কাশ্মিরের পুলওয়ামায় বিদ্রোহীদের হামলায় ভারতের ৪৪ জন সেনা নিহতের পর দেশটির মূলধারার মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ভুয়া খবর ও ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। মূলধারার নয়, এমন ভারতীয় মিডিয়া এবং ফ্যাক্টচেকাররা এসব ভুয়া খবর ও ছবি চিহ্নিত করছেন।
একটি ঘটনায় দেখা গেছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়াclick here, নিউজ এইটিন ইত্যাদিসহ বেশ কিছুclick here সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়- পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড 'গাজী আব্দুল রশীদ ওরফে কামরান' নামে একজন ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। খবরটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে শুধু ভারতীয় মিডিয়ায় দেখা গেলেও আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন খবর পাওয়া যায়নি।
ইন্ডিয়া টিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া সহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম 'গাজী আব্দুল রশীদ' হিসেবে পরিচয় দিয়ে যার ছবি প্রকাশ করে তিনি হলেন এমন এক জঙ্গিনেতা 'গাজী আব্দুল রশীদ' যিনি ২০০৭ সালে পাকিস্তানে এক হামলায় নিহত হয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তার ছবির স্ক্রিনশট দেখুন--
এখানে দেখুন উইকিপিডিয়াতে রশীদের মৃত্যু তারিখ--
পাকিস্তানী মিডিয়া click hereভারতীয় মিডিয়ার এই ভুলটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে--
পরে অবশ্য অনেকে ছবিটি সরিয়ে ফেলে। কিন্তু পাকিস্তানী প্রয়াত গাজী আব্দুল রশীদের ছবি বদলে এসব মিডিয়া নতুন আরেকটি ছবি প্রকাশ 'গাজী আব্দুল রশীদ' দাবি করে। মজার বিষয় হলো, সেই ছবিটিও ভুয়া!
ভারতেরই ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট অল্টনিউজclick here তাদের প্রতিবেদনে দেখিয়েছে (এবং পরে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেওclick here এটি প্রকাশিত হয়েছে), মার্কিন পপ তারকা জন বন জোভির একটি এডিটেড ছবিকে আরও এডিট করে কিভাবে 'গাজী আব্দুল রশীদ' এর ছবি বানানো হয়েছে।
কিছু স্ক্রিনশট দেখুন--
১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে যখন এতকিছু ঘটে গেলো, ওই রাতে আবার ভারতেরই বেশ পরিচিত এক ওয়েবসাইট প্রতিবেদন করেছে, 'পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড গাজী আব্দুল রশীদ গ্রেফতার'!
দেখুন স্ক্রিনশটে--
১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে আরও একটি সংবাদ টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইকোনোমিক টাইমস, নিউজ এইটিন ইত্যাদি আউটলেট প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, বেলুচিস্তানে ৯ জন পাকিস্তানী সেনাকে বোমা হামলায় মেরেছে বেলুচ বিদ্রোহীরা। বেলুচ বিদ্রোহীদের পরিচালিত 'বেলুচিস্তান পোস্ট' নামের এক উর্দু পত্রিকার বরাত দেয়া হয়েছে তাতে। অন্য কোনো সূত্র নেই।
কিন্তু এমন ঘটনার একদিন পরও ভারতের ওই নির্দিষ্ট কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ছাড়া আর কোথাও এই খবর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের মতো দেশের ৯ জন সেনা কোনো বোমা হামলায় মারা গেলে (এবং আরও অনেকে আহত) তা বিশ্বের যে কোনো বড় মিডিয়া হাউজের জন্য বড় খবর হিসেবেই বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু অন্য কোথাও সংবাদটি প্রকাশিত না হওয়ায় এটির সত্যতা নেই বলেই ধরে নেয়া যায়।
শুধু পাকিস্তানী সেনা বা বিদ্রোহীদের নিয়েই ভুয়া সংবাদ ও ছবি প্রকাশিত হচ্ছে না ভারতীয় মিডিয়ায়, নিজ দেশের পুলিশের ওপরও হামলার ভুয়া খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অল্টনিউজের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে,click here 'টাইমস নাও' ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্রেকিং নিউজ প্রচার করে যে, জম্মু কাশ্মিরের শোপিয়ান জেলায় একটি থানায় বিদ্রোহীরা হামলা করেছে। পরে ওই থানার কর্মকর্তারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মিডিয়াকে জানান, এটি ভুয়া খবর।
বড় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি ছড়ানোকে এখন অস্বাভাবিক মনে করা হয় না। কিন্তু মূলধারার মিডিয়ায় এভাবে একের পর এক ভুয়া খবর পরিবেশন অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন