২য় পর্ব-কিয়ামুল লাইল, তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ (সংক্ষিপ্ত পোষ্ট)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১১ জুন, ২০১৬, ০৩:১৩:৫৮ দুপুর



তারাবীহ, তাহজ্জুদ এবং রাতের যে কোন নফল নামায এর অন্তর্ভূক্ত। যে সকল আমলের মাধ্যমে মু’মিন ব্যক্তি রামাদান মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে, তন্মধ্যে কিয়ামুল লাইল সবচেয়ে উত্তম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«أَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ»

‘‘ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হচ্ছে রাতের নামায”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২৮১২)

রাতের নামাযের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন,

﴿وَعِبَادُ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلَّذِينَ يَمۡشُونَ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ هَوۡنا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلۡجَٰهِلُونَ قَالُواْ سَلَٰما ٦٣ وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدا وَقِيَٰما ٦٤﴾ [الفرقان: 63-64]

‘‘রহমানের বান্দাহ তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খ ব্যক্তিরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’ এবং যারা রাত্রিযাপন করে তাদের পানলকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে’’। (সূরা আল-ফুরকান: ৬৩-৬৪)

আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

﴿كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨﴾ [الذاريات: 17-18]

‘‘রাতের কিয়দংশে তারা নিদ্রা যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।’’ (সূরা আয-যারিয়াত: ১৭-১৮)

মূলত: কিয়ামুল লাইল ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের নিয়মিত আমল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«لَا تَدَعْ قِيَامَ اللَّيْلِ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَدَعُهُ وَكَانَ إِذَا مَرِضَ أَوْ كَسِلَ صَلَّى قَاعِدًا»

‘‘কিয়ামুল লাইল ত্যাগ করো না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ত্যাগ করতেন না। অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা বোধ করলে তিনি বসে নামায পড়তেন।’’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৬১১৪ ও সুনান আবি দাঊদ, হাদীস নং ১৩০৭)।

রামাদানে কিয়ামুল লাইলের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه»

‘‘যে ব্যক্তি রামাদান মাসে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় (রাতের নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৫ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮১৫)

সুনানের গ্রন্থসমূহে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَامَ مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَة»

‘‘যে ব্যক্তি ইমাম নামায থেকে বিরত হওয়া পর্যন্ত ইমামের সাথে (কিয়ামুল লাইলে) দাঁড়াবে, তাহলে তার এ আমল রাত্রিভর কিয়ামের সমতুল্য হিসাবে লিখা হবে।’’ (সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬ ও সুনান আন-নাসাঈ, হাদীস নং ১৬০৫)

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, রামাদানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামায কেমন ছিলো? তিনি বললেন,

مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

“রামাদানে এবং রামাদান ব্যতীত অন্য সময়ে এগার রাকআতের বেশী তিনি পড়তেন না।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৯৬ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৫৭)

চার মাযহাবের সকল ইমামের ঐক্যমতে এই হাদিসটি তাহাজ্জুদের ব্যপারে। কারণ রামাদানের বাহিরে তো তারাবীহের নামায নেই। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে ১২৮০ হিজরী পর্যন্ত ২০ রাকাতের ব্যপারে কোন মতভেদ উম্মতের মধ্যে ছিল না। প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের সকল ইমামদের নিকট ২০ রাকাতই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

কিন্তু কিয়ামত যত নিকট আসছে, উম্মতের মাঝে ইখতিলাফ ও মতানৈক্য বেড়েই চলছে। সাধারণ নফল বিষয় নিয়েও কাঁদা ছোড়াছোড়ি হচ্ছে।

যাই হোক এ ব্যপারে পক্ষে বিপক্ষে মতানৈক্য থাকায় বেশি আলোচনায় গেলাম না। তবুও যারা একটু বিস্তারীত জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য অনলাইনে অনেক তথ্য উপাত্ত রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা সবার আমল কবুল করুক। সকলকে সত্য পথের অনুসারী করুক। নিয়্যাত ও আমল অনুযায়ী সাওয়াব দান করুক। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

২০৩০ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371709
১১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। ধন্যবাদ শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য।
১১ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৫
308486
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খায়ের, অনেক অনেক শুকরিয়া।

371715
১১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আংকেলজ্বী। তারাবী ও তাহাজ্জুদসহ সকল আমল ঐক্যমতের ভিত্তিতে আল্লাহপাক সকলকেই করার নসীব দান করুণ।

সুন্দর উদ্যোগ মাশাআল্লাহ। আশাকরি অনেকেই উপকৃত হবেন। জাজাকাল্লাহু খাইর।
১১ জুন ২০১৬ রাত ১০:৩৪
308487
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ শ্রদ্ধেয়া খালাম্মুনি।

আপনার দোয়া মহান প্রভূ কবুল করুক।

وانت فجزاك الله يا خالتي

371726
১১ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০১
শেখের পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৬ রাত ১০:৩৫
308488
আবু জান্নাত লিখেছেন : অনেক শুকরিয়া শেখের বাচ্চা চাচাজান। Good Luck Good Luck
371740
১১ জুন ২০১৬ রাত ১১:৩৯
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।
১২ জুন ২০১৬ রাত ১২:৩৩
308501
আবু জান্নাত লিখেছেন : রামাদানে ইবাদাত ও সংযম নিয়ে ব্যস্ত আছেন বুঝাই যাচ্ছে।

আপনাদের দোয়ায় এই হতভাগাকেও শামিল রাখবেন। অনেক অনেক শুকরিয়া।

371743
১২ জুন ২০১৬ রাত ১২:১৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : তাহাজ্জুদ বা তারাবিহ নিয়ে বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে। রাতের সালাত দুই দুই রাকাত করে আদায় করতে বলা হয়েছে। ততে ২০ হোক ৪০হোক ব্যাপার না। কিন্তু সুন্নাহ হল রসূল(সাঃ) এই সালাতের কিরাত দীর্ঘ করতেন। দ্রুত আদায় করতেন না। আমরা রাকাতের সংখ্যা বাড়ানোর তালে আছি এবং ঝগড়ায় লিপ্ত। জাজাকাল্লাহ
১২ জুন ২০১৬ রাত ১২:৪১
308502
আবু জান্নাত লিখেছেন : রাসূল সাঃ কিরাত দীর্ঘ করতেন, তা অবশ্যই যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে হবে।

২০ রাকাতের ব্যপারটিও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মত নয়। হযরত ওমর রাঃ উবাই ইবনে কা'ব রাঃ কে ইমাম বানিয়ে যে ২০ রাকাত শুরু করেছিলেন, বড় বড় সাহাবাদের কেউ দ্বিমত করেননি। স্বয়ং আট রাকাতের বর্ণনাকারী আম্মাজান আয়েশার ঘরের দরজায়-মানে মসজিদে নববীতে ৪০ বছর পর্যন্ত জীবিত আয়েশা রাঃ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেও ২০ রাকাত পড়তে পড়াতে দেখেছিলেন। কোন দিন দ্বিমত করেননি। ওসমান রাঃ আলী রাঃ এর মত সাহাবীরাও কখনো দ্বিমত করেননি।

বর্তমানে দ্বিমত কারীরা কত বড় কামেল, আল্লাহই ভালো জানেন।

وانت فجزاك الله خيرا يا اخي المحترم

১২ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৪৯
308512
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমি দ্বিমত করছিনা। বরং এটা নিয়ে বিতর্ককে এড়িয়ে চলি। তবে আয়েশা(রাঃ)বোধহয় ৪০ বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন না।....Happy
১২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:১৫
308520
আবু জান্নাত লিখেছেন : হযরত আয়েশা রাঃ এর বিস্তরীত জিবনী আমারও জানা নেই, তবে এতটুকু জানি যে, হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, এটি সম্ভবত ৩৫ হিজরীতে।

গত কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের একজন দায়ী'র বয়ানে শুনলামঃ উনি রাসূল সাঃ এর ইন্তেকালের ৪০ পর পর্যন্ত জিবিত ছিলেন। الله اعلم
১২ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৭
308548
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম সমস্যা নেই। কে কত বছর জীবিত ছিলেন তাতে কিছু এসে যায় না। কারন আমাদের কাছে আদর্শই প্রধান
১৩ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:২৭
308579
আবু জান্নাত লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, জাযাকাল্লাহ।
371753
১২ জুন ২০১৬ রাত ০৩:২৫
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
চমৎকার পোস্ট ভাই। জাযাকাল্লাহু খাইর, দ্বি-মতের বিষয়টিকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য শুকরিয়া।
১২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:২৬
308521
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ শ্রদ্ধেয়া বড় আপি। রামাদানের আমলগুলো ধারাবাহিক সংক্ষেপে বর্ণনা করতে গিয়ে এ বিষয়টিও সামনে এসে গেল।
আসলে আমাদের দূর্ভাগ্যই বলতে হবে। বিশেষ বিশেষ ইবাদাতের মুহুর্তগুলোতে আমাদেরকে হাজারো দ্বি-মতের সম্মুখীন হতে হয়। এতে করে ইবাদাতের সময় অন্তরে অনেকটা ওয়াসওয়াসা বিরাজ করে।

আল্লাহ তায়ালা উত্তম হেফাজতকারী।

শুকরিয়া।

371766
১২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫২
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, হুজুর এটাকে যদি সংক্ষিপ্ত পোষ্ট বলা হয়, তাহলে বিস্তারীত পোষ্ট কাকে বলে???
ইনশাআল্লাহ এবার শেষ ১০ দিনের কিয়ামুল লাইল নিয়মিত পড়বো। ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দরভাবে বিষয়টা তুলে ধরে আমার মত অধমদের বুঝানোর জন্য।
১৩ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
308581
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, এই মিঁয়া! হুজুর বলবেন না, কইলাম। না হলে কিন্তু আমিও আপনাকে একটা কিছু বলতে আরম্ভ করবো, তখন ঠেলায় পড়বেন।

সংক্ষিপ্ত পোষ্ট এ জন্য যে, এতে আমার কোন মতামত নেই, শুধু কুরআন হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমলের উদৃতি দিয়েছি, তাই।

ইন শা আল্লাহ, আলমোল্লা মসজিদে আসলে হয়তো সাক্ষাত হবে। এখানে ইমামদের কিরাত যে কি মধুর! একদিন পড়লেই বুঝবেন। এখানে তাহাজ্জুদ মাত্র ১ঘন্টায় ৮+৩ এগার রাকাত পড়া হয়। কুনুতে নাযেলায় না কেঁদে পারবেন না। Crying Crying

১৪ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৬
308677
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ, এবারের কিয়ামুল লাইল তাহলে আলমোল্লা মসজিদেই পড়বো। ধন্যবাদ আপনাক;
371893
১৪ জুন ২০১৬ রাত ০৩:৪৮
ধ্রুব নীল লিখেছেন : যাযাক আল্লাহ খইর।
১৪ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৬
308759
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আন্তা ফাজাযাকাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File