গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থেই বিনয়ী ও ভদ্র হওয়া দরকার
18 September 2017, Monday
আমরা সবাই পশ্চিমা গণতন্ত্র চাই। পশ্চিমা গণতন্ত্রের অনুকরণ করতে চাই। কিন্তু পশ্চিমা গণতন্ত্রের যেটা বৈশিষ্ট্য এবং যে বৈশিষ্ট্যের জোরে পশ্চিমা গণতন্ত্র টিকে আছে, তাকে অনুসরণ করতে চাই না। এই বৈশিষ্ট্যটি হল রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা।গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল কথাই হল চেক অ্যান্ড ব্যালান্স। গত শতকের প্রায় মধ্যভাগে জার্মানিতে এই চেক অ্যান্ড ব্যালান্স না থাকার দরুন হিটলারের আবির্ভাব সম্ভব হয়েছিল। আমেরিকায় এই চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকার দরুন ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুতেই হিটলারে পরিণত হতে পারছেন না।
স্বৈরাচারী শাসকরা কখনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চান না। কারণ, তাতে তিনি সর্বশক্তির অধিকারী হতে পারেন না। পাকিস্তানে তাই আইয়ুব খান গণতন্ত্রের উচ্ছেদ করেছেন। বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানও তাই করেছেন। স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে। খালেদা জিয়া তাই স্বামীর মতো সর্ব ক্ষমতার অধিকারী প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েও পারেননি। রাজনীতিতে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স ফিরে আসায় খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম আমলটা ছিল মোটামুটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ। তথাপি বিএনপি অসহিষ্ণুতার রাজনীতির চর্চা করেছে। দেশে সহিষ্ণুতার রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি যে এখনও অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে, এটা তার প্রধান কারণ।
আওয়ামী লীগ এখন দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতায় আছে। শেখ হাসিনা নিজে একজন পরীক্ষিত গণতান্ত্রিক নেতা। তিনি চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের রাজনীতি চান। তাই ২০১৪ সালে নির্বাচিত সংসদে বিরোধী দল না থাকায় তিনি একটি সংসদীয় বিরোধী দল গঠনে সহায়তা দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চান না; চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের রাজনীতি চান। তা সত্ত্বেও বলব, আওয়ামী লীগের এই সরকারও দেশে সহিষ্ণুতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে গণতান্ত্রিক শাসন ও সহিষ্ণুতার রাজনীতি অনুসরণ করলেও তার অনেক মন্ত্রী ও দলীয় নেতা তাদের বাক্যে ও আচরণে যে অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছেন, তা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মোটেই অনুকূল নয়।
আব্রাহাম লিঙ্কনের একটি উক্তি বহুবার উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘Nearly all men can stand adversity. But if you want to test a man's character, give him power.’
মোদ্দা কথায় এর অর্থ, ‘প্রায় সব মানুষই বিপদ মোকাবেলা করতে পারে। কিন্তু তার চরিত্র বিচার করতে হলে তার হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেখ।’ এই কথাটি যে কত সত্য, এ যুগে তার বড় প্রমাণ মিয়ানমারের অং সান সু চি। তিনি মিয়ানমারের স্বাধীনতার স্থপতি অং সানের কন্যা। ১৯৪৮ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অং সানকে তার মন্ত্রিসভার সব সদস্যসহ হত্যা করা হয়। সু চি দীর্ঘকাল ছিলেন বিদেশে। দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাতে দুঃসহ নির্যাতন সহ্য করেছেন। কারাযন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তবু তিনি হিংসার পথ ধরেননি। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনে তিনি অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সারা বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা ও সমর্থন পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
সেই অহিংসা ও মানবতার প্রতীক নেত্রী আজ ক্ষমতায় যেতেই অন্য মূর্তি ধারণ করেছেন। নিজ দেশে সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর তার সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী যে বর্বরতা শুরু করেছে তা বাংলাদেশে ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যার তুল্য। জাতিসংঘ এটাকে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ আখ্যা দিয়েছে। আর সারা বিশ্ব এই বর্বর গণহত্যার নিন্দায় মুখর। অং সান সু চি ক্ষমতায় বসে এই বর্বরতার পক্ষে সাফাই গাইছেন। নিজের অতীত ভুলে গেছেন। আব্রাহাম লিঙ্কনের কথা যে কত সত্য, এ যুগে তার প্রমাণ মিয়ানমারের এই নেত্রী।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কাঠামোগত রূপটা ফিরে এসেছে। কিন্তু তার চরিত্রের ভিত্তিটা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শাসন-ব্যবস্থায় চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নেই। রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা নেই। এই চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকত যদি দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকত এবং জাতীয় সংসদেও থাকত তার অস্তিত্ব। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ (opponent); শত্রুপক্ষ (enemy) নয়। বিএনপি শক্তিশালী দল হওয়া সত্ত্বেও বিরোধী দলের এই ভূমিকাটি পালন করতে চায়নি। তারা শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশের স্বাধীনতার পক্ষের সব দল এবং স্বাধীনতার স্থপতিসহ সব মূল্যবোধের প্রতি শত্রুপক্ষের আচরণ করেছে। ক্ষমতায় থাকাকালেও বিএনপি অপর দল আওয়ামী লীগকে শত্রুজ্ঞান করে ধ্বংস করতে চেয়েছে এবং স্বাধীনতার শত্রু জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছে। এই মৈত্রীরও ভিত্তি ছিল হিংসা ও সন্ত্রাস দ্বারা শত্রু নিধন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই অসহিষ্ণুতাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগও এখন এই অসহিষ্ণু রাজনীতির পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায় নিয়ে বিতর্কে সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো মন্ত্রী ও নেতা এবং সম্প্রতি সংসদে আলোচনাকালে তারা যে অসংযত ও অশোভন মন্তব্য করেছেন, তা কোনো ‘মাননীয় সংসদ সদস্যের’ ভাষা হতে পারে না। এদিক থেকে মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের প্রশংসা করব। তিনিও প্রদত্ত রায়ে প্রধান বিচারপতির ‘পর্যবেক্ষণের’ সমালোচনা করেছেন। কিন্তু যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে এবং শালীনতার সঙ্গে। প্রধান বিচারপতি যদি কোনো গুরুতর অন্যায়ও করে থাকেন, তাহলে তার প্রতিকারের সাংবিধানিক ব্যবস্থা আছে, সমালোচনার শালীন ও সংযত ভাষা আছে। তার মিডিয়া ট্রায়ালের ব্যবস্থাটিও সীমার বাইরে চলে গেছে। মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে আমি অত্যন্ত স্নেহ করি। তিনি একজন সৎ ও যোগ্য মন্ত্রী। তিনি অগ্নিকন্যা নামে খ্যাত। তার মুখে প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় মৎস্যকন্যার ভাষা আশা করিনি।
অসংযত আচরণ এবং অশালীন ভাষা আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তাহলে গণতন্ত্র টিকবে না। বিএনপি যখন সংসদে ছিল, তখন তাদের সংসদীয় দলের উপনেতা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাগে বেসামাল হয়ে স্পিকারের দিকে ফাইল ছুড়ে মেরেছিলেন। তখন একটি বিদেশি ইংরেজি দৈনিকে মন্তব্য করা হয়েছিল, ‘গণতান্ত্রিক দেশের পার্লামেন্টে হৈ চৈ হয় এবং মারামারিও হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দলের নেতা-উপনেতারা তা থামান; তারা নিজেরাই উত্তেজিত হয়ে স্পিকারের ওপর হামলা চালান না। বাংলাদেশের পার্লামেন্টে সেই হামলাও চলছে। এই দেশটিতে গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার ভবিষ্যৎ কোথায়?’
ভাগ্যিস ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী সংসদের স্পিকারের দিকে ফাইল ছুড়ে মেরেছিলেন, ভাঙা চেয়ারের হাতল ছুড়ে মারেননি। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান আমলে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের আইন পরিষদের অধিবেশনে সদস্যদের মধ্যে মারামারির সময় ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর দিকে ভাঙা চেয়ারের হাতল ছুড়ে মারা হয়। তাতে তিনি আহত হন। তিনি ছিলেন ডায়াবেটিস রোগী। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে কোমার মধ্যে থাকা অবস্থাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আর এই মৃত্যুকে অজুহাত করেই আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির সুযোগ পেয়েছিলেন।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, ভদ্র ও বিনয়ী হওয়ার জন্য তো পয়সা খরচ করতে হয় না (Courtesy costs nothing)। তাহলে আমাদের বাঙালিদের একটা বড় অংশের ভদ্র ও বিনয়ী হতে বাধা কোথায়? এ কথা কি সুস্থ মাথায় ভাবা যায়, বাংলাদেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, সাবেক পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে এটর্নি জেনারেলকে বাস্টার্ড (জারজ) বলে গালি দিতে পারেন? আমাদের সামাজিক জীবনের অবক্ষয় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? তার প্রভাব বর্তেছে এখন আমাদের রাজনীতির ওপর।
কোনো দেশের রাজনীতির ভাষা যদি হিংসাত্মক হয়, তাহলে সে দেশের রাজনীতি হিংসামুক্ত হতে পারে না। গণতন্ত্র স্থিতিশীলতা পেতে পারে না। ভারতে গণতন্ত্র এখনও টিকে আছে, তার প্রধান কারণ তার রাজনীতির ভাষা বর্তমানে ক্রমশ অসংযত ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেও অতীতে তা ছিল না। পাকিস্তানে রাজনীতির ভাষা শুরু থেকেই হিংসাশ্রয়ী। পাকিস্তানে গণতন্ত্র স্থিতিশীল হয়নি। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান তার দেশে কোনো গণতান্ত্রিক বিরোধী দলের অস্তিত্ব স্বীকার করতে তো চানইনি, অধিকন্তু বিরোধী দলের নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গালি দিয়ে বলেছেন, ‘ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুত্তা।’ মুসলিম লীগ নেতা খান আবদুল কাইয়ুম খান তখনকার পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে বিরোধী দলকে হুমকি দিয়েছেন। ‘শির কুচল দেঙ্গে’ (মাথা ভেঙে দেব)। আইয়ুব খান তো তার ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স’ বইতে গোটা বাঙালি জাতিকেই গালি দিয়েছেন।
বাংলাদেশে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরই চর্চা করেছে বিএনপি এবং তাদের অসংযত ও অশালীন ভাষায় বলেছে, ‘শেখ হাসিনাকে তার বাপের পথে পাঠিয়ে দেব’, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ো, নইলে প্রাণে বাঁচবে না’ ইত্যাদি স্লোগান এক সময় অহরহ উঠেছে বিএনপির সভা-শোভাযাত্রায়। জাতির পিতার চরিত্র হনন, তার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন বিএনপি-রাজনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। আওয়ামী লীগের রাজনীতি তা নয়। বঙ্গবন্ধু আইয়ুব-মোনায়েম সরকারের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, এমনকি তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে চড়ানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল; কিন্তু তার মুখে আইয়ুব ও মোনায়েমের কঠোর রাজনৈতিক সমালোচনা শোনা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ, অশোভন উক্তি শোনা যায়নি। তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেও শোনা যায়নি একটিও হিংসাত্মক কথা।
একটা ঘটনা এখনও আমার স্মরণ আছে। ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ থেকে মুক্ত হয়ে বের হওয়ার কিছুদিন পর বঙ্গবন্ধু এক সভায় বক্তৃতা দেবেন। তখন আমি তাকে মোনায়েম খানের কুচক্রী ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, তাকে একটু কঠোর ভাষায় আপনি সমালোচনা করুন। বঙ্গবন্ধু জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি যুদ্ধ করছি একটি পরাক্রম সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। সেখানে সেই জান্তার এক দালালের নাম নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে তাকে গুরুত্ব দেব?’ সেই সভায় বঙ্গবন্ধু একবারও মোনায়েম খানের নাম উচ্চারণ করেননি। তাকে বক্তৃতায় ‘পাটোয়ারি সাহেব’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গণতান্ত্রিক রাজনীতির সৌন্দর্য ও শোভনতাই হল, বিরুদ্ধপক্ষের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং তাদের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন। বাংলাদেশে এটা লুপ্ত হয়ে গেছে মনে হয়। অবিভক্ত বাংলায় শেরে বাংলা ফজলুল হক যখন মুসলিম লীগবিরোধী রাজনীতি করছেন, তখন একবার তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মুসলিম লীগের নেতা খাজা নাজিমুদ্দীন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছুটে গিয়েছিলেন তাকে দেখতে।
পাকিস্তান আমলেও বঙ্গবন্ধু যখন একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় অভিযুক্ত এবং ঢাকায় পুরনো আদালত পাড়ায় তাকে আনা হতো বিচারকক্ষে, সেদিন তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খাজা খায়েরুদ্দীন নিয়মিত এক কৌটা এরিনমোর টোব্যাকো হাতে সেই বিচারকক্ষে হাজির থাকতেন। বঙ্গবন্ধুকে দিতেন তার প্রিয় টোব্যাকো। স্বাধীন বাংলাদেশে মওলানা ভাসানী যখন মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত, তখনও বঙ্গবন্ধু তাকে প্রতি মাসে টাকা, লুঙ্গি, ওষুধপত্র নিয়মিত পাঠাতেন। ১৯৭৫ সালের মে মাসে সন্তোষে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বর্তমান বাংলাদেশে অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার মধ্যে এই পরমত সহিষ্ণুতা, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান নেই বললেই চলে। তাদের রাজনীতির ভাষাও সংযত ও শোভন নয়। এই রাজনীতির চর্চা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করতে পারে না। আওয়ামী লীগের উচিত বিরোধী দলে থাকাকালে শত নিপীড়নের মুখেও তারা যেমন ধৈর্য ও গণতান্ত্রিক আচরণের পরিচয় দেন, তেমনি ক্ষমতায় থাকাকালে ততধিক ধৈর্য ও সংযমের প্রমাণ দেয়া- বাক্যে এবং আচরণেও। দেশে গণতান্ত্রিক নীতিভিত্তিক একটি শক্তিশালী বিরোধী দলও দরকার। নইলে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও অতিব্যবহারও রোধ করা যাবে না। ক্ষমতাসীনদের মুখে সংযম ও শালীনতার লাগাম পরানোও যাবে না।
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন