পৃথিবীর যত সুখ !!
লিখেছেন লিখেছেন স্পর্শের বাইরে জাহিদ ০৭ জুন, ২০১৪, ১২:৪৫:৪২ দুপুর
‘অ্যাই, শুনছো? অ্যাই! ঘুম
ভাঙছে না বুঝি?’
নীলার কানের কাছে প্রায়
ফিসফিস
করে পাঁচ মিনিট
ধরে ডেকে যাচ্ছে অনিক।
কিন্তু ভালোবাসা মাখা সেই
ডাক
যেন
কানেই যাচ্ছে না নীলার।
শরীরটা ভালো না তার। তাই
হঠাৎ
করে তাকে ডেকে তুলতে চাচ্ছে
না অনিক।
মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে আরেকবার
ডাকায় আস্তে করে চোখ
মেললো নীলা।
অনিকের মুখে হাসি ফুটলো।
প্রতিদিন
সকালে নীলার ঘুম থেকে ওঠার
দৃশ্যটা সে কখনোই মিস
করে না।
কেন যেন
এই দৃশ্যের মাঝেও অনেক
মানসিক
শান্তি খুঁজে পায় সে।
‘আমাকে যে অফিসে যেতে হবে!’
বলল
অনিক।
‘ওহ! কয়টা বাজে?’
‘প্রায় সাতটা।’
‘ও।’
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল
অনিকের।
নীলা কিছুই বললো না। ওর
শরীরটা আসলেই
ভালো না। অন্যান্য দিন এমন
সময়
নীলা ব্যস্ত
হয়ে দৌড়াদৌড়ি করে অনিকের
জন্য
নাস্তা রেডি করে। অনিকও
যতোটা সম্ভব
নীলাকে কাজে সাহায্য করে।
কিন্তু
আজ
নীলার শরীর খারাপ
বলে তাকে আর
ডাকেনি অনিক। যাবার
মূহুর্তে বলে যাওয়ার জন্যই
ঘুমটা ভেঙ্গেছে নীলার।
‘আমার
আজকে অফিসে যাওয়া একদমই
উচিৎ
নয়, কিন্তু আজ এমনই কিছু
কাজ
আছে যে না গিয়েও পারছি না,’
মন
খারাপ
করে কৈফিয়তের সুরে নীলার
কানের
কাছে বললো অনিক।
নীলা তার দিকে না তাকিয়েই
ক্ষীণ
কণ্ঠে বললো, ‘সমস্যা নেই,
তুমি যাও।’
তার দিকে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থাকলো অনিক। আর
দুই-
এক মিনিট,
তারপরই নীলা পুরোপুরি সজাগ
হয়ে উঠবে।
সেই দুই মিনিট সময় পার
করলো সে নীলার
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে।
‘শোনো,
আমি নাস্তা তৈরি করে গেছি,
তুমি ঠিক এক ঘণ্টা পর আটটায়
বিছানা থেকে উঠবে।
ফ্রিজে ব্রেড
রাখা আছে।
আমি জেলি দিয়ে রেখেছি,
তুমি খেয়ে নিও। আর
খাওয়া শেষে পুরো দুই
গ্লাস পানি খাবে।
পানি খেয়ে সোজা বিছানায়
যাবে।
কোনো কাজের
বাহাদুরি দেখাতে হবে না,
বুঝেছো?’ প্রায় যেন
আদুরে ধমক
দিলো অনিক।
তার এই আচরণের
সঙ্গে পরিচিত
নীলা।
সে একটু হেসে বললো,
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
অনিক বলে চললো, ‘দুপুরের
ভাতও
আমি রান্না করে রেখেছি।
তরকারি কাল
রাতেরটাই আছে, আর রান্নার
দরকার
হবে না। আমি ফোন
করে তোমাকে ডেকে দিবো যদি
ঘুমিয়ে
থাকো। দুপুরে কিন্তু অবশ্যই
খেয়ে নিবে সোনা। তোমার
শরীরটা ভালো না।
না খেলে কিন্তু
শরীর
আরো খারাপ হবে।’
খাওয়া নিয়ে বরাবরই নীলার
উপর
জবরদস্তি করতে হয়
অনিককে।
আজ
সে বাসায় থাকতে পারছে না,
নীলার
শরীরও খারাপ, তাই
নীলাকে বুঝিয়ে বলছে অনিক
যাতে মেয়েটা খাবার
ফাঁকি না দেয়
কোনোভাবেই।
‘আর শোনো, তোমার ঘুম
না আসলে টিভির
রিমোট তোমার
কাছে রেখে গেলাম,
টিভি দেখো। গান
শুনতে ইচ্ছে করলে ল্যাপটপও
রেখেছি খাটের পাশেই।
স্পিকারে লাইন
দেয়া আছে ল্যাপটপ থেকেই গান
চালাতে পারো।
তবে কম্পিউটারের
সামনে বসে থাকবে না কিন্ত।
তাহলে শরীর আরও খারাপ
করতে পারে।
আর কোনো কাজ
করতে যাবে না।
এমনকি খাওয়ার পর
মাতব্বরি করে প্লেটটাও
ধুয়ে রাখতে হবে না।’
নীলা বললো, ‘আমাদের কি আর
কাজের
লোক
আছে নাকি যে সে এসে ধুয়ে
রাখবে?’
‘কাজের লোক থাকা লাগবে না।
আমিই
এসে ধুয়ে রাখবো। তোমার
শরীর
খারাপ
তুমি এগুলো ছোঁবেও না। ঠিক
আছে?’
মাথা নাড়লো নীলা। অনিক
বলে চললো,
‘তোমার
খরগোশগুলোকে খাবার
দিয়ে রেখেছি। ওগুলো নিয়েও
আপাতত
চিন্তা করতে হবে না। কেউ
এলে দরজা খোলার দরকার
নেই।
কেউ
আসবে না আজ। পরিচিত কেউ
আসলে দরজা না খুললে ফোনই
করবে। ফোন
রিসিভ করলেই বুঝতে পারবে।
বেল
শুনেই
দরজার দিকে দৌড় দেবে না।
বুঝেছো?’
এবারও মাথা নাড়লো নীলা। তার
ঠোঁটের
হাসিটা নজর
এড়ালো না অনিকের।
অনিক
নীলার গালে ছোট্ট একটা চুমু
খেয়ে বললো,
‘এবার তাহলে আমি যাই
সোনামণি।
তুমি কিন্তু ঠিক
যেভাবে বলেছি সেভাবে থাকবে।
কোনো কাজে হাত দেবে না।
খুব
সাবধানে থাকবে। ঠিক আছে?’
নীলার ঠোঁটটা নড়লো।
কী বললো ঠিক
শুনতে পেলো না অনিক। তার
ঠোঁটের
সামনে কান
পেতে নীলাকে আবার
জিজ্ঞেস করতেই
নীলা বললো,
‘যাই না,
বলো আসি।’
হাসলো অনিক।
মেয়েটা সবসময়ই
তার এই
ভুলটা ধরে। ‘আচ্ছা জান আসি।
এবার
হয়েছে?’
হাসিমুখেই এবার
মাথা নাড়লো নীলা।
অনিক তার কপালে একটা চুমু
খেয়ে উঠে দাঁড়ালো। তার
সত্যিই
আজ মন
সায়
দিচ্ছে না নীলাকে এভাবে একা
রেখে
অফিসে যেতে। কিন্তু কিছু
করার
নেই, আজ
তাকে যেতেই হবে। ভয়াবহ
কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে
আজকের
অফিস
এড়ানোর কোনো সুযোগ
নেই।
শেষবারের মতো নীলার
দিকে তাকিয়ে বিষণ্ন
মনে বাসা থেকে বের
হলো অনিক।
*
সকাল ৮টা।
নীলার ফোনটা বাজছে। তিনবার
রিং হওয়ার পর রিসিভ
করলো নীলা।
ওপাশ থেকে রাস্তার গাড়ি আর
হর্নের শব্দ
ভেসে এলো প্রথমেই। তারপর
শোনা গেলো অনিকের গলা,
‘নীলা,
উঠেছো সোনা?’
‘উমম,’ স্পষ্ট করে কিছু
বললো না নীলা।
তবে অনিকের
বুঝে নিতে অসুবিধা হলো না।
‘শোনো জান,
এক্ষুণি উঠে পড়ো। মুখ
ধুয়ে ফ্রিজ থেকে ব্রেড খাও
কয়েকটা।
তারপর দু’গ্লাস পানি খাও।
তারপর
ওষুধটা খেয়ে নেও।
আমি তোমার
বালিশের
নিচেই ওষুধের
পাতাটা রেখে এসেছি।’
‘আচ্ছা উঠছি,’ ঘুম
জড়ানো কণ্ঠে বলল
নীলা।
‘আচ্ছা উঠছি না সোনা,
এক্ষুণি উঠো।
ওষুধটা সময়মতো খেতে হবে না
?
উঠে পড়ো।
আমি থাকলে তো আমিই
খাইয়ে দিতাম।
আমি নেই বলে কি একটু কষ্ট
করে ওষুধটা খাবে না?’
‘আচ্ছা যাচ্ছি।’
অনিকের খুশি হওয়াটাও যেন
শুনতে পেলো নীলা। খুব ছোট্ট
ছোট্ট
ব্যাপারে অনিক খুব খুশি হয়।
এগুলো নীলার
ভালো লাগে, অবাকও লাগে।
তবে ভালোই
বোধহয় বেশি লাগে। তাই
খুশি হওয়াটা বুঝতে পেরেই যেন
শোয়া থেকে উঠলো নাস্তা
করতে।
মুখ ধুয়ে ফ্রিজ
খুলে ব্রেডগুলো দেখতে পেলো
নীলা।
হাতে নিয়ে আনমনেই
হেসে উঠলো।
পাউরুটিগুলোর উপর
জেলি এতো মসৃণভাবে
মাখিয়েছে অনিক
যেন কোনো মেশিন
দিয়ে লাগানো। অথচ
নিজে খায় সময়
যে কীভাবে জেলি লাগায়
অনিক!
খাওয়ার সময় খুব
একা লাগলো নীলার।
প্রতিদিন সে আর অনিক
একসঙ্গে নাস্তা করে।
প্রতিদিনই
অনিক
একশো একটা বাহানা দেখিয়ে
নিজের
শেষ
পিসটা নীলাকে খাইয়ে দেয়।
ভাবটা দেখায় সে অনেক
ভালোবাসে বলে নীলাকে এভাবে
খাওয়ায়।
কিন্তু নীলার মনে হয় অনিক
খাওয়া ফাঁকি দেয়ার জন্যই
এটা করে।
অনেকবার প্রতিবাদ করেও
কোনো লাভ
হয়নি। ছেলেটা এতো আদর
করে সাধে,
না খেয়েও পারে না নীলা। অথচ
অন্য
কারো সাথে এতোটা মিশে কথা
বলতে পারে
না সে। যেন কেবল নীলার সাথেই
সে এতো দুষ্টুমি করে, অন্য
কারো সঙ্গেই
পারে না।
ফোনের দিকে চোখ পড়তেই
ভাবলো,
কী ঝামেলার মধ্যে থেকে ফোন
করেছে অনিক কে জানে।
হয়তো বাসে ঝুলে দাঁড়িয়ে
ছিলো।
গাড়ি কেনার ইচ্ছে থাকলেও
সামর্থ্য
হয়নি। তাই আর দশজন মানুষের
মতোই
তাকে যাতায়াত করতে হয়।
তা যে কী ভয়াবহ
অবস্থা সেটা নীলার
অজানা নয়। এতোকিছুর
মাঝেও
কীভাবে অনিক ফোন করলো,
কে জানে!
*
দুপুর ১টা।
এরই মাঝে আরও দু’বার ফোন
করেছে অনিক।
একবার নীলা ঘুমিয়ে ছিল।
আরেকবার
টিভি দেখছিল। কিন্তু ঠিক ১টায়
অনিক
ফোন করলো যখন
নীলা রান্নাঘরে সিঙ্কের
সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছে
প্লেটগুলো ধুয়ে
ফেলবে কি না।
নীলার শরীরটা খারাপ লাগছিল
বলে রাতে খাওয়ার পর
প্লেটগুলো আর
ধুয়ে রাখা হয়নি।
নীলা না করলে অনিকই
সাধারণত এসব কাজ
করে ফেলে।
কিন্তু
নীলার শরীর রাতে আরও
বেশি খারাপ
ছিল বলে অনিক অন্য কাজ বাদ
দিয়ে নীলার পাশেই বসে ছিল।
কখন
ঘুমিয়েছে জানে না,
মাঝরাতে কেবল
একবার ঘুম
ভেঙ্গে নীলা দেখেছে অনিক
নীলার একটা হাত
জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
‘কী করছো নীলা?’
‘কিছু না।’
‘শুয়ে আছো?’
‘না।’
‘তাহলে কোথায়?’
‘রান্নাঘরে।’
‘খিদে পেয়েছে?’
‘হ্যাঁ, আমি খেয়ে নিয়েছি।
তুমি কিন্তু
ভাত নরম করে ফেলেছো।’
‘ওহ তাই নাকি? সরি!
খেতে পেরেছো?
নাকি বেশি নরম
হয়ে গিয়েছিলো?
আমিও
যে কেন ভাত
বসিয়ে ব্রেডে জেলি লাগাতে
গিয়েছিলাম!’
অনিককে অপ্রস্তুত
হতে দেখে হাসতে লাগলো নীলা।
‘আরে বোকা ভাত ঠিকই আছে।
আমি মজা করছিলাম তোমার
সাথে। কিচ্ছু
বুঝে না। বুদ্ধু।’
অনিকও লাজুক হাসি হাসলো।
নীলাকে হাসতে শুনে তার খুবই
ভালো লাগছে। মেয়েটার
শরীরের
অবস্থার
উন্নতি ঘটেছে তাহলে।
*
দুপুরের পর থেকে আরও
পাঁচবার
ফোন দেয়ার
পর ছয়বারের বেলায় নিজেই
ঘরে এসে উপস্থিত
হলো অনিক।
দরজা খুলে দিলো নীলা।
প্রথমেই
তাকে জিজ্ঞেস
করলো অনিক,
‘কেমন
আছো? তোমার শরীরটা কেমন
এখন?’
গায়ে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর
আছে কি না।
নীলা বললো, ‘তুমি যা শুরু
করেছো, রোগ
এসে শান্তি পায় নাকি?
চলে গেছে।’
হাসলো অনিক। বলল,
‘ভালো হয়েছে। রোগ
দুনিয়ার আর মানুষ পেলো না,
না?
আমার
নীলামণিকেই ধরতে হবে?
ঝেঁটিয়ে বিদায়
করে দিবো রোগকে!’
‘তুমি আমাকে ঝেঁটিয়ে বিদায়
করবে?’
প্রায়
কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে বললো
নীলা।
‘আরে না জান,
তোমাকে কি আমি ঝেঁটিয়ে বিদায়
করতে পারি? রোগকে বিদায়
করবো।
তুমি তো আমার কাছেই থাকবে।
তুমি আবার কই যাবে?’
যেমনি হঠাৎ করে কাঁদার
ভঙ্গি করেছিল,
তেমনি হঠাৎ করেই
হেসে নীলা বললো,
‘কোথাও না।’
নীলার এই ছেলেমানুষী অনিকের
অনেক
ভালো লাগে।
*
রাতে খাওয়ার পর।
বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছে নীলা।
অনিক
কিছুক্ষণ ল্যাপটপে কাজ
করলো।
নীলা শুতেই সে ল্যাপটপ
রেখে নীলার
দিকে মনোযোগ দিলো।
জিজ্ঞেস করলো,
‘এখন তোমার শরীর কেমন?
ভালো লাগছে?’
‘হ্যাঁ, মনে হচ্ছে এখন
আমি সুস্থ।’
‘মনে হলেই চলবে না। ওষুধ
দিয়েছে ডাক্তার, কোর্স শেষ
করতে হবে।’
‘অ্যাঁ, আমি ওষুধ খাবো না।’
‘খাবে সোনা, হাঁ করো।’
‘না করবো না।’
‘না করলে কিন্তু আজ
আমি নিচে ঘুমাবো।’
‘আমিও নিচে ঘুমোবো।’
‘জ্বী না, তুমি আমার
সাথে শুতে পারবে না।
আমি ছাদে গিয়ে ঘুমাবো।’
‘আমিও তোমার
সাথে ছাদে গিয়ে ঘুমাবো,’
খুশি খুশি গলায় বললো নীলা।
‘ছাদে গেলে তোমাকে ভ’তে
ধরবে।’
‘ইশ, ধরবে না। ভ’ত
ধরতে আসলে তুমি আছো না?’
‘আমি কী করবো?’
‘তুমি আমাকে ভ’ত
থেকে বাঁচাবে,’
বলে অনিককে জড়িয়ে ধরলো
নীলা।
‘সেটাই তো করছি। নাও
ওষুধটা খাও।’
হেরে গিয়ে চুপচাপ কিছুক্ষণ
অনিকের
দিকে তাকিয়ে রইলো নীলা।
চুপচাপ
ওষুধটা খেয়ে নিয়ে অনিকের
বুকে মাথা রাখলো। ‘অনিক,
তুমি আমাকে এতো
ভালোবাসো কেন?’
‘কারণ, তুমি শুধু আমার।’
‘তুমি এতো চিন্তা করো কেন
আমাকে নিয়ে?’
‘তাহলে কাকে নিয়ে চিন্তা
করবো?
আমার
তুমি ছাড়া আর কেউ তো নেই।
যারা আছে,
তারা তো আমাকে তোমার
মতো করে বুঝে না।’
‘হুম।’
‘আর তোমার শরীর খারাপ।
আমি তো অফিসে গিয়েছিই,
কিন্তু
মনটা সারাদিন পড়ে ছিল
তোমার
কাছে।
কেবলই মনে হচ্ছিল কখন
তোমাকে দেখবো।’
নীলার চুলে বিলি কাটতে শুরু
করলো অনিক।
নীলা বললো, ‘আজ আমাদের
বিয়ের
কতোদিন হয়ে গেছে, তাই না?’
‘হুম। অনেক বছর।’
‘তুমি কি আজও
আমাকে আমাদের
সেই
স্টুডেন্ট লাইফে যেমন
ভালোবাসতে, তেমন
ভালোবাসো অনিক?’
‘তোমার কী মনে হয়?’
জবাব দিলো না নীলা। সে জানে,
অনিক
তাকে খুব ভালোবাসে। বিয়ের
এতোগুলো বছর পরও আজ
তাদের
কোনো সন্তান নেই।
ভবিষ্যতেও
না হওয়ারই
সম্ভাবনা বেশি। অবশ্য আর
ভবিষ্যত
কীসের। তাদের জীবনকালও
প্রায়
শেষই
হয়ে আসছে। অনিক সবসময়ই
বলে, তার
জীবনের সবচেয়ে বড়
প্রাপ্তি এই
নীলা।
কথাটা যে সত্যি তা নীলা জানে।
হয়তো তার জীবনেরও শ্রেষ্ঠ
প্রাপ্তি তার
স্বামী, অনিক। কিন্তু
সে কখনো এটা বলেনি।
মেয়েরা কেন যেন
মনের কথা চেপে রাখতেই
বেশি পছন্দ
করে।
নীলা জানে অনিক
তাকে ভালোবাসে।
তারা বিবাহিত দম্পতি।
এতোগুলো বছর পর
এখনো নীলার প্রায়ই মনে হয়
যেন
তারা সবে প্রেমে পড়েছে।
যেমনটা ঠিক
এখন তার মনে হচ্ছে। অনিকের
মনের
কথা শুনতেই যেন তার
বুকে নিজের
কান
আরও চেপে ধরলো নীলা।
আর অনিক তখন
ভাবলো নীলা ঘুমিয়ে পড়েছে।
সে হেডফোন কানে লাগিয়ে তার
প্রিয়
গানগুলোর একটা শুনতে শুরু
করলো।
গানটা তার প্রিয়, কারণ
কথাগুলো যেন
ঠিক তার মন থেকে আসা।
নীলার
মাথায়
হাত বুলাতে বুলাতে চোখ বন্ধ
করে নিজের
মনের কথাগুলো নিজেই
শুনতে থাকলো অনিক।
পৃথিবীর যত সুখ, যত
ভালোবাসা,
সবই যে তোমায় দেব, একটাই
এই
আশা,
তুমি ভুলে যেও না আমাকে,
আমি ভালোবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ
হৃদয়ে রাঙানো
ভালোবাসা নেবে তুমি,
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে,
সুখেতে জড়াবো আমি।
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব হেসে,
এক পলকে পৌঁছে যাব,
রুপকথারই দেশে।
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ।।
বিষয়: সাহিত্য
১০৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন