তারাবীর নামাজে কোরান খতম করার টাকা নেয়া জায়েজ নাই

লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৫:৪৮:২৭ বিকাল



আমাদের দেশে রমজানের সময় তারাবীর নামাজে কোরান খতম করা হয় অনেক মসজিদে। আবার কিছু মসজিদে কোরান খতম করা হয় না। যেখানে কোরান খতম করা হয় সেখানে কোরান খতমের টাকা দেয়া হয় হাফেজকে। এই টাকা নেয়া বা দেয়া জায়েজ নাই। তবে ইমামতি করে যেমন টাকা নেয়া জায়েজ সেরকম সাধারণ তারাবীর নামাজের ইমামতি করেও টাকা নেয়া জায়েজ। কিন্তু কোরান খতমের টাকা নেয়া জায়েজ নাই। কারণ,

কারণ দীনের কাজ করে বা ইবাদাত করে টাকা নেয়া জায়েজ নাই। ইবাদাত আমরা নিজেরা নিজেদের জন্যই করি। তাহলে অন্যে আমাকে টাকা দিবেন কেন? তবে দীনের এমন কাজ যা টাকা দিয়ে না করালে, তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, তা টাকা দিয়ে করানো জায়েজ আছে। যেমন ধর্মীয় শিক্ষা, নামাজের ইমামতি ইত্যাদি। এখন দেখা যাক তারাবীতে কোরান খতম করা না হলে তারাবী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিনা? না। কোরান খতম করা তারাবীর জন্য শর্ত নয়। কোরান খতম না করেও তারাবী পড়া যায়। এই কারণে তারাবীতে কোরান খতম দিয়ে টাকা নেয়া জায়েজ নাই। তবে কেও চাইলে টাকা না নিয়ে তারাবীতে কোরান খতম করলে সে ছওয়াব পাবে। এই কথাটি সব ফতোয়ার কিতাবেই লেখা আছে।

এই পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক আছে। এবার টাকা নেয়া হাফেজদের পক্ষ থেকে আসা প্রশ্নগুলো কী কী হতে পারে দেখা যাক।

১/ যেই তারাবীতে কোরান খতম করা হয় না, সেখানেও কোরানের কিছু আয়াত পড়া হয়। তাহলে প্রশ্ন কোরানের কিছু আয়াত পড়ে যদি টাকা নেয়া যায়, তাহলে কোরান খতম করে নেয়া যাবে না কেন।

এখানে একটি এলজামী জবাব আগে দিয়ে দেই। তারপর আসল জবাব দেব। এলজামী জবাব হচ্ছে কোরানের অল্প আয়াত পড়ে যদি টাকা নেয়া জায়েজ আলেমগণ বলছেন তাহলে আপনি অল্প আয়াত পড়েই টাকাটা নিয়ে নেন। শুধু শুধু কষ্ট করে পুরো কোরান খতম করতে যাবেন কেন?

তখন তিনি বলবেন অল্প আয়াত পড়ে তারাবী পড়ালে তো অল্প টাকাই দেয়া হচ্ছে। বেশি টাকা নিতে হলে তো পুরা কোরানের খতম দিতে হচ্ছে।

হ্যাঁ, এখানেও চিন্তার বিষয় আছে। যেই কোরান শুধু টাকার জন্য খতম দেয়া হয় সেখানে ছওয়াবের আশা করা বোকামি। যেই পড়াতে ছওয়াব নাই সেই পড়ার জন্য টাকা দিবে কে আপনাকে? আর যেই পড়াতে ছওয়াব আছে সেই পড়া কখনো টাকার জন্য হতে পারে না।

এবার আসল উত্তর দেয়ার পালা। প্রথমেই বলেছিলাম যে দীনের কাজ করে বা ইবাদাত করে টাকা নেয়া জায়েজ নাই। এই কথাটিও ফতোয়ার সব কিতাবেই লেখা আছে। এখন তারাবীর নামাজ পড়াও একটি ইবাদত। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ইবাদত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি করে টাকা নেয়া জায়েজ হওয়ার কারণ হচ্ছে টাকা দিয়ে ইমামতি না করালে দীনের একটি কাজ বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে। তাই ওলামায়ে কেরামের সম্মিলিত মত এই যে টাকা দিয়ে হলেও ইমামতি করাতে হবে বা করতে হবে।

ঠিক একইভাবে তারাবীর নামাজ পড়াও একটি দীনি কাজ। যা টাকা দিয়ে হলেও পড়াতে হবে একারণে যে তাতে টাকা না দিলে একটি দীনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই তারাবীর নামাজের ইমামতি করে টাকা নেয়া জায়েজ। এই বিষয়টি আসলে পাঁচ ওয়াক্তের ইমামতির সাথেই যুক্ত। ইমাম সাহেব হাফেজ হোন বা না হোন, তিনি জানেন যে তাকে রমজানের তারাবীও পড়াতে হবে। তাহলে সারা বছর তিনি যেভাবে ইমামতি করেছেন ঠিক সেইভাবে রমজানের তারাবীতেও ইমামতি করবেন। এখানে কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছেনা।

তবে হাফেজ এনে তারাবীতে কোরান খতমের ব্যবস্থা করা এবং এই কোরান খতমের জন্য টাকা দেয়া বা নেয়া জায়েজ নাই। কারণ উপরে বলা হয়েছে যে এমন দীনের কাজ যা টাকা দিয়ে করানো না হলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, তা টাকা দিয়ে করাতে হবে। তারাবী টাকা দিয়ে করানো যেতে পারে। কিন্তু তারাবীর জন্য কোরান খতম শর্ত নয়। কোরান খতম না করলেও তারাবী হয়ে যায়। টাকা দিয়ে কোরান খতমের ব্যবস্থা করা না হলে তারাবী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নাই। কারণ তারাবী আর তারাবীতে কোরান খতম দুইটি আলাদা বিষয়। কোরান খতম না দিলেও তারাবী হয়ে যায়। তাহলে বুঝা যাচ্ছে হাফেজ এনে টাকা দিয়ে কোরান খতম করা না হলেও তারাবী বন্ধ হবে না। তাই তারাবীতে কোরান খতম করে টাকা নেয়া জায়েজ হবে না।

কেও যদি টাকা ছাড়া তারাবীতে কোরান খতম করে এর জন্য ছওয়াব পাওয়া যাবে।

অনেকেই বলেন আমরা টাকা দাবী করি না। যা খুশিতে দেয় তাই শুধু নেই। এখানে আসলে খুশিতে দেয়া হয় বলে একটি বাহানা বানানো হয়। কেও খুশিতে কাওকে টাকা দেয় না। সারা বছর তারা আপনাকে খুশি হয়ে কত টাকা দিয়েছেন? না, দেন নি। তাহলে রমজানে যা দিচ্ছে তা খুশি হয়ে নয়, কোরান খতমের জন্য দেয়া হচ্ছে।

একই কারণে মুর্দার কবরে ছওয়াব পৌঁছানোর জন্য কোরান খতম করেও টাকা নেয়া জায়েজ নাই। কারণ মুর্দার কবরে ছওয়াব পৌঁছানো ভাল তবে এটা কোরান খতম না করে অন্য অনেকভাবেও করা যায়। আর কোরান খতমের ছওয়াব মুর্দার কবরে আপনি পৌঁছাতে পারছেন তার কি প্রমাণ আছে? তাহলে টাকা নেয়া হবে কেন? আবারও বলছি যা ছওয়াবের জন্য করা হবে তাতে টাকা নেয়া জায়েজ হবে না। আর যা ছওয়াবের আশা নাই শুধু টাকাই আশা, যেখানে পাবলিক টাকা দেবে না।

যে কয়টি নির্দিষ্ট বিষয় দীনি কাজ হওয়া স্বত্বেও টাকা দিয়ে করানো জায়েজ তাই শুধু করানো যেতে পারে। অন্য কোনো এবাদতে টাকা দেয়া ও নেয়া জায়েজ নাই।

বিষয়: বিবিধ

১৭০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

241373
০৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৩
বেদনা মধুর লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
241374
০৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
বিভীষিকা লিখেছেন : আমি জানি না আপনি হাফেজ কিনা। যদি হাফেজ হয়ে বলতেন,তাহলে আরো ভালো লাগতো। বিষয়টাতে আপনি গোলমাল বাজাই ফেলছেন ভাই। নেই কোনো দলীল, নেই কোনো রেফারেন্স। সত্যিই অদ্ভুদ ব্যাপার।
০৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:১৫
187419
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : দীনের কাজে টাকা নেয়া যায় না এটি ইসলামী শরিয়তের স্পষ্ট একটি বিধান।
কোরান হাদিসের জ্ঞান টাকা অর্জনের জন্য যে ব্যাক্তি শিখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। দেখুন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنْ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِي رِيحَهَا.
০৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:১৯
187420
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : তা ছাড়া তারাবী পড়ার উদ্দেশ্যে শুধু তারাবী পড়া। এতে কোরান খতম যোগ করার দরকার কী?
241475
০৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:২৩
বিভীষিকা লিখেছেন : আপনার উল্লেখিত হাদিসে খতমে তারাবীহর কথা উল্লেখ নেই। আর যদি আমরা হাদিস থেকে রূপক অর্থ গ্রহণ করি, তাহলে সমস্ত ইমাম আগে ধরা খাবে। কারণ তারা জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কোরান থেকে তেলাওয়াত করেন।
০৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:০২
187507
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : ইবাদাত করে টাকা নেয়া জায়েজ নাই। ইবাদাত আমরা নিজেরা নিজেদের জন্যই করি। তাহলে অন্যে আমাকে টাকা দিবেন কেন? তবে দীনের এমন কাজ যা টাকা দিয়ে না করালে, তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, তা টাকা দিয়ে করানো জায়েজ আছে। যেমন ধর্মীয় শিক্ষা, নামাজের ইমামতি ইত্যাদি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File