রাস্তাঘাটে কোনো যানবাহন নেই। ফুটপাতে নেই কোনো পথচারীর হাঁটার শব্দ। দোকানপাটও সব বন্ধ। একেবারে পিনপতন নীরবতার শহরে পরিণত ইতালির কডোঙ্গো।
এ যেন আরেক উহান। বলতে গেলে উহানের মতো ‘ভুতুড়ে শহরে’ পরিণত হয়েছে ইতালির কডোঙ্গো।
উত্তর ইতালির লোদিপ্রদেশের ছোট্ট শহর কডোঙ্গো। সম্প্রতি শহরটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত দুই রোগীর মৃত্যু হয় সেখানে। এ ছাড়া ৫০ জনের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস আতঙ্কে নিশ্চুপ হয়ে গেছে শহরটি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যাচ্ছে না। বের হয়েও লাভ নেই কোনো। কারণ করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে শহরের স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, শপিংমলের অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাওলা নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘কডোঙ্গো এখন একটা ভুতুড়ে শহর। করোনাভাইরাস আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি করেছে। মানুষজন তাদের ঘরে ঘরে বন্দি, কোনো মানুষ রাস্তায় নেই। এমনটি বেশি দিন চললে করোনায় নয়, না খেয়েই মরতে হবে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘স্টেশন বন্ধ রয়েছে। কেউ টিকিট বিক্রি করছে না। আর আমার মতো কোনো যাত্রীও ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে নেই। হেঁটেই বাড়ি যাচ্ছি।’
শহরের ভেন্ডিং মেশিন থেকে হালকা খাবার ও পানীয় কেনার জন্য ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন এরিকা নামের এক নারী।
এএফপিকে এরিকা বলেন, ‘৫০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত শুনে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সবাই সাবধানে থাকছি। ঘরে কোনো খাবার নেই। অনন্যোপায় হয়ে বের হয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে, সুপারমার্কেটগুলো আদৌ খোলা থাকবে কিনা। ’
সবকিছু বন্ধ থাকলেও কডোঙ্গোতে ফার্মেসিগুলো খোলা রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে এএফপিকে রোসা কাভালিল নামের এক ফার্মেসি মালিক বলেন, ‘প্রচণ্ড ভয় নিয়ে কাজ করছি আমরা। সরকারের নির্দেশ না থাকলে ফার্মেসি বন্ধই রাখতাম। আমাদের এখন ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মাস্ক। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাকটেরিয়া রোধক, অ্যালকোহল এবং ব্লিচিং পাউডার কিনে মজুদ করে রাখছেন।’
উল্লেখ্য, লোম্বার্ডি অঞ্চলের শহর কডোঙ্গোকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিস্তারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দাবি করছেন ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
গত শুক্রবার ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তাদের নিজেদের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। শনিবার মারা যান আরও একজন।
এর পর লোম্বার্ডিতে ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়।
এ ঘটনার পর পরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব শহরের জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্কুল, বার, চার্চ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি।
যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কেউ চীন সফর করেননি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেন, অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার সাবধানতা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন