ডিও লেটারে স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে রংপুরে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাকে মারধর ও সদর এমপি সাদের স্ত্রী মাহিমাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রংপুরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সদর এমপি রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মুখোমুখি অবস্থান করছে। করোনার বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে এমপি সাদ এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ওদিকে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মেয়র মোস্তফা বিক্ষোভ করেছেন। মারমুখী নেতাকর্মীদের উত্তেজনায় বেগতিক অবস্থা দেখে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রংপুর তাজহাট থানার ওসি শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, দু’পক্ষের অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বুধবার দুুপুরে পল্লী নিবাস বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন রংপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় পার্টির নেতা টিপু সুলতান তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানিসহ তার উপর হামলা চালিয়েছে। যার কারণে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। সাদ এরশাদ আরও বলেন, অন্যায়ভাবে ডিও লেটারে স্বাক্ষর না করে দেয়ার কারণে আমি ও আমার স্ত্রী হামলার শিকার হয়েছি। টিপু সুলতান আমাকে ও আমার স্ত্রীকে গালিগালাজ করে আমার স্ত্রী শ্লীলতাহানি করেছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে ভাংচুর করতে এসেছিলো। আমি এখন জীবন ঝুঁকিতে রয়েছি। আমার উপর হামলার ঘটনা আমার মা রওশন এরশাদকে জানিয়েছি। সাদ এরশাদের স্ত্রী মাহিমা এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির নেতা টিপু সুলতান আমাকে ও আমার মাকে তুলে গালিগালাজ করেছে। আমাকে মারতে তেড়ে এসে আমার কাপড় ছিড়ে ফেলেছে। এখানে জাতীয় পার্টির সভাপতি সবাই বসে ছিলো, কেউ টিপু সুলতানের কথার প্রতিবাদ করেনি। আমি এরশাদ পরিবারের একজন সদস্য, আমি একজন নারী, হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদের উপর যে হামলাটি হলো সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ওদিকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা টিপু সুলতানকে সদর এমপি সাদ এরশাদের সন্ত্রাসী বাহিনী মারধরসহ পুলিশে দেয়ার অভিযোগে মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বুধবার সকালে সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে জরুরী সভা করেছে মহানগর জাতীয় পার্টি। মহানগর জাতীয় পার্টি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে নগরীতে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় টিপু সুলতানকে নিঃশর্ত মুক্তি, সুষ্ঠুতদন্তসহ দোষীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় জাপা নেতারা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনলে বিক্ষোভসহ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেয়া হয়। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, অপরাধ কেউ করে অপরাধকে ধামা-চাপা দেয়ার জন্য কিছু ঘটনা তৈরী করে। টিপু সুলতান রংপুরীর বয়স ৬২ বছর। তার চুল-দাড়ি সব পাকা। তিনি কিভাবে এমপি’র স্ত্রীর শ্লীলতাহানী করলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন সমস্যা হলে আমরা বসে সেটি মিমাংসা করতাম। কিন্তু এমপি সাহেব ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হেনস্তা করবে তা মেনে নেয়া যায় না। দলীয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর পল্লী নিবাস বাসভবনে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে ২৭নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি টিপু সুলতান রংপুরী তার ডিও লেটারে সাদ এরশাদ স্বাক্ষর না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রী মাহিমা এরশাদের সাথে টিপু সুলতানের কথা কাটাকাটি হয়। এরই এক পর্যায়ে সাদ এরশাদের বাড়িতে থাকা লোকজনের সাথে টিপু সুলতানা ও জাতীয় পার্টির অন্যান্য নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত জাপা নেতাকর্মীরা সাদ এরশাদের বাড়ির চেয়ার ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও টিপু সুলতানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মহানগর জাতীয় পার্টি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা রাতেই পল্লী নিবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন