২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হলো। এক বছর আগে দোর্দণ্ড প্রতাপ আর অহমিকা নিয়ে পুতিনের দুই লাখ সৈন্য ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়। প্রায় ৩৫ মাইল দীর্ঘ রুশ ট্যাংক বহরের গর্জন কিছুদিনের মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা ট্যাংক বহরের ধ্বংসযজ্ঞ এবং রাশিয়ান সৈন্যদের পিছুহটা দেখেছি। ভুল সামরিক হিসাব কষে পুতিন ভেবেছিলেন পিঠা খেতে খেতে তিনি সৈন্য-সামন্তসহ কিয়েভে পৌঁছবেন। কিন্তু আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমারা অস্ত্র-গোলাবারুদ আর রসদ দিয়ে ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনী এবং জনগণকে উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকিয়ে রেখেছে। ফলে দীর্ঘ এক বছরের যুদ্ধে পুতিন কিঞ্চিৎ সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছেন। এখন এ যুদ্ধের শেষ কোথায় তা আর দেখা যাচ্ছে না। কেবল ধ্বংসযজ্ঞ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ আর বিশ্ববাসীর অবর্ণনীয় কষ্টের কাহিনী ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এ যুদ্ধে কোনো পক্ষ জয়ী হতে না পারলেও মানবতার পরাজয় নিশ্চিত।
১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ এ যুদ্ধের পেছনে জোরালো কোনো কারণ না থাকলেও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অহমিকা আর রাশিয়ার নিরাপত্তা ভাবনার সমীকরণ। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয় এবং বিশ্বে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে। সমাজতান্ত্রিক সম্রাজ্যবাদের হুমকি শেষ হলে তারা ইসলামী শক্তির উত্থানে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। তৎকালীন ইসলামী নবজাগরণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে। কোথাও মুসলিম দেশগুলো নিজেদের মধ্যে দ্ব›দ্ব লাগিয়ে এক পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহ করে, কোথাও সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত হয়, আবার কোথাও অন্য পশ্চিমা সহযোগী দেশকে দিয়ে পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে। এমনকি কোথাও কোথাও সংশ্লিষ্ট দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি দাঁড় করিয়ে ইসলামের রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে ঠেকানোর পদ্ধতি গ্রহণ করে।
আমেরিকার এসব হস্তক্ষেপ আমরা দেখেছি ইরাক-ইরান যুদ্ধ, উপসাগরীয় বহুজাতিক বাহিনীর যুদ্ধ, বসনিয়ার যুদ্ধ, ১৯৯১ সালে আলজেরিয়ার নির্বাচন বানচাল, ইস্টতীমুর স্বাধীনতা, সুদান সঙ্কট, আফগানিস্তান যুদ্ধ ইত্যাদি সর্বত্র। এ সময়ের আগেও শীতল যুদ্ধের সময় পৃথিবীর সব প্রান্তের সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ হস্তক্ষেপের স্বাক্ষর রয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিরই অংশ হলো নিজস্ব কর্তৃত্ব বজায় রাখতে যেখানে প্রয়োজন সংঘর্ষ লাগানো বা সংঘর্ষে নিজেরা জড়ানো আর যেখানে প্রয়োজন শান্তির প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয়া, যেন নিজেদের স্বার্থটুকু সবখানে পুরোটা আদায় করা যায়। এভাবে একক পরাশক্তির বিশ্বে মার্কিনিরা যখন মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত; তখন চীন এবং রাশিয়া নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। চীন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে দেশে দেশে প্রভাব বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে রাশিয়া ৯০ দশকের ক্রান্তিকাল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী পুতিনের নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে আবারো ভূ-রাজনৈতিকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে মস্কো। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ সংবিৎ ফিরে পায়। বুঝতে পারে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মেকি যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানের চোরাবালিতে ওয়াশিংটনের আটকে যাওয়ার সুযোগে চীন ও রাশিয়ার দ্রুত উত্থান ঘটছে। এর মধ্যে ঝানু রাজনীতিক জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আরোহণ করে বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাচাই করে ফেলেন এবং তড়িঘড়ি করে অসমাপ্ত যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে পরবর্তী যুদ্ধের জন্য অর্থ ও জনবল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য দেশে ফিরিয়ে নেন। রাশিয়ার উত্থান ঠেকাতে তিনি পূর্বসূরিদের কৌশল অনুসরণ করেন। ইউরোপের পূর্বদিকে ন্যাটোর বিস্তার ঘটানোতে মনোযোগ দেন। এদিকে রাশিয়া নিজের সীমানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী শহর ক্রিমিয়া দখল করে বসে। ফলে ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়াকুনাভিচের পতন ঘটে এবং পশ্চিমাপন্থী তথা আমেরিকাপন্থী জেলেনোস্কি ক্ষমতায় আসেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে জেলেনোস্কি ন্যাটোতে যোগদানে তোড়জোড় শুরু করেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা তাকে ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য জোর উসকানি দিতে থাকে। ফলে পুতিন ন্যাটোর গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে অনুভব করেন। রাশিয়ার নিরাপত্তা চরম হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে বলে পুতিন মনে করেন। দেশে তার কোনো বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি অথবা তার সাথে মতদ্বৈধতামূলক পরামর্শ দেয়ার মতো কেউ না থাকায় মাথাগরম এবং নৃশংস স্বৈরাচারী পুতিন তার দেশের সীমানা পর্যন্ত ন্যাটোর বিস্তারের সম্ভাব্য হুমকি ঠেকাতে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে একতরফা আগ্রাসন শুরু করেন। সম্ভবত এটাই চাচ্ছিলেন মার্কিন ক্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সাথে সাথে তিনি পশ্চিম ইউরোপকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে সর্বাত্মক সহযোগিতার তৎপরতা শুরু করেন।
এতে অস্ত্র ব্যবসায়সহ বিশ্বের মোড়লিপনা, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ, মার্কিন সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষণ ইত্যাদি সহজ হয়ে গেছে। সাধারণত মার্কিন সব প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করতে দেখা যায়। মার্কিনিদের নিজেদের দেশে বড় কোনো সমস্যা না থাকায় বা দেশে মোটামুটি স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় মার্কিন নেতৃবৃন্দ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে দেশের বাইরে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সমস্যা নিয়ে নেতৃত্বের আসন দখল করার একটা প্রবণতা প্রদর্শন করে আসছেন। তার অংশ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিনিরা পশ্চিম ইউরোপিয়ানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোর ইসলামী বিপ্লবীদের তেজ স্তিমিত হয়ে আসায় মার্কিনিরা তাদের বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপের স্লোগান বা অজুহাত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ থেকে ‘মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রে’ পরিবর্তন করে নিয়েছেন। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার করে ইরাক এবং আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে লাখ লাখ নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। অথচ ভারতে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস আর ফিলিস্তিনে ইহুদি সন্ত্রাসবাদের চলমান প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ উক্ত দু’টি দেশ যেহেতু মুসলমানদের বিরুদ্ধে; সেহেতু হিন্দুত্ববাদী ও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসকে আত্মরক্ষামূলক লড়াই হিসেবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আর ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের’ প্রহরী দাবি করলেও মিশরের সামরিকতন্ত্র, ইয়েমেনে সৌদি হত্যাযজ্ঞ, সিরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি প্রশ্নে মার্কিন নেতৃত্ব একেবারে নীরব হয়ে আছেন। অর্থাৎ মার্কিনিদের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দর্শন শুধু আমেরিকার স্বার্থের সাথে জড়িত! এজন্য ইউক্রেনে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে গত বছরের ফল বিশ্লেষণে শুধু ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়। প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ লাখ দেশান্তরিত হয়েছে (নিউইয়র্ক টাইমস : ০২/০৩/২০২৩)। বেসামরিক নিহতের সংখ্যা আট হাজার ছয় জন। আর উভয় পক্ষে ১৩ হাজার ২৮৭ সৈন্য নিহত হয়েছে (জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন : নয়া দিগন্ত : ২৫/০২/২০২৩)। এক বছরের ভয়াবহ যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের কিছু এলাকায় সামরিক আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। অনেক রাশিয়ান জেনারেল নিহত হয়েছেন। সেই সাথে সামরিক দুর্বলতা উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। এ সময় রাশিয়ার অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কিন্তু ভেঙে পড়েনি। পশ্চিমা শক্তি ভেবেছিল অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে রাশিয়াকে কাবু করা যাবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি রাশিয়ার অর্থনীতির ভিত খাদ্যশস্য এবং প্রযুক্তিনির্ভর পশ্চিমা শিল্পের চাকা ঘুরানোর কাঁচামালের মজুদের কারণে। রাশিয়া ২০২১ সালে বিশ্ববাজারে মোট সরবরাহকৃত তেলের ১৭.৫ শতাংশ, প্যালাডিয়ামের ৪৭ শতাংশ, নিকেলের ১৬.৭ শতাংশ, অ্যালুমিনিয়ামের ১৩ শতাংশ এবং পটাশ সারের ২৫ শতাংশ সরবরাহ করেছে (প্রথম আলো: ০২/০৩/২০২৩)। অন্যদিকে ইউক্রেনের ক্ষতি আরো ভয়াবহ। দেশটির অবকাঠামোগত, বিশেষ করে এনার্জি অবকাঠামো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে এ যুদ্ধের প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর। বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্য ও জ্বালানির অভাব এবং মূল্যস্ফীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে (প্রথম আলো : ২৪/০২/২০২৩)। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামনে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে এ যুদ্ধের ব্যয় মিটাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলছে। এ অর্থ সাধারণ মানুষের ভাত, কাপড় এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত থেকে চলে যাচ্ছে। জানা যায়, বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৬২ শতাংশ ব্যয় করছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া (প্রথম আলো : ২২/০২/২০২৩)।
ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ হওয়ার কোনো আলামত এখনো স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি চীন ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যুদ্ধ বন্ধে। ইউক্রেন এ প্রস্তাবকে একপক্ষীয় বলে মন্তব্য করেছে। আর চীন নিজে রাশিয়ার আগ্রাসনকে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই শান্তি প্রস্তাবকে পশ্চিমারা সন্দেহের চোখে দেখছে। বরং আমেরিকা রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে চীনকে সতর্ক করেছে। কাজে এ শান্তি প্রস্তাব কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা। এদিকে অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে উত্তেজনা সৃষ্টি করে চীনকে ব্যস্ত রাখতে চাইছে যেন চীন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে যুক্ত হতে না পারে। এজন্য দেখা যায়, গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে নিয়ে যত উসকানি চীনকে দিয়েছে এবং বাকযুদ্ধ করেছে তা আগে আর কখনো দেখা যায়নি। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক অনেক গভীর হয়েছে। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারগেই ল্যাভরভের সাথে হাঁটতে হাঁটতে দশ মিনিট কথা বলেছেন। সেখানে ব্লিংকেন ল্যাভরভকে ইউক্রেন থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন (প্রথম আলো : ২১/০২/২০২৩)। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও দাবি করেছেন, রাশিয়ার সব সৈন্য প্রত্যাহার এবং ১৯৯১ সালের সীমানা থেকে ফিরে যাওয়ার শর্তে রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনায় বসা যেতে পারে। ইতোমধ্যে আমেরিকার তিন হাজার কোটি ডলারসহ পশ্চিমারা প্রায় চার হাজার কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে ইউক্রেনকে (প্রাগুক্ত)। আবার ন্যাটোও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিয়েভে সফরে গিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ইউক্রেনে কখনো জিতবে না রাশিয়া, কখনোই না’। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুদ্ধ জয়ে ইউক্রেনের যতদিন লাগবে ততদিন যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে (প্রথম আলো : ২৭/০২/২০২৩)। এমতাবস্থায় রাশিয়া আসছে বসন্তে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ একটি জেদাজেদির যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। কোনো পক্ষের পিছু হটার বা জয়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তবে করোনার পর আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতো নেই। তাই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইউক্রেন যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহযোগিতার বিষয়টি মার্কিনিরা ভালোভাবে নিচ্ছে না। এমন একটি চাপ বাইডেন অনুভব করছেন বলে জানা যায়। এমতাবস্থায় কতদিন বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেন তথা পশ্চিমাদের এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারবে তা বলা মুশকিল। এমনটাও হতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সামনে রেখে বাইডেন হঠাৎ কোনো ধরনের নেগোসিয়েশন বা আপস রফার মাধ্যমে মার্কিনিদের নিকট হিরো হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আর পুতিনও খুব বেশিদিন এ যুদ্ধের বোঝা টানতে পারবেন না। কাজেই পুতিনও বাইডেনের যেকোনো আপস প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারেন। অতীত বলে আমেরিকার রাজনীতি হয়ে থাকে দেশের বাইরে। অর্থাৎ বিশ্বের সংঘাত-শান্তির রাজনীতির উপর ভর করে মার্কিন নেতৃত্ব ভোটারদের নিজেদের দিকে টানার প্রয়াস পান। কাজেই বিশ্ববাসীকে ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়ঙ্কর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ‘বসন্ত অভিযানের’ নামে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর নৃশংসতা চরমে উঠলে বা ইউক্রেন ধ্বংসের মুখে পড়লে মার্কিন জনসংহতি ইউক্রেনের দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি হতে পারে। অবস্থা সেই দিকে গড়ালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হয়তোবা ইউক্রেনে সহায়তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে এ যুদ্ধের শেষ হয়তোবা সহসাই হবে না। তবে ততদিনে বিশ্বমানবতা পরাজয়ের দ্বারা প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে।
লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন