এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই সিটিতেই মেয়রপদে যেমন নির্বিঘ্নে প্রার্থী দিতে পেরেছে, তার ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটেছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ব্যাপারে। দুই সিটিতে প্রতিটি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরই একজন বিরোধী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে শুধুমাত্র যে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তাই নয়। মেয়রদের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকা উত্তরে মোট ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণে মোট ৭৫টি ওয়ার্ডের ৭২টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে যে, সর্বমোট ১২০ জন এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটা আওয়ামী লীগের একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এর ফলে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ ওয়ার্ডগুলোতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের সম্ভাবনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আবার অন্যদিকে এর ফলে দুই মেয়রই নানারকম সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। বিভক্ত কর্মীদেরকে একসূত্রে গাঁথা তাদের জন্য একটি কঠিন এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সপ্তমদিনে দেখা গেছে যে, দুই সিটিতেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা জাঁকিয়ে প্রচার করছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের আল্টিমেটাম দিয়েছে, তাদের অবিলম্বে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে এসে যারা দলের প্রার্থী, তাদের জন্যই প্রচারণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই সমস্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থীরা এখনো নির্বাচনী প্রচারণায় নিজেদের সরব রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাড়ানোর নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের ঢাকার কয়েকজন এমপি। তাদের নিজস্ব পছন্দের ব্যক্তিরা যখন দলের মনোনয়ন পাননি, তখন তাদের মদদে উৎসাহী এই বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে দাড় করানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের এমপিরা এসমস্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে আর্থিক এবং সাংগঠনিক পৃষ্টপোষকতা দিচ্ছেন প্রত্যেক এমপি তার নিজ এলাকায় প্রভাব বলয় রাখার জন্য ওয়ার্ডগুলোকে দখলে রাখার প্রয়োজন। আর এই ওয়ার্ডে প্রত্যেকেরই নিজস্ব লোক রয়েছে যাদেরকে এমপিরা প্রমোট করতে চান এবং যাদেরকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দেখতে চান।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এমপিরা কখনো চান না যে ওয়ার্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এবার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে এমপিদের লবিং এবং তদবির কম ছিল না। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে বা নির্বাচনে যাদের জয়ের সম্ভাবনা কম তাদেরকে বাদ দিয়েই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ড পরিচ্ছন্ন এবং ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যখন এখন দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে তখন যে সমস্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোনয়নপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে মনোনয়ন থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু এমপিরা মনে করছেন, তাদের পছন্দের বা প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হলে এমপি হিসেবে তাদের রাজত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষুন্ন হবে। এ কারণেই তারা গোপনে ওই সমস্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছেন এবং তারা যেন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন সেই জন্য সব ধরণের কর্মকাণ্ড করছেন।
আওয়ামী লীগের বিশেষ টিমের অনুসন্ধানে ঢাকার এরকম অন্তত ছয়জন এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন এবং পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ এই ৬ এমপিকে চিহ্নিতে করেছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, এই বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরেও এসেছে। তারা যদি অবিলম্বে দলের নৌকার প্রতীকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণ করতে সহায়তা বন্ধ না করেন তাহলে ভবিষ্যতে তাদের মনোনয়ন বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন