জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ঠেকাতে আইনি প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খালেদার জামিন আবেদনের কপি হাতে পাওয়ার পরপরই প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা বলেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, '১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায় বেগম খালেদা জিয়ার একটি আবেদন পেয়েছি। তার পক্ষে আবেদন করেছেন আইনজীবী সগির হোসেন লিয়ন। আবেদনের ২৪ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, ১২ ডিসেম্বরের পরে তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি চলতে পারেন না। এমনকি অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি খাবার এবং ওষুধও নিতে পারেন না। সুতরাং তার বিদেশে তথা যুক্তরাজ্যের মতো দেশে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট/থেরাপি (বায়োলজিক এজেন্ট) দরকার।'
তিনি আরও বলেন, 'আইনগতভাবে দুদক কাউকে ছাড় দেবে না। সে যেই হোক। অতীতেও দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। আমরা জামিন আবেদনটি পেয়ে পর্যালোচনা করেছি। আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি।'
এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় তার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়।
২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনও আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।
এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটি খারিজ হয়ে যায়।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন