|
ইকতেদার আহমেদ
|
 |
ভোটারবিহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন- দায় কার
14 August 2023, Monday
যেকোনো নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হলে তাতে সন্তোষজনক হারে ভোটার উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায়। একটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে সমসুযোগ সম্বলিত মাঠ সৃষ্টির দায়িত্ব ক্ষমতাসীন সরকার ও এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়। বাংলাদেশ অভ্যুদয় পরবর্তী তিনটি রাজনৈতিক দল সরকার পরিচালনার সুযোগ লাভ করে। এ তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের জন্ম বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এবং বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম বাংলাদেশ অভ্যুদয় পরবর্তী। জাতীয় পার্টি বিগত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনপরবর্তী সরকারের অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় এর জনসমর্থন বর্তমানে ক্রমহ্রাসমান। বাংলাদেশে বিগত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন অসাংবিধানিক, বেআইনি ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হওয়ায় জনভিত্তির ওপর দেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর জনসমর্থনের হার নিরূপণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের কারণে ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন একতরফা ও সম্পূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল। উভয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অত্যন্ত নগণ্য ছিল যদিও ক্ষমতাসীনদের সুনিপুণ কারসাজিতে ভোটার উপস্থিতির প্রকৃত চিত্রের ভিন্নতায় উচ্চ হার দেখানোর প্রয়াস নেয়া হয়। এ দু’টি নির্বাচনের প্রথমোক্তটি অনুষ্ঠানকালীন বিএনপি ক্ষমতাসীন ছিল এবং শেষোক্তটি অনুষ্ঠানকালীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন ছিল। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হলেও এর বৈশিষ্ট্য হলো এ নির্বাচন অনুষ্ঠান পরবর্তী রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপি সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল উত্থাপন ও পাশপূর্বক সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রবর্তনের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত রচনা করে। সংসদটি গঠিত হওয়ার পক্ষকালেরও কম সময়ের মধ্যে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলনে এ মহৎ কাজটি সম্পন্নের পর সংসদ অবলুপ্ত ঘোষণা করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন সব দলের অংশগ্রহণে সপ্তম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করা হয়। অপর দিকে দশম সংসদ নির্বাচন ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের ন্যায় ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হলেও সংবিধানের সুস্পষ্ট বিধান ৬৫(২) অনুচ্ছেদের ব্যত্যয়ে গঠিত এ সংসদটি জনআকাক্সক্ষার অবজ্ঞা ও উপেক্ষায় এর মেয়াদকাল পূর্ণ করে।
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে জনসমর্থনের দিক থেকে দেশের জনমানুষের আস্থাভাজন দল বিএনপিসহ অপর দলগুলোর সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ চলাকালীন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়- তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। সংলাপ-পরবর্তী তার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণের আগের রাতে প্রশাসন, পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ভোটবাক্স পূর্ণ করার এক বিরল ঘটনায় দেশ ও বিদেশের সচেতন মানুষ হতবাক ও স্তম্ভিত হয়। এ সংসদটিও এর মেয়াদকাল পূর্ণ করার পথে থাকাবস্থায় ক্ষমতাসীনরা জনআকাক্সক্ষার বিপরীতে তাদের অধীনে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত হলেও সরকারের সাহায্য ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিষ্ঠার সাথে এ দায়িত্ব পালন দুরূহ। আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার সবসময় নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন পরিচালনায় দলীয় প্রভাব প্রয়োগে সচেষ্ট ছিল। আর এ কারণেই দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবসময় ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছে। এর বিপরীত চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায় ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারবহির্ভূত সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে। ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারবহির্র্ভূত সরকারের অধীন যে চারটি (পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম) সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এর প্রতিটিতেই নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীনরা পরাভূত হয়েছে।
এ দেশে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারবহির্ভূত সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর প্রদত্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। অনুরূপ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ে দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি অবিচল থেকে আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় মতাদর্শীদের পদায়ন নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্বাচনকে সর্বতোভাবে প্রভাবিত করার প্রয়াস নেয়া হয়। এ ধরনের অযাচিত ও অবৈধ প্রভাবের কারণে নির্বাচনী ফলাফলে জনমত উপেক্ষিত হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে হলে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর অবাধ প্রচারণার সুযোগ নিশ্চিতসহ ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বাধাহীনভাবে নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মেরে সন্তুষ্টির সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ লাভ করতে পারে এর প্রতিপালন নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনরত সরকারের জন্য জরুরি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত যে, নির্বাচনকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার দায়িত্ব পালনরত থাকাবস্থায় নির্বাচন কমিশন কখনো তাদের ওপর সংবিধান প্রদত্ত অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারেনি। পক্ষান্তরে এর বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয় নির্বাচনকালীন সময় দলীয় সরকারবহির্ভূত তত্ত্বাবধায়ক অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
আমাদের দেশে ইতোপূর্বে যেসব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছিল এর প্রতিটির ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সভা-সমাবেশের আয়োজনসহ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার সুযোগ লাভ করেছিল এবং প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে ভোটার স্লিপ পৌঁছে দিতে পেরেছিল। তা ছাড়া ভোট গ্রহণের দিন ভোট চলাকালীন প্রতিটি ভোটকক্ষে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা গেছে এবং ভোট গণনা এজেন্টদের উপস্থিতিতে সম্পন্নের পর ফলাফলের বিবরণীতে প্রতি প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নিজ নিজ অবস্থানে অদ্যাবধি অনড়। আওয়ামী লীগ একনিষ্ঠভাবে বর্তমান সংবিধানের বিধানাবলির অনুসরণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। আর এর বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সম্পূর্ণরূপে অনীহ। এ বাস্তবতায় গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেই সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন সংবিধান ও আইনের অনুসরণে সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অধীনে পরবর্তী যেকোনো জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে এমন আশা করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন পরবর্তী ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদের শূন্য আসনের যেসব উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এর প্রতিটির ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতির হার অত্যন্ত নগণ্য ছিল। যদিও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসাররা কারসাজির মাধ্যমে ভোটার উপস্থিতির উচ্চ হার দেখানোর প্রয়াস নেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- তাদের জনসমর্থন ৩০-৪০ শতাংশ। তাদের এ দাবি সঠিক হয়ে থাকলে দেশবাসী কেন তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তাদের সমর্থিত ভোটারদের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে পারেনি। অনুরূপ তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়নি।
বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বিগত ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে তাদের প্রতি অনুগত এমন ব্যক্তিদের নিয়োগদানে প্রত্যয়ী হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততা পরাভূত হয়েছে। এ সব অযোগ্য, অদক্ষ, অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা নিজেদের অপকর্ম এবং দুর্নীতিলব্ধ সম্পদ রক্ষায় এতই একাগ্র যে, তারা ক্ষমতাসীনদের জনসমর্থন যা-ই হোক না কেন, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতাসীনদের পুনঃআগমনে ক্ষমতাসীনদের চেয়ে অধিক তৎপর।
সার্বিক বিবেচনায় বিগত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অতীতে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর ফলাফল অবলোকনে প্রতীয়মান হয়- বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশবাসী অতীতের মতো একই চিত্র প্রত্যক্ষ করবে।
দেশবাসী কার অধীন কি ধরনের নির্বাচন চায় এ বিষয়ে যেকোনো ধরনের জরিপ পরিচালিত হলে অথবা গণভোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে নির্দ্বিধায় বলা যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের অবস্থান সংবিধানের বিদ্যমান বিধানের অনুসরণে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সপক্ষে নয়।
জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ এবং এতে বিপুল অর্থ ব্যয়ের আবশ্যকতা দেখা দেয়। এ অর্থের সম্পূর্ণ জোগান আসে জনগণের প্রদত্ত করের অর্থ হতে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও ভোটারবিহীন হলে জনগণ প্রদত্ত করের অর্থের অপব্যয় হয়। এ ধরনের অপব্যয় যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অপ্রত্যাশিত। জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে সর্বত্র সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিতে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের করাল থাবায় দেশের সাধারণ জনমানুষের জন্য এক নৈরাজ্যকর ও ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে বর্তমানে যার বহিঃপ্রকাশ দৃশ্যমান।
সংবিধান ও আইন জনগণের জন্য এবং সংবিধান ও আইনের জন্য জনগণ নয়- এ কথাটি অমোঘ সত্য। সংবিধানের মুখ্য বিষয় জনঅভিপ্রায়। জনঅভিপ্রায়ের বিপরীতে সংবিধানে কোনো কিছুর উপস্থিতি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জনঅভিপ্রায়ে আমাদের সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সন্নিবেশন ঘটেছিল। সংবিধান হতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অবলুপ্তি যে জনঅভিপ্রায়ের বিপরীতে ঘটেছিল এ প্রশ্নে বিতর্ক অবান্তর। আর তাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনঅভিপ্রায়কে অবদমিত করা কোনোভাবেই গ্রহণীয় হতে পারে না। সংবিধানে জনমানুষের অভিপ্রায় অবদমিত হলে পুনঃ পুনঃ ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের উদ্ভব ঘটবে। আর কোনোভাবেই জনঅভিপ্রায়কে অবদমিত করার দায় ক্ষমতাসীন ব্যতীত অপর কারো নয়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন