ঢাকায় তাইওয়ানের অফিস খোলা নিয়ে বেইজিংয়ের যে অসন্তোষ রয়েছে সেটাকে পুঁজি করে এবার সফল হতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দিল্লীর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে দলটি। সম্প্রতি বিএনপির পুনর্গঠিত ‘বিদেশ বিষয়ক কমিটি’ এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে টিম লিডার করে ২১ সদস্যের বিদেশ বিষয়ক কমিটির অনুমোদন দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া এক নারী সদস্য জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগের কমিটির অধিকাংশ সদস্যই নতুন কমিটিতে রয়েছেন। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আল-হারুনসহ উল্লেখযোগ্য কয়েকজন কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদসহ বেশ কয়েকজন নতুন কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন।
কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন চৌধুরী, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শামা ওবায়েদ, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, জেবা খান, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম রয়েছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান ইনাম আহমেদ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার পর এ কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। শোনা যায় কূটনীতিকদের সঙ্গে মঈন খানের বেশ ঘনিষ্ঠতা। তারা প্রায় নিয়মিতই মঈন খানের বাসায় যাতায়াত করেন। তাহলে তাকে বাদ দেয়া হলো কেন- জানতে চাইলে ওই নারী সদস্য বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন কমিটি হয়েছে।’
একটি সূত্রের দাবি, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী কমিটির প্রধান হলে মঈন খান সেখানে জায়গা পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া মঈন খান কূটনৈতিক অঙ্গনে এগিয়ে থাকলেও তার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন কমিটিতে জায়গা পাননি। এছাড়া তিনি পশ্চিমা ঘেষা। তিনি একসময় তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি। হতে পারে, কমিটির প্রধানের অনীহার কারণে তিনি বাদ পড়েছেন অথবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই কূটনীতিতে সেভাবে সময় দিতে পারবেন না বলেই তাকে কমিটিতে রাখা হয়নি।
অপর এক সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকার অনেকটা চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। এ সুযোগে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। ঢাকায় তাইওয়ানের অফিস খোলার বিষয়ে বেইজিংয়ের যে অসন্তোষ সেটা কাজে লাগিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টুদের সামনে রাখা হয়েছে। গত বছর তারা ভারত সফর করেছিলেন। ভারতের ‘থিংক ট্যাংকদের’ সঙ্গে তাদের একটা ভালো বোঝাপড়া রয়েছে।
নতুন কমিটি নিয়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের এক তরুণ সদস্য বলেন, ‘পুনর্গঠিত কমিটিতে শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক ও পেশাদার কূটনীতিকদের প্রাধান্য দেয়া হয়নি। যাদের নিয়ে নতুন কমিটি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই কূটনীতিতে আনাড়ি। বলা যায়, ব্যবসায়ী ও আইনজীবীদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর চেয়ে ড. আব্দুল মঈন খান রাজনীতি ও কূটনীতিতে অনেক এগিয়ে। তিনিসহ কয়েকজন পেশাদার কূটনীতিককে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন কমিটিতে রিয়াজ রহমান পেশাদার কূটনীতিক এবং ড. আসাদুজ্জামান রিপন আপাদমস্তক রাজনীতিক ও কূটনীতিক। তাদের বাইরে যারা কমিটিতে রয়েছেন, তাদের গ্রহণযোগ্যতা দলে মধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ!’
তিনি বলেন, ‘ভারতবিরোধী রাজনীতি করে বিএনপি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বা তিস্তা ইস্যুতে বিএনপি নমনীয়। সম্প্রতি সীমান্ত হত্যাকাণ্ডে বিএনপি বিবৃতি দিলেও দলের সদ্য পুনর্গঠিত বিদেশ বিষয়ক কমিটিতে চীনকে টেক্কা দিতে ভারতপন্থীদের সামনে রাখা হয়েছে বলে সুর উঠেছে। ভারত তো জামায়াতকে ছাড়তে বলেছে, তারেক রহমানকে দলের বাইরে রাখতে বলেছে; বিদেশ কমিটির দায়িত্বশীলরা শেষ পর্যন্ত এ দাবিও মেনে নেয়ার আশ্বাস ভারতকে দেয় কিনা সেজন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে।’
পুনর্গঠিত বিদেশ বিষয়ক কমিটির বিষয়ে জানতে কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে কমিটির সদস্য ড. আসাদুজ্জামান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমির খসরু মাহমুদকে টিম লিডার করে ২১ সদস্যের বিদেশ বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ নতুন কমিটিতে পুরনো যাদের জায়গা হয়নি সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন