রমজান,প্রুস্তুতি,ও করনীয়

লিখেছেন লিখেছেন মু আতিকুর রহমান ২৫ জুন, ২০১৪, ১০:০২:৫১ সকাল





আর কয়েকদিন আতিবাহিত হওয়ার পর রমজানুল মোবারক মাস আরেক বার আমাদের উপর রহমত,মাগফেরাত ও নাজাতের ছায়া বিস্তার করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতের বারিধারায় আমাদের জীবন সিক্ত করে দেবে। রমজানের রোজা আমাদের জন্য নিয়ে আসে সুসংবাদ।

সিয়াম শুরুর পূর্বে রাসুল (সঃ) তার সাহাবীদের সামনে রোজা কে স্বাগত জানিয়ে রমাদানের গুরুত্ত বর্ণনা করে সাবান মাসের শেষের দিকে মুসলিম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতেন। আর এ ভাষণ হদীসে এভাবে এসেছে।

“ রাসুল (সঃ) বলেন, হে জনতা ,তোমাদের সামনে একটি মাস সমাগত, ১)এটি হচ্ছে মহান মাস (শাহরুন আজীম),২) এটি একটি বরকতময় মাস শাহরুন মুবারুকন,৩) এই মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে যার মুল্য রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে বেশি,৪) এটি হচ্ছে এমন মাস যে মাসে সিয়াম পালনকে ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে।৫) এটি হচ্ছে ধৈর্যের মাস।৬) এটি হচ্ছে সমতার মাস,৭) এই মাসে মানুষের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়,অতি গুনাহ বা অপরাধ মুক্তির মাসঃ,৯)এই মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস,১০)এই মাস সিয়াম আদায়কারীদের ইফতার করানোর মাস,১১) এটি ঐ মাস যে মাসের প্রথম ভাগে রহমত,মধ্যভাগে মাগফিরাত,এবং শেষভাগে নাজাত,১২) এই মাস হচ্ছে কর্মচারীদের থেকে কর্মের বোঝা কমিয়ে দেওয়ার মাস,সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।

এ হচ্ছে প্রস্তুতি মুলক রমাজানের পূর্বে মহানবী (সঃ) এর প্রদত্ত ভাষণ। (মিশকাত)

রমজান আসলেই আমরা খুবই ব্যস্ত হয়ে যাই। যেমন, ইফতার,সেহেরি,তারাবিহের নামাজ,কুরান খতম,শাবে কদর পালন,ইতেকাফ করা,বিভিন্ন নফল ইবাদাতের মধ্য দিয়ে পু্রো রমাজান মাস কে উৎসব হিসেবেই আমরা গ্রহন করে থাকি। এছাড়াও আরও রয়েছে ঈদের জন্য কেনাকাটা করা। ঘরের আসবাব বিষয়াদি কতকিছু নিয়ে যে আমরা ব্যস্ত থাকি। রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আগে আমাদের জানতে হবে রোজা কি,এর মর্যাদা কতটুকু।

(১) রোজার সংজ্ঞাঃ

সুবেহ সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনক্রিয়াসহ (আল্লাহু ও তার রাসুল কতৃক নিষিদ্ধ) যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোযা।

এছারাও চোখের রোযা,রসনার তথা জিহ্বার রোযা ,কানের রোযা ,অঙ্গ-প্রত্তঙ্গের রোজা,হালাল রুযি করা ইত্যাদি বিষয় রমজানের রোজার মাসে নিহিত আছে।

(২) রোযার উদ্দেশ্যঃ

সকল প্রকার কু প্রবিত্তিকে দমন করে আত্তশুদ্ধির মাধ্যমে আত্মার কল্যাণ, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভই হল সিয়ামের উদ্দেশ্য। অন্য কথায় বলা যায়,তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির গুণাবলী সৃষ্টি ও আল্লাহ শুকরিয়া তথা হক আদায় করাই সিয়াম সাধনার প্রকৃত উদ্দেশ্য।

(৩) রোযার মূল্য ও মর্যাদাঃ

আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য পুরো রমজান মাস রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন,সেই সাথে তিনি রোজা এবং এই রমজান মাসকে বিরাট মর্যাদাও দান করেছেন।এখানে আমরা রোজা ও রমজানের মূল্য ও মর্যাদা উল্লেখ করছি, যাতে করে রোজা ও রমজান মাস থেকে আমরা কল্যান লাভ করতে পারিঃ

 আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর রমজানের রোজাকে ফরজ করে দিয়েছেন,এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামী বলেন,

হে ঈমানদারগন তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেরুপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর, যেন তোমরা খদাভিতি অর্জন করতে পার। (সুরা আল বাকারা-১৮৩)

 হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন হযরত রাসুলে কা্রীম (সাঃ) বলেছেন আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক আমলের সওয়াব দশ গুণ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত করা হয় । কিন্ত আল্লাহ তায়ালা বলেছেন রোযা এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কেননা উহা একান্ত ভাবে আমারই জন্য। আমি উহার প্রতিফল দেব রোযা পালনে আমার বান্দা আমারই সন্তোষ বিধানের জন্য স্বীয় ইছ্যা বাসনা ও নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দ একটি আনন্দ ইফতার করার সময় এবং দ্বিতীয়টি তার মালিক মুনিব খোদার সহিত সাক্ষাৎ লাভের সময় পাবে।আর রোযা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের একজন যখন রোযা রাখবে তখন সে বেহুদা ও অশ্লীল কথা বার্তা না বলে এবং চিৎকার ও হট্টগোল না করে।অন্য কেও যদি তাকে গালাগাল করে কিংবা তার সহিত ঝগড়া বিবাদ করতে আসে তখন সে যেন বলে “আমি রোজাদার” ।

 রমজান মাসের আগমনে আসমানের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। (বুখারী)

 রমজান সবরের মাস,আর সবরের পুরূস্কার হলো জান্নাত।(বায়হাকি)

 রমজানে মুমিনের জীবীকা বৃদ্ধী করে দেওয়া হয়। (বায়হাকি)

 রমজান মাস এলে জান্নতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

 জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, এর মধ্যে একটির নাম রাইয়্যান, রোজাদার ছারা আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।(বুখারীওমুসলিম)

 যে ব্যক্তি ইমান ও আত্বসমালোচনার সাথে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বেকার গুনাহ খাতা মাফ করে দেওয়া হবে।(বুখারী ও মুসলিম)

 রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুঘন্ধির চাইতেও সুঘ্নন্ধিময়।(বুখারী ও মুসলিম)

০৪( রমজানের পুর্বে রোজার প্রুস্তুতি মুলক আপনার উপর জরুরী কিছু কাজ ও ওয়াজীবসুমুহঃ

প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা জেনে রাখুন রমজানের এই মাস প্রশিক্ষনের মাস আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের উপর সিয়ামকে ফরজ করেছেন এই জন্য যে, উহা আদায় করা মাধ্যমে আমরা তার ইবাদাত করবো যাতে করে আপনার সিয়াম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট কবুল হয়। সে জন্য নিম্নোক্ত আমল গুলো করুন এবং তা করার প্রস্তুতি গ্রহন করুন,

 ইমানকে মজবুত করার লক্ষ্যে কোরআন হাদীসকে সহীহ শুদ্ধ ভাবে বুঝে অনুধাবন করা।

 সালাতকে হেফাজত করুন,বহু সিয়াম পালনকারী আছে সালাতকে ওবহেলা করে সঠিক সময়ে সালাত আদায় করে না এটা উচিৎ নয়,সালতকে সময়মত জামাতের সাথে আদায় করা উচিৎ।

 আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হউন রমজানে আপনি নিজের অসৎ গুণাবলী হতে নিজেকে হেফাজত করুন সবার সাথে ভাল ব্যাবহার করুন, এবং কুফুরি দিনের প্রতি গালিগালাজ করা হতে বিরত থাকুন চরিত্রের খারাপ দিকটা দূরীভূত করতে উদ্দ্যেগ নিন সিয়াম অবস্থায় কোনও আজে বাজে কথা বলবেন না যদিও হাস্যচ্ছলেও বলা হউক না কেন কেননা উহা আপনার সিয়ামকে নষ্ট করে দিবে।

রাসুল (সঃ) বলেন যদি কেহ সিয়াম পালনকারী হও তবে সে যেন আজে বাজে কথা বলা হতে বিরত থাকে আর যেন কর্কষভাষী না হয়। যদি কেহ তাকে গালিগালাজ দেয় বা হত্যা করতে উদ্যত হয় তবে সে যেন বলে আমি সিয়াম পালনকারি,আমি সিয়াম পালনকারি। (বুখারী ও মুসলিম)

 রমজান মাসে সিনেমা, নাটক, টেলিফ্লিম, গান শোনা ইত্যাদি দেখা হতে বিরত থাকার চেষ্টা করুন, কেননা এসব জিনিসে বেশির ভাগ অশ্লিলতা প্রদর্শনি হয় এবং বেহুদা সময় নষ্ট হয়। তবে ইসলামী অনূষ্ঠান গুলো দেখতে পারেন এতে আপনার ঈমানী জযবা বৃদ্ধি পাবে।

 রমজান মাসে ধুমপান ত্যাগে আগ্রহী হউন,নিজেকে আস্তে আস্তে দৃঢ় ইচ্ছার মালিক করে তলুন। যেমনভাবে উহাকে দিবসে পরিহার করেছেন তেমনিভাবে রাত্রিতেও উহা পরিত্যাগ করুন। আর এর ফলশ্রুতিতে আপনার সাস্থ্য ও সম্পদ উভয় রক্ষা পাবে।

 রমজান মাসে একটি নেয়ামত হলো তারাবীহ নামাজ।রমজানে এশার নামজের পর আমরা তারাবীহ নামাজ আদায় করে থাকি,এ ক্ষেত্রে অনেকে প্রথম প্রথম পড়লেও পড়ে শিতিলতা দেখায় এটা উচিৎ নয়।রমজান যেহেতু শুধু সওয়াব আর্জন করার মাস সেহেতু প্রতিদিন তারাবিহের নামাজ আদায় করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার সাহাবীদের কে নিয়ে এই সালাত আদায় করতেন।তাই আমাদেরকেও অধিক সওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই নামাজ আদায় করা উচিত।মহিলারাও মসজিদে অথবা ঘরে জামায়াতে তারাবীহ এর নামাজ আদায় করতে পারেন।

 তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার উদ্যেগ নিতে পারেন। কেননা রাসুল (সঃ) বলেছেন ফরয নামাজের পর রাতের নামাজ হচ্ছে সর্বত্তোম তথা সালাতুল তাহাজ্জুদ। (তিরমিজি)

 রমজানে প্রতি রাতে সেহরি খাওয়ার কিছু আগে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। এই নামাজের অনেক বরকত রয়েছে আল্লাহ এই সময়ের দোয়া বেশি বেশি কবুল করেন।

 রমজান মাস এক অফুরন্ত নেয়ামতের মাস।এ মাসে আপনি হালাল উপার্জন করুন। মোটেও হারাম উপার্জনের দিকে হাত বাড়াবেন না,কারন হারাম পন্থায় উপার্জন করে রোজা রাখবেন,সালাত আদায় করবেন,দোয়া করবেন, কোন ইবাদাতই আপনার কবুল হবে না। হালাল রুজি খান,হালাল পথে চলুন,তাহলে আপনি রোজার ফজীলত পাবেন এবং রমজান মাসের ট্রেনিং নিয়ে আগামি ১১ মাস আল্লাহর দেখানো সহজ সরল পথে চলুন।

 রমজানে সবচেয়ে আনন্দের হলো ইফতারের সময়। কেননা রাসুল (সাঃ) বলেন,সিয়াম পালনকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে দু’টি পুরস্কার তন্মোধ্যে একটি হল ইফতারের সময়, তাই পরিবারের কর্তাব্যাক্তি যিনি তার উচিত পরিবারের সবাইকে একসাথ করে ইফতারের পূর্বে আল্লাহর কাছে দোয়া মোনাজাত করা, কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সময়ের দোয়া বেশি বেশি কবুল করেন।

হযরত আবূ হোরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন তিন ব্যাক্তির দোয়া নিষ্ফল হয় না ১,ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ২,ন্যায়বিচারক নেতার দোয়া ৩,মজলুমের দোয়া। (আহমদ)

 ইফতারের সময় বেশী ভোজন করা উচিৎ নয়, দিনেরবেলা পানাহার থেকে বিরত থাকলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবারের নিয়ম হলো সেহরি ও ইফতারীতে ভুরিভোজনের আয়োজন করে,এতে রোজার উদ্দ্যেশ্যের সাথে একরকম প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।চেষ্টা করেন কম খেতে,নিজেকে আত্বসংযমী করুন।

 রমজান মাসে বেশী বেশী করে ছদাকাহ দিন,আপনার নিকট আত্বীয় স্বজন ও অভাবীদের মাঝে তা বিলিয়ে দিন।

 রমজান কুরআনের মাস,এই মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন,এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা বাকারার ১৮৫ নং এরশাদ করেন,

“রমজান মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে,এতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত এবং পথ চলার নির্দেশিকা ও সত্য মিথ্যার পার্থক্য করার সূস্পষ্ট দলীল প্রমান।

অতএব রমজান মাসে বেশী বেশী করে জিকির করুন,কোরআন তেলওয়াত করুন,উহা শ্রবণ করুন,আর উহার অর্থ অনুধাবন করতে সচেষ্ট হউন। তার উপর আমল করুন। এই মাসে অন্তত একবার কোরআন বূঝে পড়ার চেষ্টা করুন।আপনার ছেলে মেয়েদের বলুন কোরান শুদ্ধ করে পড়তে। যারা পড়তে জানে না তারা যেন এই মাসের মধ্যে সহীহ শুদ্ধভাবে কোরআন শিখে নেয় সে দিকে গুরুত্ব দিন।

 রমজান মাসে আমাদের দেশের মানুষেরা অর্থাৎ মহিলারা মার্কেটিং এর জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। মার্কেটিং করার জন্য অধিক সময় তারা মার্কেটে ব্যায় করে, এটা উচিৎ নয়। বিশেষ

করে ঈদের শপিং এর জন্য মার্কেটগুলোতে যে ভীড় এ উপলক্ষে বিলাসিতা অপচয় ও প্রর্দর্শনীর যে চিত্র তা আসলেই অত্যান্ত দুঃখজনক এক্ষেত্রে সময় কম ব্যায় করে,ঘরে বেশী করে ইবাদাত করার চেষ্টা করুন।মহিলারা ঘরে ঘরে অন্য মহিলাদের কাছে দাওয়াত পৌছান,নিজের ঘরে দারসে কোরান,দারসে হাদীসের ব্যবস্থা করতে পারেন,কুরানের দাওয়াত পৌছানের চেষ্টা করুন এবং মহিলারা নিজেরা বেশী বেশী করে কোরআন তেলোয়াত করুন।

 রমজান মাসে আপনি রোজার উপর বই অথবা ইসলামী সাহিত্য পড়ুন জ্ঞান অর্জন করুন।

 প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা রমজান মাসে আপনি আপনার সিয়ামের হেফাজত করুন। আর আপনার সন্তান যখনই সামর্থ হবে তখন হতেই সিয়াম আদায়ে অভ্যস্ত করে তলুন। রমজানে বিনা ওজরে সিয়াম ত্যাগ করার ব্যাপারে তাদের সাবধান করুন।

 শিশুতথাযেবয়সথেকেআপনারসন্তানসিয়ামপালনেসামর্থ্যহবেতখনথেকেইতাদেরঅভ্যস্তকরেতুলুন।আমাদের দেশে দেখা যায় আমাদের পিতা মাতার অনেকে আছে যে তারা বলে ওদের রোযা রাখলে শরীর খারাপ করবে। এটা আসলে ঠিক নয়,শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে নয় যাদের উপর রোযা ফরজ তাদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় পিতা মাতারা এ কথা বলে থাকেন । হে মুসলিম ভাই বোনেরা আপনার সন্তানের মাঝে রোযার অভ্যাস করান।মাঝে মাঝে কিছু পুরুষ্কার দিয়ে তাদের উৎসাহ দিন।যেমন, ইসলামী বই ইত্যাদি জিনিস দিয়ে।

 রমজান মাসে মহিলাদের উচিত শরীয়তের সঠিক পন্থায় তাদের পর্দা করা। এতে তাদের প্রশিক্ষণ ও হবে এবং পর্দার সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারবে ।আমাদের দেশে দেখা যায়,অনেকে পর্দা করে কিন্তু সঠিক পন্থায় তা পালন করে না। সেলওয়ার কামিজের সাথে বুকের উপর একটি কাপর পরিধান করে রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি এবং স্কুল-কলেজ,ভার্সিটিতে এভাবে চলাফেরা করে।অনেকে মনে করে ,সেলওয়ার কামিজ পড়ে মাথায় হিজাব পড়লে আমার পর্দা হয়ে যাবে । আসলে তা ঠিক না, আমাদের মা,বোনদের উচিত শরীয়তের সঠিক পন্থায় পর্দা মেনে চলা। মুসলিম মা,বোনেরা আপনারা রোযা রাখেন ঠিক?

তবে এই রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করে একজন খাটি মুমিনা হওয়া।কিন্তু আপনি রোযা রখলেন,কোরআন তেলোয়াত করলেন,নামাজ সঠিক সময়ে পালন করলেন,কিন্তু আপনি সঠিকভাবে পর্দা করলেননা এতে শধু আপনারা সারাদিন না খেয়েই থাকা হল অন্য কোন ফায়দা হল না। এখানে আপনি সিদ্ধান্ত নিন,রমজান মাস থেকে সঠিক পন্থায় পর্দার উপর জ্ঞান অর্জন করে মেনে চলার।এক্ষেত্রে পরিবারের কর্তা ব্যাক্তির উচিৎ তার পরিবারের মহিলাদের পর্দার উপর জোর তাকিদ দেওয়া।

 প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা ভালো করে জেনে রাখুন,রমজানের রোজা হল তাকওয়ার প্রশিক্ষন।কোন কিছুতে অভ্যস্ত হতে হলে তার প্রশিক্ষন নিতে হবে।এই প্রশিক্ষন নেওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজান মাসের রোজাকে নর্ধারিত করেছেন।তাই তো মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সারাদিন ক্ষুধ পিপাসার কষ্ট সহ্য করে।রাতে পুরো একটি মাস নামাজের জন্য দীর্ঘক্ষন দন্ডায়মান হয়।আবার শেষ রাতে আরামের ঘুম ত্যাগ করে সেহরীর জন্য প্রস্তুত হয়া-এ রকম একটির পর একটি কষ্টকর কাজের অনুশীলন করে।তাই আমাদের উচিৎ সওয়াব ও কল্যানের আশায় নামাজ,রোজা,কুরআন তিলাওয়াতসহ বিভিন্ন ইবাদাতের সমন্বয়ে তাক্বওয়া অর্জন করা।

 প্রিয় মুমিন ও মুমিনাহগন রমজান মাসে যে সকল কাজ হতে সমপূর্নভাবে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হলো,

১। দিনেরবেলা পানাহার ও যৌনসম্ভোগ হতে বিরত থাকতে হবে।

২। নিজের কানকে নিশীদ্ধ কিছু শ্রবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩। চোখ দিয়ে হারাম দৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪। মূখ দিয়ে আজেবাজে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫। হাতকে নিশীদ্ধ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে।

৬। পা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।

 ইহতেসাব তথা সারাদিন রোজা রেখে,রাতে তারবীহ আদায় করে আপনি আপনার নিজের আত্বসমালোচনা বা আত্বপর্যালোচনা নিজে করুন,এটা তাওবার এক উৎকৃষ্ট পথ। আপনি আল্লাহকে হাজিরনজির জেনে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার তথা আপনার ব্যাবহারিক জীবন,ফরজ ওয়াজীব আদায়ে আন্তরিকতা চিন্তা করে গুনাহ হলে তাওবা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কায়মনবাক্যে ক্ষমা প্রর্থনা করুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনাকরুন। কেননা রাসুলে কারীম (সাঃ) বলছেন, ‘যে ব্যাক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

 প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য এই রমজান মাসে একটি রাত দিয়েছেন রাতটি হলো ‘লাইলাতুল কদর’ ভাগ্য বা তাকদীরের ফয়সালা করা হয় এই রাতে।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই রাতে নাজিল করেন পবিত্র আল কোরআন।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কোরান মাজীদে বলেন,

আমরা এই কোরআনকে এক বরকতময় ও মর্যাদাসম্পন্ন রাত্রে নাজিল করেছি। (সুরা আদ দুখান ৩)

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সুরা কদরে বলেছেন,

কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম

রাসুলে করীম (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যাক্তি কদরের রাত্রে ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে নামাজ পড়ে,তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ( বোখারী ও মুসলিম)

রাসূলে কারীম (সাঃ) রমজানের শেষ দশ দিনে কদরের রাত্রিকে তালাশ করতেন।

তাই আমাদের উচিৎ রমজানের শেষ দশদিনে কদরের রাত্রিকে তালাশ করে কদরের রাত্রের সওয়াব অর্জন করা।

 এতেকাফ করা তথা আল্লাহর নৈকাট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোন ব্যাক্তির মসজিদে বাস ও অবস্থান করা, সকল সময়ে এতেকাফ জায়েয, তবে রমজান মাসের শেষ দশকে কদরের উদ্দেশ্যে তা করা উত্তম,রাসূলে কারীম (সাঃ) তাই রমজানের ২০ তারিখ রাত্রে মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং ঈদের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত বের হতেননা।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতেকাফ করে আল্লাহ সেই ব্যাক্তি ও দোজখের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমান দুরত্ব সৃষ্টি করেন।প্রত্যেক খন্দক পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চাইতে আরো বহুদুর।

আলি বিন হোসাইন নিজ পিতা থেকে বর্ননা করেন,রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি রমজানে ১০ দিন এতেকাফ করে, তা দুই হজ্জ ও দুই ওমরার সয়াবের সম্মান।(বায়হাকি)

অতএব আমাদের উচিৎ যাদের পক্ষে সম্ভব রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে এতেকাফ করা,এক্ষেত্রে তাদের রমজানের শূরুতেই নিয়ত করে নেওয়া দরকার।আর মহিলাদের কারো পক্ষ যদি সম্ভব হয়,তাহলে সে ঘরে একটি রুমে চারিদিকে পর্দা টানিয়ে তারমধ্যে এতেকাফ করতে পারেন। কেননা রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন।

 হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা ঈদ আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের জন্য এক বড় নেয়ামত।পরিশ্রমের জন্য রয়েছে পারিশ্রমিক,আর কষ্টের জন্য রয়েছে পুরুষ্কার ও আনাবিল আনন্দ।দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার ফলে রমজানের কুদরতি তাপে পাপকে জালিয়ে দেয়ার পরই আসে পুরুষ্কারের আনন্দ।

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রমজানের সর্ব শেষ রাত্রে আল্লাহ রোযাদারের গুনাহ মাফ করে দেন,তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি কদরের রাত্রের কথা বলছেন ? তিনি উত্তরে বললেন না,তবে শ্রমিককে তার কাজ শেষে পূর্ন প্রারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

ঈদে নতুন কাপড় পড়ে ও সাজ গোজ করে,ঈদের সালাত আদায় করতে যায়।আমাদের দেশের আনেক মানুষ আছে তারা ঈদে নতুন কাপড় চোপড় পড়া আর ঘুরে বেড়ানোকে বুঝে থাকে,আর মহিলারা ঘরে বসে টেলিভিশন দেখে,এ প্রসঙ্গে এক আরবী কবি বলেছেন,

“ ঈদ সেই ব্যাক্তির জন্য নয় যে নতুন পোশাক পড়ে,বরং ঈদ সেই ব্যাক্তির জন্য যে আল্লাহর আযাবকে ভয় করে,ঈদ সেই ব্যাক্তির জন্য নয় যে সওয়ারীতে আরোহন করে, বরং ঈদ সেই ব্যাক্তির জন্য যে গুনাহের কাজ ত্যাগ করে”।

ঈদের দিনে যা যা করতে হবে,

১) ঈদের দিন সর্ব প্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।

২) রাসূল (সাঃ) এর উপর দূরুদ পাঠ করবে।

৩) ঈদের সন্ধ্যা থেকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে তাকবীর বলতে থকাবে।

৪) ঈদের দিন ভোরে ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করতে হবে।

৫) ঈদের দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করবে।

৬) ঈদের সালাত আদায় করবে।

৭) ঈদের সময় ছোটদের স্নেহ –আদর এবং বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা উচিৎ।

৮) ঈদের দিন আত্বীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব এর সাথে সালাম

বিনিময়,কোলাকুলি এবং কুশল বিনিময় করা উচিৎ।

একজনরোযাদাররাতওদিনযেভাবেঅতিবাহিতকরবেন

ফজরের পূর্বে করণীয়

১.তাহাজ্জদু নামাযা : এই নামাযের ফযীলত সবারই কমবেশি জানা আছে। সুতরাং রমযানের এই ফযীলতের মাসে তাহাজ্জুদের মত গুরুত্বপূর্ণ আমল যেন ছুটে না যায়, সেই দিকে যত্নবান থাকা। আল্লাহতা‘আরো বলেন: য ব্যক্তি রাত্রি কালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে এবাদত করে, পরকালের আশঙ্কা রাখে এবং তার পালন কর্তার রহমত প্রত্যাশাকরে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করেনা; বলুন, যারাজানে এবং যারা জানেনা; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কে বল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।

২.সেহরী খাওয়া : রমজান মাসে সেহরী খাওয়া সুন্নাত। কেননা , রাসূল (সা.) বলেছেন: "তোমরা সেহরী খাও, কেননা সেহরীতে রয়েছে বরকত" [বুখারীওমুসলিম]। তা ছাড়া বিলম্বিত করে সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে অবশ্যই ফজরের আযানের পূর্বেই শেষ করতে হবে।

৩.ইস্তেগফার করা: অর্থাৎ সেহরীর পর থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত ইস্তেগফার তথা আল্লাহর নিকট মাফ চাওয়া।

৪.ফজরের সুন্নত পড়া : রাসূল (সা.) বলেছেন; ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা রয়েছে তা অপেক্ষা উত্তম।

ফজর হওয়ার পর করণীয়

১.ফজরের নামায প্রথম সময়ে আদায় করা।রাসূল (সা.) বলেন; যদি তারা জানতো যে ফজর নামাযও এশার নামাযের বিনিময় কি রয়েছে; তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও হাজির হতো।

২.একামত পর্যন্ত জিকির আযকার, ও দোয়ায় লিপ্ত থাকা: রাসূল (সা.) বলেন: আযান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (আহমদ, আবুদাউদ, তিরমিযী)

৩.সম্ভব হলে সূর্য উদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে কুরআন তেলাওয়াত করা, সকাল বেলার যিকিরগুলো আদায় করা। রাসূল (সা.) ফজরের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত মসজিদে বসে অপেক্ষা করতেন।

৪.ফজরের নামাজ জামাতে পড়া: রাসূল (সা.) বলেন; যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতে আদায় করার পর বসে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করবে, অতঃপর দুই রাকাত নামায পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাকে হজ্জ ও ওমরার সাওয়াব দান করবেন। (তিরমিযী)

৫.দোয়া: আল্লাহর নিকট চলতি দিনের বরকতের জন্য দোয়া করা। রাসূল (সা.) বলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দিনের কল্যাণ কামনা করছি, সাহায্য কামনা করছি, বরকত কামনা করছি, হেদায়াত চাচ্ছি, এবং দিনের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

৬.আত্মসমালোচনা করে ঘুমাবে: মায়ায (রা.) বলেন আমি ঘুমন্ত ও জাগ্রত উভয় অবস্থায় আত্মসমালোচনা করি।

৭.কর্মস্থলে যাওয়া: রাসূল (সা.) বলেন; নিজের হাতের উপার্জনই সর্বাপেক্ষা উত্তম উর্পাজন। আল্লার নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে কামাই করে খেতেন। (বুখারী)

৮.দিনভর আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করা। অর্থাৎ আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে কাজকর্ম করা।

৯.দিনের সদকা আদায় করা: ফেরেশতাগণ দানবীর ব্যক্তির জন্য দোয়া করে থাকেন এবং বলতে থাকেন হে আল্লাহ! দানবীর কে সাহায্য কর।

যোহরের সময় করণীয় আমল

১.প্রথম সময়ে যোহরের নামায জামাতের সাথে আদায় করা। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন; রাসূল (সা.) আমাদেরকে হেদায়াতের সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন, তন্মধ্যে একটি হলো যে মসজিদে আযান হয়, সেই মসজিদে নামায পড়া। (মুসলিম)

২.সাওয়াবের নিয়তে বিশ্রাম করা। অর্থাৎ শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য কায়লুলা (বিশ্রাম) করা। কারণ শরীর ও হক রয়েছে।

আসরের সময় করণীয় আমল

১.আসরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত সহ আসর নামায আদায় করার চেষ্টা করা। রাসূল (সা.) বলেছেন; আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে আসরের পূর্বে চার সুন্নত পড়ে। (তিরমিযী, আবুদাউদ)

২.নামাযের পর বসে দারস শোনা, এবং নিজের উদ্যোগে দারসের ব্যবস্থা করা। রাসূল (সা.) বলেন; যে ব্যক্তি মসজিদে এই উদ্দেশ্যে গেল যে, সেখানে গিয়ে ইসলাম বিষয়ক কিছু শিখবে, অথবা অন্যদেরকে শিক্ষা দিবে, তার জন্য রয়েছে একটি পূর্ণ হজ্জের সাওয়াব। (তিবরানী)

৩.মসজিদে কিছুক্ষণ বসা: রাসূল (সা.) বলেছেন; যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে সুন্দরভাবে অযু করে মসজিদে যাবে, সে আল্লাহর মেহমান। আল্লাহর উপর দায়িত্ব এসে যায়, তাকে মেহমানদারী করা।

মাগরিবের সময় করণীয় আমল

১.মাগরিবেরপূর্বের দোয়ায় মশগুল হওয়া। রাসূল (সা.) বলেছেন "তিন ব্যক্তির দু'আ ফিরিয়ে দেয়া হয়না। রোযাদার যখন ইফতার করে, ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ এবং নির্যাতিত ব্যক্তির দু'আ" [তিরমিযী, ইবনেমাজাহ] ।

২.ইফতারের দোয়াটি পাঠ করে ইফতার করা।

৩.জামাতের সঙ্গে প্রথম সময়ে মাগরিবের নামায আদায় করা।

৪.মসজিদে বসে সন্ধ্যার যিকিরগুলো আদায় করা।

৫.পরিবার পরিজনদের কে সময় দেওয়া, তাদের খোজ খবর নেওয়া। রাসূল (সা.) বলেন; তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও হক রয়েছে।

৬.তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

এশার সময় করণীয় আমল

১.প্রথম ওয়াক্তে এশার নামায জামাতে আদায় করা।

২.ইমামের সঙ্গে তারাবীর নামায পূর্ণাঙ্গ আদায় করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস ও সাওয়াবের আশায় কিয়ামুললাইল তথা তারাবীর নামায আদায় করবে, আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। (বুখারী ও মুসলিম)

৩. বিতরের নামায শেষ রাতে পড়া। রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের রাতের নামায যেন বিতর দিয়ে শেষ হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

খোলা প্রোগ্রাম

১.তারাবীর পর সম্ভব হলে রমযান শীর্ষক কোন প্রোগ্রাম রাখা,

২.পরিবারের সবাই কে নিয়ে দরসের ব্যবস্থা করা,

৩.মহল্লায় কোন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হলে, তাতে উপস্থিত হওয়া।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের নামায রোযা এবং সমস্ত নেকআমল গুলো কবুল করুন। আমীন

প্রতিদিন এর রমাদানপরিকল্পনা আমরা এভাবে রাখতে পারিঃ

১.আল-কুরআন তেলাওয়াত প্রতিদিন ১ পারা

২. ব্যাখ্যাসহ অধ্যয়ন ৩০ টি নির্ধারিত বিষয়

৩. অর্থ সহ মুখস্ত্ম করণ ১০ টি বিষয় ভিত্তিক নির্ধারিত অংশ।

৪. দারসুল কুরআন তৈরী বিষয়:সূরা বাকারা ১৮৩-১৮৫

৫. আল-হাদীস অধ্যয়ন ৩০ টি নির্ধারিত হাদীস

৬. আল-হাদীস মুখস্ত্ম করণ ১০ টি নির্ধারিত হাদীস

৭. দারসুল হাদীস তৈরী আরশের নীচে ছায়া সংμান্ও

৮. সাহিত্য অধ্যয়ন (গড় পৃষ্ঠা) ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা

৯. সাহিত্যের নোট তৈরী ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা

১০. অন্যান্য সাহিত্যের নাম:

১১. সালাত- জামা'য়াত সকল ওয়াক্ত জামায়াতের সাথে

১২. তারাবীহ আদায় প্রতিদিন জামায়াতের সাথে

১৩. তাহাজ্জুদ আদায় নিয়মিত

১৪. ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহরী খাওয়ানো হবে সাধ্যমত কতজন-

১৫. ইফতার খাওয়ানো হবে সাধ্যমত কতজন-

১৬. যাকাত দানে উৎসাহিত করা হবে ৫ জনকে উৎসাহিত করণ

১৭. ফিতরা দেয়া হবে পরিবারের সবার ফিতরা প্রদান

১৮. ঈদের পোষাক দেয়া হবে কমপক্ষে ৫ জন।

১.

২.

৩.

৪.

৫.

১৯. নিয়মিত মুসলিস্ন তৈরী করা হবে কমপক্ষে ৫ জন।

১.

২.

৩.

৪.

৫.

২০. ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া হবে কমপক্ষে ৫ জন।

১.

২.

৩.

৪.

৫.

২১. ইসলামী প্রোগ্রামে অংশ নেয়া হবে কমপক্ষে ৫ টি।

১.

২.

৩.

৪.

৫.

২২. ইসলামী বই বিলি করা হবে কমপক্ষে ৫ টি

২৩. ইসলামী ক্যাসেট বিলি করা হবে কম পক্ষে ৩ টি।

রমাদান সম্পর্কে আমার সর্ব শেষ কথাঃ

আদব হল মানুষের জীবনের সৌন্দর্য। ইবাদত-বন্দেগির আদবসমূহ ইবাদতকে উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ করে দেয়। তাই প্রত্যেকটি ইবাদতের রয়েছে কিছু আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার। কিছু আদব হল অবশ্য পালনীয় যা বাস্তবায়ন না করলে ইবাদতটি গ্রহণযোগ্য হবে না, আর কিছু হল মোস্তাহাব অর্থাৎ যা পালন করলে ইবাদতটি পরিপূর্ণতার সহায়ক হয় এবং ইবাদতের মাঝে কোন ক্ষতি হয়ে গেলে তা কাটিয়ে উঠা যায় ও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আমরা এখানে সিয়ামের কতিপয় আদব আলোচনা করব। আমরা যদি এ আদবসমূহ মান্য করে সিয়াম আদায় করতে পারি তবে আল্লাহর ফজলে আমরা সিয়ামের পূর্ণ সওয়াব বা প্রতিদান লাভ করতে সক্ষম হব।

(১) ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা :

সিয়াম পালনকারী তো বটেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হল আল্লাহ যা কিছু আদেশ করেছেন তা পালন করা। আর যা কিছু করতে তিনি নিষেধ করেছেন তার প্রত্যেকটি বর্জন করা। এর নামই হল ইসলাম বা স্রষ্টার কাছে মানুষের পূর্ণ আত্মসমর্পণ। একজন মুসলিম যেমন কখনো নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে পারে না তেমনি অন্য মানুষের খেয়াল-খুশি বা তাদের রচিত বিধানের অনুগত হতে পারে না। যদি হয় তবে তা স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করা হল না। যদি এমনভাবে জীবনকে পরিচালিত করা যায় তবে তাকেই বলা হবে পরিপূর্ণ ইসলাম। আর পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে আল্লাহর রাব্বুল আলামিন আদেশ করেছেন মানুষকে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

يَاأَيُّهَاالَّذِينَآَمَنُواادْخُلُوافِيالسِّلْمِكَافَّةًوَلَاتَتَّبِعُواخُطُوَاتِالشَّيْطَانِإِنَّهُلَكُمْعَدُوٌّمُبِينٌ. (البقرة : 208)

হে মোমিনগণ ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ।

সূরা বাকারা : ২০৮

ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করার নামই হল তাকওয়া। যে তাকওয়া অবলম্বন করতে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। এ তাকওয়ার দাবি হল আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে অবাধ্য হওয়া যাবে না, তাকে স্মরণ করতে হবে ভুলে গেলে চলবে না, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে অকৃতজ্ঞ (কাফির) হওয়া যাবে না। ঈমানদারের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হল, শিরক ও রিয়া মুক্ত থেকে খালেস আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদতসমূহ সম্পাদন করা। এর মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। সালাত বাদ দিয়ে সিয়ামের কি মূল্য আছে ? দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করতে হবে জামাতের সাথে। জামাতের সাথে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুনাফেকি থেকে মুক্তির সনদ নিতে হবে। এরপর যথা সময় জাকাত আদায় করতে হবে। সত্যিকার হকদারকে জাকাত প্রদান করতে হবে। এমনিভাবে যে সামর্থ্য রাখে তার হজ ও ওমরাহ আদায় করতে হবে। সাথে সাথে উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে সকলের সাথে আচরণ করতে হবে। মাতা-পিতার সাথে ভাল আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক সু-দৃঢ় রাখা, প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ, সাধ্য-মত সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এমনিভাবে জাদু-টোনা, সুদি কারবার, মিথ্যা কথা, ধোঁকাবাজি, ঘুসসহ সকল প্রকার দুর্নীতি, মাদক সেবন, ব্যভিচার, সৃষ্টি জীবকে কষ্ট দেয়া ও গান-বাদ্য পরিহার করতে হবে। মানুষের অধিকারগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।

(২) সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত থাকা :

রমজানে সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত না থাকলে সিয়াম কবুলের বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। অনেককে দেখা যায় সিয়াম পালন করে অযথা কথা-বার্তা, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সে খবর রাখে না যে এ সকল অন্যায় কাজ-কর্ম সিয়ামের প্রতিদান লাভে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

তাদের ব্যাপারেই হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

كممنصائمليسلهمنصيامهإلاالظمأ،وكممنقائمليسلهمنقيامهإلاالسهر. (أخرجهالدارمي)

কত সিয়াম পালনকারী আছেন যারা উপোস থাকা ছাড়া আর কিছু পায় না। আর কত রাতজাগা সালাত আদায়কারী আছে যারা রাত্রি-জাগরণ ব্যতীত আর কিছু লাভ করে না। (দারেমী)

অতএব যার উদর সিয়াম পালন করছে তার উচিত তার মুখ, কর্ণ, চক্ষু, হাত ও পা সবকিছুই সিয়াম পালন করবে। সকল অন্যায়-অবৈধ কাজ হতে এ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পবিত্র থাকবে। যেমন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

والصيامجنة،فإذاكانيومصومأحدكمفلايرفثيومئذ،ولايصخب،فإنسابهأحدأوقاتلهفليقلإنيامرءصائم . رواهمسلم

সিয়াম হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম পালনকারী। বর্ণনায় : মুসলিম

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :—

ليسالصياممنالأكلوالشرب،إنماالصياممناللغووالرفث،فإنسابكأحدأوجهلعليك،فقلإنيصائم. رواهابنخزيمةوالحاكم

শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়। মূলত সিয়াম হল : অনর্থক-অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। যদি তোমার সাথে কেউ ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায়, অথবা মূর্খতা সুলভ আচরণ করে তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম পালনকারী। (ইবনে খুযাইমা ও হাকেম)

যদি সিয়াম পালনকারী নিষিদ্ধ কথা ও কাজ-কর্ম পরিত্যাগ না করেন তবে তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পক্ষ থেকে দুঃসংবাদ :—

منلميدعقولالزوروالعملبهوالجهلفليسللهحاجةأنيدعطعامهوشرابه. رواهالبخاري

যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার নিছক পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বোখারী)

(৩) এখলাস অবলম্বন করা :

কোন কাজে এখলাস অবলম্বন করার অর্থ হল কাজটা করার উদ্দেশ্য হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না। শুধু সিয়াম নয়, এ এখলাস ব্যতীত কোন আমল কবুল হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

وَمَاأُمِرُواإِلَّالِيَعْبُدُوااللَّهَمُخْلِصِينَلَهُالدِّينَحُنَفَاءَوَيُقِيمُواالصَّلَاةَوَيُؤْتُواالزَّكَاةَوَذَلِكَدِينُالْقَيِّمَةِ. (البينة : 5)

তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বীন। সূরা আল-বাইয়েনা : ৫

আর সিয়াম পালনে এখালাসের বিষয়টাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

منصامرمضانإيماناواحتساباغفرلـهماتقدممنذنبه .رواهالشيخان

রমজান মাসে যে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

এ হাদিসে ইহতিসাব শব্দ এসেছে। এর অর্থ যে র্এখালাসের সাথে সিয়াম পালন করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার কাছ থেকে প্রতিদানের আশা করার নাম হল ইহতিসাব।

(৪) সুন্নতে নববীর অনুসরণ :

কোন আমল-তা যতই এখালাসের সাথে সম্পাদন করা হোক না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা না হয় তবে তা কবুল করা হবে না। বরং তা আল্লাহর দরবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হবে।

যেমন বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

منعملعملا،ليسعليهأمرنافهورد . رواهمسلم

যে এমন আমল করবে যার প্রতি আমাদের দ্বীনের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম]

যার প্রতি আমাদের দ্বীনের নির্দেশ নেই-কথাটির অর্থ হল যা আমাদের সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এমন সকল আমল যতই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করা হোক তা রাসূলুল্লাহ স.-এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত না হওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব কোন ধর্মীয় আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দুটো শর্ত। তা হলে : এক. কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করতে হবে। দুই. কাজটি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে সম্পাদন করতে হবে। কাজটি যদি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে সম্পাদন করা না হয় বা এ কাজে তার অনুমোদনের প্রমাণ না থাকে তাহলে কাজটি করে কোন সওয়াব অর্জিত হবে না। বরং গুনাহ হবে।

(৫) যা কিছু সিয়াম ভঙ্গের সহায়ক তা পরিহার করে চলা :

সিয়াম পালনকারীর এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যে, যে সকল আচার-আচরণ সিয়াম ভঙ্গ করার কারণ হয় অথবা সিয়াম নষ্ট করার সহায়ক হয় এমন সকল বিষয় থেকে দুরত্ব বজায় রাখা। বিশেষত: স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন, চুম্বন বা এক কাঁথা কম্বলের নীচে শয়ন করা ইত্যাদি পরিহার করা উচিত। এ সকল কাজ যদিও সিয়াম অবস্থায় করার অনুমতি আছে কিন্তু দেখা গেছে এ সকল কাজ করতে যেয়ে অনেকে সমস্যায় পড়ে গেছে ফলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে গেছে। প্রত্যেক বিষয়ের একটি সীমানা আছে, এ সীমা যাতে অতিক্রম না হয়ে যায় এ লক্ষ্যে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য হাদিসে নির্দেশ এসেছে। যদিও সীমানা পর্যন্ত যাওয়া বৈধ কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন বিধেয়। মনে রাখতে হবে রমজানের দিনের বেলা সিয়াম ভেঙে ফেলা একটি কবিরা গুনাহ। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি বা এমনটি হবে বুঝতে পারিনি বলে কবিরা গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ ধরনের কথা কখনো অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

(৬) ভয় ও আশা পোষণ করা :

প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হল সকল ইবাদত ও সিয়াম-সালাত সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা। কিন্তু সে জানে না তার এ সালাত ও সিয়াম আল্লাহ কবুল করেছেন না প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতএব তার সর্বদা এ ভয় থাকা উচিত যে, হয়তো আমি আমার ইবাদত এমনভাবে আদায় করতে পারিনি যেভাবে আদায় করলে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। ফলে আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান হয়তো পাব না। আবার এ আশাও পোষণ করা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে আমার ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে আমার ইবাদত-বন্দেগি কবুল করে আমাকে প্রতিদান দেবেন। এ অবস্থার নাম হল আল-খাওফ ওয়ার রজা অর্থাৎ ভয় ও আশা। এটা ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ আকীদাগত পরিভাষা। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা সকলের নেক আমল কবুল করেন না। যেমন তিনি বলেন :—

إِنَّمَايَتَقَبَّلُاللَّهُمِنَالْمُتَّقِينَ. (المائدة : 27)

অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কাজ কবুল করেন। সূরা মায়েদাহ : ২৭

হাদিসে এসেছে আয়েশা রা. এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ স.-কে জিজ্ঞেস করলেন :—

(والذينيؤتونماآتواوقلوبهموجلة) أيخائفة. أهمالذينيشربونالخمرويسرقون؟قال : لايابنتالصديق،ولكنهمالذينيصومون،ويصلونويتصدقونوهميخافونأنلاتقبلمنهم. أولئكيسارعونفيالخيراتوهملهاسابقون. رواهالترمذي

যারা তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে-আল্লাহ এ কথা কাদের জন্য বলেছেন, যারা মদ্য পান করে, চুরি করে তাদের জন্য ? তিনি উত্তরে বললেন : না, হে সত্যবাদীর কন্যা ! তারা হল, যারা সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে, দান-সদকা করে সাথে সাথে এ ভয় রাখে যে হয়তো আমার এ আমলগুলো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। বর্ণনায় : তিরমিজি

বর্ণিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হল যে, আল্লাহ ঐ সকল মুনিমদের প্রশংসা করেছেন যারা নেক আমল করে কবুল হবে কি হবে না এরকম একটা ভয় পোষণ করে। এবং কাজ আরো সুন্দর করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ ভয় যেন আবার মানুষকে নৈরাশ্যবাদী না করে।কেননা কোন অবস্থাতেই কোন মুসলিম আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। আল্লাহর সম্পর্কে নৈরাশ্যবাদী হওয়া একটা কুফরি। নেক আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে প্রবল আশাবাদী হতে হবে কিন্তু এ আশাবাদী মনোভাব যেন অহংকার ও আত্ম-তৃপ্তিতে ফেলে না দেয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অহংকার ও আত্ম-তৃপ্তি নেক আমলকে বাতিল করে দেয়। অনেক সময় অলসতা নিয়ে আসে। অপরদিকে ভয় মানুষকে তৎপর ও কর্মঠ হতে সাহায্য করে। তাই সকলের উচিত সকল প্রকার নেক আমল করতে হবে ভয় ও আশা নিয়ে। শুধুই ভয় অথবা শুধুই পাওয়ার আশায় নয়।

(৭) সেহরি খাওয়া :

সিয়াম পালনের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

تسحروا،فإنفيالسحوربركة. (رواهالبخاريومسلم)

তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

সেহরি না খেয়ে সিয়াম পালন করলে যখন সিয়াম আদায় হবে। তবে সেহরি খাবেন কেন ?

(ক) সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসেহরি খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

(খ) ক্ষুধা-পিপাসা মোকাবিলা করার জন্য।

(গ) সেহরি খেলে সিয়াম পালনে কষ্ট কম হয় ও সিয়াম পালন সহজ হয়।

(ঘ) ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধাচরণ করা। কারণ তারা সিয়াম পালন করতে সেহরি খায় না। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

فصلمابينصيامناوصيامأهلالكتابأكلةالسحور. (رواهمسلم)

আমাদের ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের সিয়ামের মাঝে পার্থক্য হল সেহরি খাওয়া। বর্ণনায় : মুসলিম

(ঙ) সেহরির মাধ্যমে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

(চ) ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করা নিশ্চিত হয়।

তাই সেহরি খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে সেহরির খাবার হালকা হওয়া ভাল। এমন বেশি খাওয়া উচিত নয় যাতে দিনের বেলা কাজ-কর্মে অলসতা দেখা দেয়। যে কোন হালাল খাবার সেহরিতে গ্রহণ করা যায়। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

نعمسحورالمؤمنالتمر. (رواهأبوداود)

মোমিনের উত্তম সেহরি হল খেজুর। বর্ণনায় : আবু দাউদ।

তিনি আরো বলেন :—

السحورأكلةبركةفلاتدعوه،ولوأنبجرعأحدكمجرعةمنماء،فإناللهوملائكتهيصلونعلىالمتسحرين. (رواهأحمد)

সেহরি হল একটি বরকতময় খাদ্য, তাই তা তোমরা ছেড়ে দিয়ো না। এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সেহরি করে নাও। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ফেরেশ্‌তাগণ সেহরিতে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন। বর্ণনায় : আহমদ

(৮) দেরি করে সেহরি খাওয়া :

সেহরির অর্থ হল যা কিছু রাতের শেষ ভাগে খাওয়া হয়। সুন্নত হল দেরি করে সেহরি খাওয়া। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসর্বদা শেষ সময়ে সেহরি খেতেন। ফজরের ওয়াক্ত আসার পূর্বক্ষণে সেহরি খেলে সিয়াম পালন অধিকতর সহজ হয়, ফজরের সালাত আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কষ্ট করতে হয় না। সতর্কতা অবলম্বন করে ফজরের অনেক আগে সেহরি শেষ করা সুন্নত নয়। সেহরি সময় শেষ হলো কি-না তা জানবেন নিজের চোখে পূর্বাকাশের শুভ্রতা দেখে, অথবা ক্যালেন্ডার ও ঘড়ির মাধ্যমে সূক্ষ্ম হিসাব করে কিংবা নির্ভরযোগ্য মুয়াজ্জিনের ফজরের আজান শুনে।

(৯) সেহরির সময়কে সুযোগ মনে করে কাজে লাগানো :

সেহরির সময় অত্যন্ত মর্যাদা-পূর্ণ একটি সময়। এ সময় জাগ্রত হওয়ার কারণে আল্লাহ যা পছন্দ করেন এমন অনেক ভাল কাজ করা যায়। যেমন তিনি মোমিনদের প্রশংসায় বলেছেন :—

وَبِالْأَسْحَارِهُمْيَسْتَغْفِرُونَ. (الذاريات :18)

তারা শেষ রাতে (সেহরির সময়) ক্ষমা প্রার্থনা করে। সূরা জারিয়াত : ১৮

তিনি এ আয়াতে ঐ সকল জান্নাতবাসী মানুষদের প্রশংসা করেছেন যারা শেষ রাতে দোয়া-প্রার্থনা করে ও ক্ষমা চায় আল্লাহর কাছে। এর মাধ্যমে তারা যে জান্নাত লাভ করবে এর সুসংবাদও দেয়া হয়েছে। সেহরির সময়টা এমন একটি সময় যখন আল্লাহর রাব্বুল আলামিন দুনিয়ার নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন। যে সকল মানুষ তখন তার প্রতি আগ্রহী হয়ে সালাত ও দোয়া-প্রার্থনা করে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

ينـزلربناتباركوتعالىكلليلةإلىالسماءالدنياحينبيقىثلثالليلالآخر،فيقول: منيدعونيفأستجيبله،منيسألنيفأعطيه،منيستغفرنيفأغفرله. رواهالبخاريومسلم

আমাদের মহান প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তখন মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যে আমার কাছে দোয়া করবে আমি তাতে সাড়া দেব, যে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব ও যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

অতএব সেহরির সময় হল আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি দান-প্রতিদানের সময়। এ সময় সে ব্যক্তিই তার সামনে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন যিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব ভালভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের নিয়তকে বিশুদ্ধ করেছেন। অনেক মানুষ এমন আছেন যারা এ সময় জাগ্রত হয়ে খাওয়া-দাওয়াসহ অনেক কাজ সমাধা করেন কিন্তু দোয়া- প্রার্থনা. ইস্তিগফার, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার সুযোগ করে নিতে পারেন না। শেষ রাতের সালাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন :—

ياأيهاالناسأفشواالسلام،وأطعمواالطعام،وصلواالأرحام،وصلوابالليلوالناسنيام،تدخلواالجنةبسلام. رواهالترمذي

হে মানবসকল ! তোমরা সালামের প্রচলন কর। অন্যকে খাবার দাও। আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা সালাত আদায় কর তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে যেতে পারবে। বর্ণনায় : তিরমিজি

প্রিয়মুসলিমভাইওবোনেরারমজানহচ্ছেশপথওআনুগত্যেরনবায়নওপ্রশিক্ষনওসংশোধনেরউত্তমসূযোগ।পূর্নএকমাসেরট্রেনিংশেষেযেশিক্ষাঅর্জনকরাহয়েছেতারএকদীপ্তশপথনিয়েবাকিএগারটিমাসকাটাবো।রমজানহচ্ছেআত্বারউন্নতিরউপায়,যাতেকরেদৃড়সংকল্পওইচ্ছাশক্তিরঅধিকারিহতেহবে।

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান নসিব করান, তার হক আদায় করার তাওফীক দান করুন, জীবনের সকল গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার তাওফীক দান করুন, রমজানের শিহ্মাকে জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিপুর্ন মুমিন হওয়ার তাওফীক দান করুণ ।

হে স ম্মানিত মুমিন ভাই ও বোনেরা রমজান হচ্ছে অল্প ইবাদাতের মাধ্যমে বেশী পুরুষ্কার লাভ করার উত্তম মাধ্যম,আমরা যেন মহামূল্যবান রমজানকে সাফল্যের সাথে কাজে লাগাতে পারি,আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সে তাওফিক কামনা করছি।

--------------------------------------------আমীন---------------------------------------------

গ্রন্থপুঞ্জিঃ

 কোরআন শরীফ।

 হাদিস।

 সিয়াম।

 যাকাত,সাওম,ইতেকাফ।

 রোযার মর্ম কথা।

 কুরআন,রমজান,তাকওয়া।

 সিয়াম ইলম ও মুমিনের গুণাবলি।

 রমজানের তিরিশ শিক্ষা।

মু আতীকুর রহমান।

E-mail:

Mob:01813939188

বিষয়: বিবিধ

২৯১৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238640
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০৫
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : খুবই গুরত্বপূর্ণ লিখা,আল্লাহ লেখক এবং প্রচারকারী উভয়কে উত্তম বিনিময় দান করুক, তবে আরো ছোট করে পর্বাকারে দিলে ভাল হত। কারণ বড় লেখা অনেকে পড়তে চায়না।
238659
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি।
238867
২৫ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৭
ভিশু লিখেছেন : সময়োপযোগী মূল্যবান পোস্ট!
Praying Praying Praying
238982
২৬ জুন ২০১৪ রাত ০২:০১
মু আতিকুর রহমান লিখেছেন : ভালো লাগলো
239146
২৬ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৮
239148
২৬ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৪০
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : [url=http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6743/muhammadjbd/47865#.U6wFFEBatoI]link[/url]

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File