রক্তপলাশ এক লাশের মিছিল।

লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ০৮ মে, ২০১৪, ০৬:৩৫:২৯ সন্ধ্যা



পর্ব - ৩

বেলা পৌনে বারোটার দিকে খবর এলো বিজয় সরণীর মোড়ে গ্রেনেড হামলা করেছে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ অভিযাত্রায়। ঘটনাস্থলেই শহীদ হয়েছেন আমাদের কয়েকজন ভাই। এবং খুব দ্রুত এই সংবাদটা প্রচার হয়ে গেলো মাইকের ঘোষণার মাধ্যমে।হঠাত পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। সবার চোখেমুখে কেমন টানটান উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেলো।

চারিদিকে হারানোর গুঞ্জন আর চোখে প্রতিশোধের নেশা। ঠিক এসময় মাইক থেকে আবার ঘোষণা এলো – দয়া করে আপনারা শান্ত হন।চিৎকার চেঁচামেচি করে আমরা কোন সমাধান করতে পারবো না। এর কিছুক্ষন পরে আবার ঘোষণা এলো আহমাদ শফি সাহেব নির্দেশ দিয়েছেন শাপলা চত্বরে যেতে।ওখানে সমাবেশ হবে।আবার শুরু হল আমাদের পদযাত্রা। প্রতিটা মোড়ে মোড়ে বাধার দেয়াল টপকে বেলা তিনটার দিকে উপস্থিত হলাম মতিঝিলের শাপলা চত্বরে।ওখানে পৌঁছেই আগে যোহরের নামায আদায় করে নিলাম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে।জামাতে নামায পড়ারকোন পরিস্থিতি ছিল না ওখানে।এদিকে মঞ্চে এসে উপস্থিত হচ্ছিলেন দেশ বরেণ্য আলেম ওলামাগণ।সেইসাথে চলছিলো একজনের পর একজনের জ্বালাময়ী বক্তৃতা।

ওদিক থেকে একেরপর এক দুঃসংবাদ আসতে লাগলো। আমাদের আরো কয়েকজন ভাইয়ের শাহাদাতের সংবাদ শ’খানেক কর্মীদের আহত হওয়া। সব মিলিয়ে কেমন প্রতিকূল একটা অবস্থা তৈরি হয়ে আছে।আসর - মাগরিবের নামায আমরা ওখানেই বিশাল এক জামাতের সাথে আদায় করলাম। নামাজের পর মুনাজাতে কান্নার রোল পড়ে গেলো সর্বত্র।একেকজনের গগনবিদারী চিৎকারে ভারী হয়ে উঠছিলো আকাশ বাতাস।এদিকে ইসলামের এ উত্থানকে মিটিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে নেমেছে ইবলিসি একাধিক শক্তি। মাগরিবের পরপরই সাদা কাফনে জড়ানো চারজন শহীদের লাশ উপস্থিত করা হল সেখানে।যা দেখে উপস্থিত জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়লো।বুকের ভেতর দাউ দাউ করে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠলো। চোখের জলে প্লাবিত হতে লাগলো কংক্রিটের রাস্তাটাও। বিদ্রোহী স্লোগানে মুখরিত হচ্ছিল চারিধার।

এদিকে রাজধানীর বুক চিরে ক্রমেই আঁধার নেমে আসতে লাগলো।রাতটা এখানে থাকার ফায়সালা হল উপর থেকে। রাত আটটা বাজার আগেই পুরো এলাকার ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ করে দেয়া হল। আর সেইসাথে চলছে পরিকল্পিত পুলিশি আক্রমণ।গুলিতে আহত হচ্ছে একের পর এক। দেখতে দেখেতেই রাত ন’টা বেজে গেলো। দুইদিনের অবসান্ন ক্লান্ত দেহ নেতিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।আমার কোলে মাথা রেখে আহমাদ মুহাম্মাদ দু’জনেই ক্লান্ত দেহখানা এলিয়ে দিলো ।সারাদিন তো আর কম ধকল যায়নি ছোট্ট দেহ দু’খানির উপর! কি মায়ময় শান্ত বুদ্ধিদীপ্ত ওদের চেহারাটা। ঘুমালে বোধহয় এমনিতেই মানুষকে অনেক নিষ্পাপ মনে হয়। আর ওরা তো হচ্ছে খোদার সেনা।আস্তে আস্তে অনেককেই দেখলাম রাস্তার উপরই শুয়ে পড়ছে। কেউ মাথার নিচে একটা ইট দিয়েছে আর কেউ মাথার তলে হাত দিয়ে বালিশের কাজ সেরে নিয়েছে।এদের মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের লোক।যাদের ঢাকা শহরে কোন আত্মীয় নেই বা থাকলেও যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আল্লাহ যেন এদের এই ত্যাগকে দুনিয়া অয়াখেরাতের নাজাতের উছিলা হিসেবে কবুল করে নেন।রাস্তার ডিভাইডারের সাথে হেলান দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে কখন দু’চোখের পাতা বুজে এলো বুঝতেই পারলাম না।

রাত ৩টা। চারিদিক থেকে ভেসে আসছে গোলাগুলির আওয়াজ। গ্রেনেড বিস্ফোরণের কানফাটা বিকট শব্দে ধড়ফড়িয়ে জেগে উঠলাম ঘুম থেকে। ইতিমধ্যে অনেকেরই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আতঙ্কে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে সকলে।চেহারায় বিষাদের কালো ছায়া।একি দেখছি আমরা ? ৭১ এর ২৫শে মার্চের সেই বিভীষিকাময় রাতও যেন হার মানাবে আজ রাতকে। ইবলিসি শক্তি আজ ঝাঁপিয়ে পড়েছে অসহায় নিরস্ত্র ঘুমন্ত মুসলিম জনতার উপর।হাজার হাজার র্যা ব পুলিশ বিজিবি দিয়ে ঘেরাও করে ফেলেছে আমাদের।

হাত-পা সব কেমন অচল হয়ে আসছে। বুঝতে পারছিনা কি করবো। কোনরকম হেঁচকা টানে জাগিয়ে ওঠালাম ওদের।উঠেই দিকভ্রান্তের মতো ছুটতে লাগলাম। কোথায় যাচ্ছি ! কার খপ্পরে পড়বো কিছুই ভাবার সময় নাই এখন। কারণ আমরা নিরস্ত্র।ছিলাম ঘুমন্ত।প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন অবস্থাই নেই এখন। দুইভাইকে দুইহাতে ধরে পাগলের মতো ছুটছি।হঠাত পেছন দিক থেকে ধাওয়া করলো নরপশুগুলো। তাল সামলাতে না পেরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো মুহাম্মাদ।সর্বশক্তি দিয়ে ওকে টেনে তুললাম।আবারো ছুটতে শুরু করলাম সামনের দিকে।পাশের একজন বড়ভাই বললেন ওদিকে যাবেন না ভারতের সৈন্যরা ঘিরে আছে ওপাশটা।ডানপাশ দিয়ে এগিয়ে যান। তার কথামত ডানপাশে একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো সোনালী ব্যাংকের সিঁড়িগুলো। আর দুই কদম এগুলেই সিঁড়িতে উঠে যাবো ঠিক এই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি বৃষ্টি এসে পড়লো আমাদের উপর। হাত ফসকে ছিটকে পড়লো মুহাম্মাদ। পাশ ফিরে চাইতেই দেখলাম আহমাদ ও গায়েব।

______________________ চলবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৯৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

219138
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : জীবিত মানুষের মিছিল বন্ধ করলেও লাশের মিছিল বন্ধ করেনি সরকার বরং খুনিদের সুযোগ করে দিচ্ছে তাই প্রতিদিন লাশের মিছিল লম্বা হচ্ছে।
১১ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৫
167862
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : হুম ! কবে যে এসবের অবসান ঘটবে !!!
219150
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩২
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি কি ৬ ই মের ঘটনা পড়ছি না ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের কালো রাতের ঘটনা পড়ছি।
১১ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৬
167863
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : ৬ ই মে'র ঘটনা পড়ছেন।Straight Face
219197
০৮ মে ২০১৪ রাত ০৯:১১
সুস্থ মন লিখেছেন : আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন।
১১ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৬
167864
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আমীন আমীন আমীন।Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File