টানা তৃতীয় বারের মত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারে ভালো করলেও দলে ‘বেহাল’ অবস্থা! কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সংগঠনে ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’ চরমে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে দলটির প্রাণ তৃণমূলে বেশ নাজেহাল অবস্থা। মাঠে বিরোধী দল না থাকায় আওয়ামী লীগেই একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী। পাল্লা দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। একে অপরের চরিত্র হননেও পিছপা হচ্ছেন না।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেয়ে আত্মতৃপ্তি দলের মধ্যে। খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগের অন্তঃকলহ বাড়বে ঠিক। আওয়ামী লীগের যদি নৌকা প্রার্থী না জেতে, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থী জিতবে। সেও তো আওয়ামী লীগের।’
জানা গেছে, প্রথম ধাপে ৮৬ ও দ্বিতীয় ধাপে ১২২ উপজেলায় একক প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে প্রথম ধাপেই ৮৬ উপজেলায় ১১৩ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই আছেন। একই অবস্থা দ্বিতীয় ধাপেও। মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাপ ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে বাকি ধাপগুলোতেও এমন বিদ্রোহী থাকার আশঙ্কা আছে।
সারাদেশের তৃণমূলের এসব প্রার্থীরা একে অপরকে ঘায়েল করতে নানাভাবে চরিত্রহননে নেমেছেন। কেউ তার বিরোধীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে, কেউ দুদকে কেউ বা সাংবাদিকদের অভিযোগ করছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি কাদা ছোঁড়াছুড়ি বাড়ছে তৃণমূলে। গ্রুপ, সাব গ্রুপ তৈরি হচ্ছে দলে। নিজেদের অন্তঃকলহের পাশাপাশি কর্মীদের কাছে বিতর্কিত হচ্ছে নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কুড়িগ্রামে। এই জেলার ৯ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৩১ জন। সুনামগঞ্জ জেলার ১০ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ২৪ জন।
এছাড়া রাজশাহীর ৯ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ৬ জন, নাটোরের ৬ উপজেলায় ৭ জন, লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় ৯ জন, নেত্রকোণার ৯ উপজেলায় ৬ জন, জামালপুরের ৭ উপজেলায় ৮ জন, হবিগঞ্জের ৮ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ৯ জন। এভাবে সব ধাপেই কমবেশি বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছে।
এবারের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে লালনে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। নির্বাচন জমজমাট করতেই তাদের এই পদক্ষেপ বলে জানা গেছে। কারণ বিএনপি অংশ না নেয়ায় পুরো মাঠ এখন ক্ষমতাসীনদের দখলে। তাই নিজেদের মধ্যে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে বিদ্রোহীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের ‘উৎসাহ’ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে এতে সরকারের আওয়ামী লীগের লাভ হলেও দলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এতে অবশ্য আওয়ামী লীগের ‘মাথাব্যথা’ নেই বলেই শোনা যাচ্ছে।
দলটির নেতারা বলছেন, ‘নির্বাচন জমজমাট করার জন্য সাময়িক দ্বন্দ্ব হয়ত ফুটে ওঠছে, নির্বাচনের পর সবাইকে ফের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে।’
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর বাইরেও তৃণমূলে কাদা ছোড়াছুড়িও বেশ চরমে। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে।
এরমধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, কুমিল্লার ব্রাক্ষ্মণপাড়ার জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে।
এসব অভিযোগ প্রার্থীরা অস্বীকার করলেও অকাট্য প্রমাণসহ জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নানা জায়গায় প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগের অন্তঃকলহ বাড়বে ঠিক। আওয়ামী লীগের যদি নৌকা প্রার্থী না জেতে, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থী জিতবে। সেও তো আওয়ামী লীগের।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন