জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আপিল গতকাল বৃহস্পতিবারও হয়নি। আদেশের পর চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামিন চেয়ে আমরা আইনি লড়াই চালিয়েছি। সাত বছরের সাজায় জামিন না দেওয়া নজিরবিহীন। এটি সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি কলঙ্কজনক ঘটনা হয়ে থাকবে।’
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলেও রাজপথে কাঙ্খিত কোনো কর্মসূচিতে দেখাতে পারিনি দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কোনো অঙ্গ সংগঠনকে রাজপথে ঝটিকা মিছিলের মধ্যদিয়ে কর্মসূচি করলেও মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, তাঁতীদল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দলের কোনো নেতাকর্মীকেই দেখা যায়নি।
এমনকি দলের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। এসব নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে নেতাকর্মী। কোনো কোনো নেতাকর্মী করণীয় ঠিক করতে এই মুহূর্তে নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকার কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ সামনের সিটি নির্বাচনসহ উপনির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার কথা বলেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকারের চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণে স্পষ্ট-খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে এখন রাজপথই আমাদের একমাত্র সমাধান।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘তৃণমূল অথবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলে সিনিয়র নেতারা রাজপথে নামলে তারাও নামবে। এটা কোনো কথা হতে পারে না। কারণ, আমরা যারা সিনিয়র নেতা, তাদের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্ব। রাজপথের আন্দোলন তো সব সময় তরুণরাই করে। অঙ্গ সংগঠনগুলো সাহস করে না নামলে আমরা কি করতে পারি। সিনিয়র নেতাদের ধারণা ছিল, অঙ্গ সংগঠনগুলো অন্তত খালেদা জিয়ার জন্য শক্ত বাধা অতিক্রম করে হলেও রাজপথে নামবে।’
যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই রাজধানীর নয়া পল্টনে দলটির কার্যালয়ের সামনে সারিবদ্ধভাবে পোশাকধারী বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি। এই অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘণ্টা দেড়ক অবস্থান করে তিনি কার্যালয় ত্যাগ করেন। এ সময় বিএনপির নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, সুলতানা আহমেদসহ মহিলা দলের ২০-২২ জন সদস্য ও অফিস কর্মীরা কার্যালয়ে ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১ টায় মহিলা দলের একদল নেতা-কর্মী ফটকের ভেতরে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মীরা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
অপরদিকে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতা ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেওয়ার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতিবাদে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল রাজপথে প্রতিক্রিয়া দেখালেও তা ছিল ঝটিকা মিছিল। অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন অথবা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকেই দেখা যায়নি।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল দেড়টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীর তিনটি স্থানে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুবদল। কমলাপুরে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এতে সংগঠনের মোরতাজুল করিম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়, রফিকুল আলম মজনু, গোলাম মাওলা শাহীনসহ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। পান্থপথে উত্তরের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
একই সময়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে মৌচাক-মালিবাগ রেলগেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এতে সংগঠনের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, এস এম জিলানী, নজরুল ইসলাম, গাজী রেজওয়ান হোসেন রিয়াজসহ কয়েক’শ নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিল থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ বলে জানান শফিউল বারী বাবু।
হাইকোর্টের মাজার গেটের মূল ফটকের বিপরীত পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ৮-১০ জন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দিলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে পল্টন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ পাটোয়ারী ও পল্টন থানা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেপ্তার করে বলে নেতাকর্মীরা জানান। দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে। এতে অংশ নেন ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, আল মেহেদী তালুকদার, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, হাফিজুর রহমান, আবু তাহের, তানজিল হাসান, খায়রুল আলম সুজন দুই শতাধিক নেতাকর্মী।
যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মসূচি
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আগামী ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ করবে। পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠন দুটি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন