ইতিহাসের পাতায় ১১মে কোরআন দিবস...

লিখেছেন লিখেছেন মুজাহিদ হোসাইন সজিব ১১ মে, ২০১৬, ০৬:২৮:৫৬ সন্ধ্যা



এই দিন আসলেই কোরআনের সৈনিকদের কানে ভেসে আসে সেই গান-

আমি আমার এ দুটি আঁখি, কী করে ধরে রাখি

অঝোরে কান্না বেরিয়ে আসে

যখন মাসের পরে মাস পেরিয়ে ১১মে আসে...

১১ই মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস। সেই দিন কি ঘটেছিল চলুন ইতিহাসের পাতা থেকে তা জেনে নিই। ১৯৮৫ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঈদগাহ ময়দানে সংঘটিত হয় এক পৈশাচিক, নারকীয় হত্যাকান্ড।

ঘটনার শুরু যেভাবেঃ ১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের দুইজন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল সিং কোরআনের সকল আরবী কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রীট করে। তারা মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সূরা বাকারার ১৯১ নম্বর আয়াত ও সূরা তাওবার ৩১ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা দায়ের করেছিল।

তাদের বক্তব্য ছিল, কোরআন যেহেতু কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ও তাদের হত্যা করার কথা বলেছে, সেহেতু কোরআন একটি সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা গ্রন্থ। তাই একে বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে মামলা দায়ের করে এই দুই পাপিষ্ঠ। ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সিআরপিসি ১১৫ (ক) ও ২৯৯ (ক) উদ্ধৃতি দিয়ে তারা কোরআনকে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী বলে উল্লেখ করে বলে, এই গ্রন্থ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে। বিচারপতি পদ্ম খাস্তগীর কোন প্রকার বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করেন। তিনি ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন।

কোরআনকে বাজেয়াপ্ত করার মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কলকাতাসহ সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। আমাদের দেশেও এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কোরআন প্রেমী জনগন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

এর প্রতিবাদে ১০ মে জুম্মার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে হাজার হাজার ইসলামী ছাত্র-জনতার মিছিল ও সমাবেশ মিলিত হলে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

সারাদেশের মত পরের দিন ১১ মে চাঁপাইনবাবঞ্জের ঈদগাহ ময়দানে আয়োজন করা হয় এক প্রতিবাদ সমাবেশের। বেলা ১১ টায় সমাবেশের আহবায়ক চাঁপাইনবাবগঞ্জ আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদকে এসপি অফিসে ডেকে সমাবেশ বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়া হয়। কিন্তু ইসলামী জনতা দলে দলে আসতে থাকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে। উপায় না দেখে ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। “শুধুমাত্র দোয়া করে জনতাকে শান্ত করে চলে যাবো”- নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সেই আবেদনও শুনেনি ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা। এসময় ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা সেই সুযোগ না দিয়ে অকথ্য ভাষায় আগত কোরআন প্রেমিকদেরকে গালি দিতে থাকে। এসময় ইসলামী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লে ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নির্দেশে কোরআন প্রেমী জনগনের উপরে গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে প্রথমেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ১০ম শ্রেণীর ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মী আব্দুল মতিন এবং হাসপাতালে নেবার পথে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে। এ ঘটনায় শীষ মোহাম্মদ, রশিদুল হক, ৮ম শ্রেণীর ছাত্র সেলিম, সাহাবুদ্দীন, কৃষক আলতাফুর রহমান সবুর, রিকশাচালক মোক্তার হোসেন ও রেলশ্রমিক নজরুল ইসলাম শাহাদাত বরন করেন। সর্বমোট ৮ জন শাহাদাত বরন করেন আর আহত হন প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ।

পরের দিন ১২ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী সকল বাধা উপেক্ষা করে কারফিউ ভেঙ্গে জুম্মার নামাজের পর নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে রাজপথে নেমে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমন ঘটনা সারা বিশ্বব্যাপী আালোড়ন সৃষ্টি করে। ১৩ মে প্রশাসনের সকল বাঁধা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোরআন প্রেমী মানুষ। মুসলমানরা বিশ্বব্যাপী এমন কান্ডজ্ঞানহীন আচরণের প্রতিবাদে ফেটে পড়লে ভারত সরকার বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রায়টি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলে ১৩ মে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি বিসি বাসকের আদালতে স্থানান্তরিত করে এটি খারিজ করে দেয়া হয়।

কোরআনের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যেখানে সকল মুসলমানের কর্তব্য সেখানে ইসলামী জনতার উপর গুলিবর্ষণ করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচনা করেছিল বাংলাদেশের কিছু মুসলমান নামধারী পুলিশ। ২৫ বছর পার হলেও আজ এ ঘটনার কোন বিচার হয়নি।

আসুন আমরা সেই দিনের শহীদদের জন্য দোয়া করি, যেন মহান রাব্বুল আলামীন তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন,

আমিন...

(সংকলিত)

বিষয়: বিবিধ

১২০৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368727
১১ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : দোয়া রইল।
368733
১১ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ১১ই মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবসের শহীদদের কবুল করুন। লেখাটি ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাদে
368734
১১ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : তাগুতের শত্রু কোরআন। আর কোরআনের হেফাজতকারী খোদ আল্লাহ। কোরআনের জন্য মৃত্যুবরণ মানেই আল্লাহর সিপাহী। জিতলে গাজি মরলে শহীদ।
368735
১১ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : তাগুতের শত্রু কোরআন। আর কোরআনের হেফাজতকারী খোদ আল্লাহ। কোরআনের জন্য মৃত্যুবরণ মানেই আল্লাহর সিপাহী। জিতলে গাজি মরলে শহীদ।
368764
১২ মে ২০১৬ রাত ১২:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সেই মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা সেজে ধরা পরেছে। জিল্লতি তার কপালে অবশ্যই আছে।
369118
১৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সেই পাতার অনুসারী বর্তমানে ক্ষমতায় আছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File