আঁখি নির্ঝরে হৃত আকুতি। (বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে)

লিখেছেন লিখেছেন বঙ্গবীর ২৩ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:২৮:৫১ রাত

চারিত্রিক অধঃপতন, স্বজাতীয় সংস্কৃতিকে অবহেলা বিজাতিয় সংস্কৃতিতে আসক্ত। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ১৭৫৭ সালে রাজ্যহারা হয় আমার জাতি। ইংরেজরা আমাদের ভালগুণগুলো কেড়ে নিয়ে শয়তানের সমস্ত কাজ আমাদের মগজে পুরে দিয়েছে। ফলে আমরা হারিয়েছে ধর্মীয় চেতনা, সংস্কৃতি ঐতিহ্য, সৎগুণ, এবং ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যবোধ।জুলুমে অতিষ্ট হয়ে সাইয়্যেদ আহমদ শহিদের নেতৃত্বে বিপ্লব করেছিল জনগণ। একেতো খালি হাতে, দ্বিতীয়ত সমচিন্তা সম্পন্ন লোক তৈরি করতে না পারা, তৃতীয়ত ব্শ্বিাষঘাতক্তা ও মূর্খ্য জনগণের অসহযোগিতা ও বিরোধিতায় বালাকোটে রক্তাক্ত ইতিহাস রচিত হয়। এই পরাজয় বৃটিশশোষণের চেয়েও এটম বোমার ক্ষতের মত ছিলো। জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে নুইয়ে গেলো। এভাবে তিতোমীরের বাঁশের কেল্লা, ফকির আন্দোলনে মানুষ পরিবর্তনের আশায় অকাতরে জীবন দিয়েছে। কিন্তু ফল হলো উল্টো। জাতির দুখের সীমা রইল না। জাতি আবার আশায় বুকবাঁধল ১৮৫৭ সালে।কিন্তু অসংগঠিত বিদ্রোহে নিজেদের ক্ষতি বেশি হলো। বিদ্রোহ কত নৃশংসভাবে দমন করেছিল তার প্রমাণ ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক। জাতি ভয়ে, হতাশায় এমনভাবে ঝিমিয়ে পড়ল আর জাগ্রত হয়নি। ইংরেজরা শুরু করল তাত্ত্বিক ষড়যন্ত্র। শুরু হলো ধর্মীয় বিভেদ, বিভক্ত হলো ওহাবী-সুন্নি, মাজহাবি ও লা মাজহাবী, মাজারী ও মাজার বিরোধী। মাইকে আযান দেওয়া, কোরান পাঠ, নবী (সঃ) নূরের তৈরি না মাটির। এমনকি ফরজ নামাজের পরে মুনাজাত জায়েজ নাজায়েজ। জাতি এমনভাবে বিতর্কে লিপ্তে হয়েছিল শুষণের কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে ফতোয়াবাজিতে সময় বেশি ব্যয় করতে লাগল। এর প্রভাবই ঢাকাতে জোয়াল্লি-দোয়াল্লিন মারামারি ও চরমোনাই ও দেওয়ানবাগীর মারামারির অসহনীয় দৃশ্য জাতি দেখেছে। সকল সমস্যা সমাধানের মূল মাজার বিবেচনা করে জাতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে মাজার পুজায় লিপ্ত হয়। দেড়শত বছর পরে এ জাতির কিছু আধুনিক ও প্রগতিশীল ব্যক্তি আজাদীর স্বপ্ন দেখালো। মানুষ আবার আশায় কোমর বেধে নামল আন্দোলনে এখানেও বিতর্ক পাকিস্তান পন্থী ও পাকিস্তান বিরোধী। মুসলীম লীগের আন্দোলনের স্লোগান ছিল ইসলাম, চিন্তা ও কর্মে ইঙরেজী সঙস্কৃতি ফলে অপরিপক্ক্ লোকদের হাতে স্বাধীনতা এসে গেল। জিন্নাহ মুসলমি লীগে ইসলামী আদর্শের চর্চা করেননি, বিধায় আদর্শিক লোক তৈরি হয়নি। এটাই পাকিস্তান ভাঙ্গার অন্যতম কারণ। মুসলমি লীগ বৃটিশি শোষন দেখা, ৪৭ এ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখা, চরম অনিশ্চয়তা ও কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন দেখা ও স্বাধীনতা পরবর্তী নতুন জেনারেশনের মধ্যে সমন্বয়, কষ্টার্জিত স্বাধীনতার মর্ম নতুনদের বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছিল।ব্যর্থ হয়েছিল ইসলামী আদর্শিক নাগরিক সৃষ্টিতে বরং চর্চা হয়েছিল মার্ক, লেলিন, মাওসেতু মতবাদ, পুজিবাদ। বাংলাভাষী অঞ্চলে আদর্শ সাহিত্যের অনুপস্থিতিতে চরম ইসলাম ও বাঙালী বিদ্বেষী বঙ্কিম ও রবীন্দ্র, হিন্দু কাহিনী সম্বলিত সাহিত্যের চর্চাই বেশি হয়েছিল। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন দপ্তরে, বিভিন্ন বাহিনীতে নাস্তিক মুরতাদ, পশ্চিমা চিন্তার লোকদেরকে দিয়ে পূর্ণ করেছিল। ফলে সৃষ্টি হয়েছে মর্মান্তিক ৭১। এতে শাসকবর্গের দোষই ছিল বেশি। ৭১ পরবর্তী মুজিব সরকারও বিভক্তিত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। (যদিও মরহুমের ঐকান্তিক বাসনা ছিল কিন্তু তার অনুপস্থিতে অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। তাকে জনগনের অবস্থা বুঝতে দেয়নি।) উপরন্তো এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে লাগল যাতে এই জাতি নতুন করে বিভক্ত হতে লাগল।ফলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য অনুসূচনা করতে লাগল। বাকাশালের বিরুদ্ধে গড়ে উঠল শক্তিশালী নকশাল / জাসদের বিপ্লবীবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে ৭৫এর ১৫ আগষ্ট সৃষ্টি হলো।যা ছিল অভশ্যম্ভাবী। স্বাধীনতার স্থপতির জন্য একফোটা চোখের পানি কেউ ফেলল না। জানাযা পড়ার কোনো মানুষ ছিল না। এদেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচলো ঠিকই শংকা বিরাজ করছিল সর্বত্র। জাতি যখন কোনো দিশা পাচ্ছিল না তখন ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাব হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তালাবদ্ধ রাজনীতি খোলে দেন। তিনি ড.কামাল ও আব্দুর রজ্জাককে পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে নিয়ে এসে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। সংবাদপত্রের উপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেন। একঘরে হয়ে যাওয়া দেশকে সব দেশের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেন।তিনিই প্রথম বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ খুলে দেন। (আরাফাত ময়দানে ‘জিয়া ট্রি’ তার সুসম্পর্কের প্রমাণ বহন করছে।) বেকার কর্মসংস্থানে জাতীয় যুব উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন।শিশুদের মননশীলতা ও সৃজনশীলতা বিকাশে নতুন কুড়ি প্রতিযোগিতা আরম্ভ করেন। প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক জোড়দারে সার্ক গঠন করেন। দেশে চাষাবাদ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল কাটা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। পীর বুজুর্গ আলেমগণের কাছে গিয়ে দোয়া নিয়েছেন। দেশের মানুষের মনে নতুন করে আশার ষঞ্চার হলো। সর্বত্র সুখের ও শান্তির বাতাস বইতে শুরু করছিল। কিন্তু স্থায়ী হয় নি। ‘র’ এর মাধ্যমে দেশীয় মিরজাফরের হাতে শহীদ হলেন। জাতির ভবিষ্যৎ আবার অন্ধকার হয়ে গেল। হাতুড়িয়ে হাতুড়িয়ে ৯০ পর্যন্ত এসে ক্ষনিকের জন্য আশার প্রদীপ জ্বলে উঠলো। কিন্তু তাত্ত্বিক ষড়যন্ত্রে জতীয়তাবাদী ও ইসলামী ঐক্য ফাঠল সৃষ্টি করে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় মসজিদ-মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদ নির্মূলের অভিযান। জনগণ ব্যালেট বিপ্লবে ভারতের তাবেদার সরকারকে হঠিয়ে দিল। ২০০১ সালে আবার ক্ষমতায় এলো দেশ প্রেমিক সরকার। সবকিছু গুছিয়ে দেশ এগিয়ে যাবার যাত্রা শুরু করতেই আবার দেশি-বিদেশি মিরজাফর ও শত্রুরা একজোট হয়ে এমন ষড়যন্ত্র শুরু করল যাতে দেশ একটি সময়ের জন্য নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। ষড়যন্ত্র এতই শক্তিশালী ছিল যা জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তি বুঝতেই পারেনি।ফলে এমন তাবেদার শক্তি ক্ষমতায় এলো যারা ক্ষমতার জন্য দেশকে বিকিয়ে দিতে মোটেই দিধা করে না। অত্যাচারে হিটলার মুসোলীনীকেও হার মানাচ্ছে। জনগণ যেহেতু তাদের চায় না এই জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা পাল্টিয়ে ফেলল। নাস্তিক মুর্তাদ তার সহযোগী। মুসলমানরা বেইমান ও অমুসলিমরা আস্তাভাজন। কোরআনের আইনকে (উত্তরাধীকার) পরিবর্তন ও ধর্মনিরপক্ষতা নামক কুফরী মতবাদ চাপিয়ে দিল। আল্লাহ ও রাসুল, কুরআনকে গালী দিয়েছে এমন লোককে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহিদ’ আখ্যায়িত করে। বিদেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে শ্রমিক যাওয়াও বন্ধ করলেন। শেয়ার বাজারের ৩০ লাখ মানুষ ফকির। ডেস্টনির ধ্বংস, গ্রামীণ ব্যাংক ও ধ্বংসের পথে। ডেপ্লাভার্স ও ব্যবসায়ীরা হায়, হায় করছে।হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক কেলাঙ্কারি, রানা প্লাজা সাত খুন ও পিনাক আতংকে সাধারণ অসাধারণ সবাই অস্থির। রেলপথ, সড়কপথ, জলপথ সবখানে আতংক বিরাজ করছে। এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেই নিরবিচারে গুলি করে মানুষ মারার জন্য পুলিশ ও র্যা বকে প্রমোশন দিচ্ছে। ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে তা মতপ্রকাশের ও বাকস্বাধীনতা। আর সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে দেশদ্রোহী, রজাকার, পিয়ারে পাকিস্তান ইত্যাদি বলে কটাক্ষ ও গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর, ককটেল ও বোমা রাখার অযুহাত দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোওয়ানা জারি করে। সব মিলিয়ে জাতি এমনভাবে বিভক্ত হয়েছে আল্লাহ না করুন কোন দেশ যদি আগ্রাসন চালায় রাগে ক্ষোভে জনগন সরকারের পাশে দাঁড়াবে বলে মনে হয়না। এসব বুঝেই সীমান্তে মানুষ ও বিজিবি হত্যা শুরু করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ। দেশের মানুষ এসব সমর্থন করে না। তার প্রমাণ বিভিন্ স্থানীয় নির্বাচনে দিয়েছে। যেহেতু সরকার বুঝেছে জনগন তাকে চায় না। এজন্য কৌশলে বিরুধী দলকে বাইরে রেখে ভোটারবিহীন নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা আকড়ে রেখে ৪০ সাল পর্যন্ত থাকার আশা করছে। অর্থাৎ ততদিনে একনায়কত্ব কায়েম হয়ে যাবে। এই জন্য ভয়ে আছি তাই একটি কার্যকর বিপ্লব প্রয়োজন। জনগন লড়তে চায়, প্রমাণ হেফাজতের সমাবেশ সমূহ। জনগণ মরতে চায় প্রমাণ সাঈদী রায় পরবর্তী অবস্থা। কিন্তু সমস্যা নেতৃত্বে। যারা রিভোল্ট করতে পারবে তারা জেলে (জামাত নেতৃত্ববৃন্দ)আর যারা বাইরে আছে তারা কেউ দালাল, কেউ গলাবাজ, কেউ হিজড়া / কাপুরুষ/ ভীতু।ব্যর্থ বিএনপি কত আন্দোলনের ইস্যু হাতছাড়া করেছে। যতগুলো আন্দোলন করেছে তার ফসল তুলেছে সরকার।বিএনপির নেতাদের কারণে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি সফল হয়নি। যাদের উপর দায়িত্ব ছিল তারা আত্মগোপনে ছিলেন ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত, এমনকি মোবাইল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এদেশের মানুষের হৃদয়তো সেদিনই ভেঙ্গেগেছে। এখন শুনা যাচ্ছে তুমুল আন্দেলনের মাধ্যমে সরকার পতন করিয়ে ছাড়বে।এটা ব্যর্থ প্রেমিকের কথার মতো যে, প্রেমিকার বিয়ের দিন কিছু করতে পারেনি অথচ হুমকি দিচ্ছে স্বামী ব্যাটা কী করে আমার প্রাণের পিয়াকে স্পর্শ করে দেখব। অথচ তার প্রিয়া তখন সিঙ্গাপুর হানিমুনে।বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের পরে আন্দোলনের ঘোষনা দিয়ে এখন বলছে কুরবানির ঈদের পরে, তখন বলবে পিএসসি, জেএসিস পরীক্ষার পর, এরপর এসএসসি পরীক্ষার পর। এইভাবে গত ৫ বছর দেখলাম। তাই এদেশের মানুষ এখন চরম হতাশ। সবাই এখন বুঝে গেছে এই বিরোধী দল কিছু করতে পারবে না। সবাই ইয়া নফসী ইয়া নফসী করছে। আব্দুল মুত্তালিব যেমন আব্রাহার অনিষ্ট হতে কাবাঘর রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আজ আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আখিঁ নির্ঝরে হৃত আকুতি করছি এইভাবে “হায় আল্লাহ!এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের করার কিছুই অবশিষ্ট নেই। তোমার সাহায্যই আমাদের শেষ ভরসা। আমাদের অবহেলা ও ব্যর্থতার কারণে অন্তত কাশ্মির, ফিলিস্তিন ও সিকিমের ভাগ্য আমাদের জন্য নির্ধারিত করোনা।”

বিঃদ্রঃ যা বলা যাবে না (১) এ ‌‌‌‌‌‌‌‌‌(‌যিশু) শব্দটির জায়গায় (গড্) হবে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। ভুল ধরে দেওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

বিষয়: রাজনীতি

১১৮৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257532
২৩ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫৪
আবু সাইফ লিখেছেন :
হে আল্লাহ!এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের করার কিছুই অবশিষ্ট নেই। তোমার সাহায্যই আমাদের শেষ ভরসা। আমাদের অবহেলা ও ব্যর্থতার কারণে অন্তত কাশ্মির, ফিলিস্তিন ও সিকিমের ভাগ্য আমাদের জন্য নির্ধারিত করোনা।”


আ মী ন Praying Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File