আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রুহুল আমিন পেয়েছেন।
অনেকটা নিরবতা ও গোপনীয়তায় সোমবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে এক বছরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। অভিযুক্ত রুহুল আমিনের জামিন কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুলও জারি করা হয়েছে।
জামিনের বিষয়টি জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ)। এরপরই আলোচিত এই ধর্ষকের জামিন নিয়ে সুবর্ণচবাসীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বর্বরোচিত লোমহর্ষক এই ঘটনায় রুহুল আমিনের জামিন নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন তারা।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তারা বুঝতেই পারেনি জামিন পাচ্ছে রুহল আমিন। হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীর দাবি- আসামির আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছেন। জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে এনএক্স-১৭ নম্বর কোর্টের কথা। অর্থাৎ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য ফাইল হয়েছে। ফলে আবেদনটির অনুলিপি গেছে ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে। যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি, কার জামিন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আশিক-ই রাসুল অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে মামলার যে কপি সরবরাহ করেছেন, তাতে হাইকোর্টের ১৪ নম্বর বেঞ্চ উল্লেখ না করে ১৭ নম্বর করেছেন। অথচ মামলা শুনানি হয়েছে ১৪ নম্বর বেঞ্চে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের সময় বিরোধিতা করা যায়নি। এছাড়া এফআইআরে রুহুল আমিনের নাম নেই। এখানে তাকে হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নৌকায় ভোট না দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১০-১২ জন কর্মী রাত ১০টার দিকে সিরাজ মিয়া নামে এক সিএনজি চালকের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে।
গৃহবধূর স্বামী সিএনজিচালক বলেন, ৩০ ডিসেম্বর তার স্ত্রী কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সোহেল, আলাউদ্দিন, স্বপন, আনিস, আনোয়ার, আবু মাঝি, হেদু মাঝিসহ কয়েকজন তাকে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দিতে বলে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সবার সামনে তার স্ত্রী ধানের শীষে সিল দেয়।
ধর্ষিতার স্বামী আরও জানান, এরপর রাত ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের সেসব কর্মী তার বাড়ি এসে পুলিশ পরিচয়ে দরজা খুলতে বলে। সিরাজ মিয়া দরজা খুললে ঘরে ঢুকে তারা সিরাজ মিয়া ও তার চার সন্তানের হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর তার স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় এবং রাতভর গণধর্ষণ করে। পরের দিন সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে উলঙ্গ অবস্থায় ঘরের পাশে ফেলে যায়। এলাকাবাসী সকালে গৃহবধূকে উদ্ধার করে এবং অজ্ঞান অবস্থায় দুপুর সোয়া ১২টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন