মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অন্য রোগীরা চিকিৎসা নিতে গিয়ে শিকার হচ্ছেন নানা হয়রানির। জ্বর, ঠান্ডা, ডায়রিয়া কিংবা হাঁপানি থাকলেই রোগীকে করোনা সন্দেহে চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। এমনকি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পড়া অবস্থায়ও রোগীর সমনে আসছে না কেউ।
রাজধানী বাসাবোর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আলমাস উদ্দিন। কয়েকদিন যাবৎ বিষণ জ্বর সঙ্গে ডায়রিয়া। এরই মধ্যে জড়িয়ে জেতে থাকে তার কথা। আগেও তার একবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষণ হওয়ায় ওই চিকিৎসকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন পরিবার। পাঠানো হয় মোবাইল ফোনে ছবি। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক জানান আবারও মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের লক্ষণ।
পরদিন সকাল ৮টা থেকে রাত বারোটা। এই ষোলো ঘণ্টা এম্বুলেন্সে করে পিতাকে নিয়ে ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে ছুটোছুটি করেন সন্তানরা। অতঃপর ১৬ ঘণ্টা রাজধানীর ৫ হাসপাতালে ছুটোছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন এ মুক্তিযোদ্ধা।
রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে মুমূর্ষু বাবাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন, সব হাসপাতাল থেকে ফেরত দিয়েছে। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মৃত মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে লুনা আল মারজান।
আল মারজান বলেন, প্রথমে বাবাকে নিয়ে যাই রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে। প্রথমে আমরা হাসপাতালের কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি আপনারা কি রোগীকে রাখবেন। তখন তারা বলেন রাখা যাবে। এক্সরে পরীক্ষা করানোর পরে বলতাছে রোগী কিছুটা সেডো। তার নিউমোনিয়া থাকতে পারে আমরা তাকে রাখবো না। পিপিই পড়া ডাক্তাররাও তাকে সমনে এসে দেখেননি।
এরপর আলমাছ উদ্দিনকে নিয়ে সাহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। এখানে নিয়ে আসার পর কর্তৃপক্ষ বলেছে রোগীর করোনা থাকলেও তাকে ভর্তি করানো যাবে। পরবর্তিকে সেখানকার মেডিকেল অফিসাররা বলতেছে তার শরীরে করোনা হতে পারে। তাই তারা রাখতে পারবেন না।
অতঃপর এই হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয় আইসোলেসন মেডিকেল সুবিধা থাকা পপুলার হাসপাতালে। প্রথমে হাসপাতাল রোগীকে ভর্তি নিয়ে আলাদা একটা কেবিনে রাখে। কিছুক্ষণ পর সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলতেছে তাদের যে দুজন স্পেশাল ডাক্তার রয়েছে তারা বাসা থেকে আসতে পারছেন না।
অতপর কি আর করার। এবার পপুলার হাসপাত থেকে নেওয়া হয়েছে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন তার করোনা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে আমাদের এখানে দুজন করোনা রোগী আছেন। তাদের সঙ্গে যদি রাখতে চান তাহলে রাখতে পারেন। তাদের সঙ্গে থেকে যদি করোনা হয়ে যায় সে রিক্স আমাদের না।
আলমাছ উদ্দিনকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে নিয়ে ছোটাছুটির পর অবশেষে এগিয়ে আসেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা। এবার তাকে ভর্তি করার রাজধানী মুগদা হাসপাতালে। হাসপাতালে অনেক চাপাচাপি করে হাসপাতালের মুক্তিযোদ্ধা ওয়ার্ডে রাখা হয়। এখানে আইসিউ ইউনিটের থাকা ডাক্তার আমার বাবাকে একটু কাছে থেকে দেখেছেন। তবে সিটি স্কিন ও এমআরআই এর ইকুপমেন্ট এখানে নেই। তার কারণে পূনরায় অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে যাই। অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই মুক্তিযোদ্ধা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন