এরপর কলকাতা থেকে বিমুখ হয়ে আবার তার ভাষায় ‘মূর্খ, দুর্বল’ পরিচালক প্রযোজকদের কাছেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন শাকিব।
কলকাতা বিমুখ শাকিব খানকে নিয়ে কাজ করা শুরু করেন শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খান। কিন্তু শাকিব-সেলিমের সেই সম্পর্কেও এখন ফাটল ধরেছে। এই জুটির সর্বশেষ সিনেমা ‘শাহেনশাহ’ মুক্তি পায় ২০২০ সালে। কিন্তু ছবিটির প্রচারণায় ছিলেন না শাকিব। শাহেনশাহ সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়।
ওদিকে নতুন প্রযোজক সাকিব সনেট শাকিব খানকে নিয়ে ‘নোলক’ ছবি নির্মাণ করেন। এই ছবির মাধ্যমে শাকিব খান প্রথমবারের মতো ৬০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন। কিন্তু বেশি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েও সিনেমার প্রচারণায় অংশ নেননি শাকিব খান। শুধু তাই নয়, সিনেমাটিও ব্যবসায়িকভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে সনেট ভবিষ্যতে সিনেমা বানালেও শাকিব খানের সঙ্গে আর কাজ করবেন না বলে জানা গেছে।
জাজ, এসকে মুভিজ, শ্রী ভেঙ্কটেশ, পারভেজ চৌধুরী, সাকিব সনেট, সেলিম খান- প্রত্যেক প্রযোজকই নির্ভর করেছিলেন শাকিব খানের ওপর। কিন্তু হাতে গোনা দু-একটি ছবি ব্যতিত বেশির ভাগ ছবিতেই ওই প্রযোজকেরা লোকসান গুনেন। শাকিব খানের ওপর ভরসা করেও শেষ রেহাই হয়নি তাদের। ফলে ওই প্রযোজকেরা মুখ ফিরিয়ে নেন শাকিব খানের ওপর থেকে।
সর্বশেষ শাকিব খান ভর করেন প্রযোজক আরমানের ওপর। ‘পাসওয়ার্ড’, ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমা দুটি নির্মাণ করেন ওই প্রযোজক। ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবসা করলেও মুখ থুবড়ে পড়ে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’। এদিকে তৃতীয় সিনেমা ‘আগুন’ এর কাজ চলছে। কিন্তু নতুন সিনেমার কাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরমান। সিনেমার কাজটি এখনো অসমাপ্তই রয়েছে।
এদিকে ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ‘গলুই’ ও ‘ব্রিদাহী’। এর মধ্যে গলুই কিছুটা সাড়া ফেলতে পারলেও বিদ্রোহী দেখে হতাশ হয়েছেন দর্শকরা। অপরদিকে সিয়াম অভিনীত শান ছাড়িয়ে যায় ঈদের সব ছবিকেই। ফলে এবারের ঈদে শাকিবকে ছাড়িয়ে এক নম্বরে রয়েছেন সিয়াম আহমেদ। শাকিব খানের মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ ও ‘অন্তরাত্মা’ কতটুকু ব্যবসা করবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ফলে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সিনেমায় নিজের অবস্থান ধরে রাখলেও সম্প্রতি শাকিব খানের সাম্রাজ্যে ফাটল ধরা শুরু হয়েছে। তার জন্য শাকিব খান একা নন, পুরো সিস্টেমই দায়ী। সিনেমার এই সূচনীয় অবস্থায় শাকিব নিজের অস্তিত্ব আদৌ ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দিবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন