ভোজ্যতেলের মতোই এবার ভোক্তার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আটা ও ময়দা। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে খাদ্যপণ্য দুটির দাম। গত তিন দিনে খোলা আটার কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা আর খোলা ময়দার কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করে দাম ওঠানামা করছে পাইকারি বাজারে। ডিলাররা সকালে এক দাম তো, বিকেলে আরেক দাম বলছেন। তবে ভোক্তা-সংশ্নিষ্টরা বলেন, বিশ্ববাজারে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে বাংলাদেশে সঙ্গে সঙ্গেই দাম বেড়ে যায়। এটা একেবারে ব্যবসায়ীদের অসততা। ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দু'দিন আগে। এখন বাজারে যেসব আটা ও ময়দা বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো বহু আগে আমদানি করা। তাহলে সেগুলোর দাম বাড়বে কেন। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, আটা-ময়দার ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে।
খুচরা বাজারে গত শুক্রবার প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ধাপে ধাপে দাম বেড়ে গতকাল সোমবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আগে খোলা ময়দার দাম ছিল ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরের পরপরই খোলা আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎগতিতে নতুন দরের আটা ও ময়দার প্যাকেটও এরই মধ্যে বাজারে ছেড়েছে কোম্পানিগুলো। এত দিন স্বাদ, ফ্রেশ, তীরসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দুই কেজি আটার প্যাকেটের দাম ছিল ৯০ থেকে ৯৪ টাকা। তবে গতকাল এসব ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা লেখা দেখা গেছে। প্যাকেটজাত দুই কেজির ময়দার দাম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে আগামী সপ্তাহে দাম আরও বাড়িয়ে নতুন প্যাকেট বাজারে আসবে বলে খুচরার ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
মাস দেড়েক আগেও দুই কেজি আটার প্যাকেট পাওয়া যেত ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। অন্যদিকে দুই কেজি ময়দার প্যাকেটের দাম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়বে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা। আর খোলা ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগে দুই কেজি ময়দার প্যাকেট কেনা যেত ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। মূলত গত শুক্রবারে ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দেশের বাজারে আটা-ময়দার বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানিকারক ও ডিলাররা প্রতিদিন দাম বৃদ্ধির নতুন তথ্য দিচ্ছেন পাইকারদের। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার জাহাঙ্গীর হোসেন সমকালকে বলেন, গত তিন-চার দিনে পাইকারি পর্যায়ে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ময়দায় দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়লেও ভাউচারে আগের দাম লিখে দিচ্ছেন ডিলাররা। এতে তাঁদের বেকায়দায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও এখন পর্যন্ত আমদানিকারক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন মিলারদের প্রতিনিধিরা। মেঘনা গ্রুপের মার্কেটিং টিম ম্যানেজার তারিন মাহমুদ বলেন, আটা ও ময়দার দাম বাড়ানোর তথ্য এখনও কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তাই আগের দরেই ডিলারদের বিক্রি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই সরকারের খাদ্যপণ্যের মজুত বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। সরকার তাতে মনোযোগ বা গুরুত্ব দেয়নি। এখন এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববাজারের দাম বৃদ্ধি বা কোনো দেশের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। সরকারও তাদের ভাষায় কথা বলছে।
তিনি বলেন, বস্তুত বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কত বাড়ল, দাম বাড়ার আগে কিংবা কোনো দেশ রপ্তানি বন্ধ করার আগে কী পরিমাণ পণ্যের এলসি খোলা হয়েছে, কত মজুত আছে- এসব বিষয়ে সরকারের সঠিক কোনো হিসাব নেই। এই সুযোগটা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ভোজ্যতেলে যেভাবে একের পর এক অযৌক্তিক দাম বাড়ানো হলো, ঠিক একই কাণ্ড ঘটছে আটা-ময়দার ক্ষেত্রেও।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন