বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি ঘৃণার ফিরিস্তিঃ আমি বেয়াদব হতে চাই!

লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ০১ মার্চ, ২০১৫, ০৪:৪৭:৪২ বিকাল

অস্তিত্ব সংকটে পড়া জাতির জন্য ইতিহাস অধ্যয়ন খুব বেশি জরুরি। নিজস্ব স্বকীয়তা ধরে রাখার মধ্য দিয়ে কোনো জাতির উন্নতি আর অগ্রগতি বহমান থাকে। মাঝে মাঝে মন ভরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মন ভরে গালি দেই। আর দিবনা কেন বলুন দেখি জাতির এই দিশেহারা অবস্থার জন্য দায়ী কারা?? হুমায়ুন আহমেদ তার শেষ বই “দেয়াল” এ খুব দারুণ একটা সত্য কথা নির্দ্বিধায় বলে গেছেন। “ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা হয় মেরুদন্ড বিহীন”। উনি নিজে একজন ভার্সিটির টিচার হবার পরেও এই ধরণের একটা সাহসী কথা বলেছেন এজন্য নিঃসন্দেহে ধন্যবাদের যোগ্য তিনি। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলছিনা। তোলার মত যোগ্যতা আমাদের অনেকের হয়নি এখনো!

কথা ঘুরে গেল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকরা, নামের আগে পিছে যাদের অনেকেরই কয়েক ডজন ডিগ্রী লাগানো আছে। কোনটা দেশের, কোনোটা আবার দূর পাশ্চাত্য বা প্রাচ্যের। তারা আমাদের শিখান যে কোন ঝামেলায় যাবেনা তোমরা। কয়েক ডজন বা তার বেশি শিক্ষকদের ক্লাস করার সৌভাগ্য হয়ে গেছে খোদার ফজলে। তারা আমাদের শিখান ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড হবার জন্য। দেশের বাইরে যাবার জন্য cgp কত জরুরত বহন করে এ নিয়ে ছাত্রদের চাইতে শিক্ষকদের মাথা ব্যথার কোনো অন্ত নেই। হাতে গোণা কিছু আদর্শবাদী শিক্ষক আছে যারা মুখ ফুটে কিছু বলেন, তাও মনে হয় ভয়ে আত্মা কম্পমান। জাতির বিবেক, জাতির আত্মা হবার কথা এই সব শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীদের। কিন্তু তারা কি পেরেছেন? খুব ভালোমত জানি আমার এই ক্ষুদ্র লেখা আমার কোনো শিক্ষক তো দূরে থাক আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরও চোখে পড়বে না। আর পড়লেও অর্বাচীন আর বেয়াদপ খেতাব তো জুটে যাবেই।

কিন্তু প্রশ্ন হল আসলে শিক্ষকরা পেরেছেন কি? তাদের তালেবে এলেম হয়েই তো আজকে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো প্রতি বছর জ্যামিতিক হারে জানোয়ার উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। কি লাভ প্রতি বছর এত গ্রাজুয়েট ছাত্র বের হয়ে। এক কলমের খোঁচায় অনেক মানুষকে বঞ্চিত করে চলছে তাদের প্রাপ্য হক্ব থেকে এই শিক্ষকদের থেকে শিক্ষা পাওয়া ছাত্ররাই। আরে, বইয়ে তো সব লিখা থাকেই, তারপরেও কেন দরকার হয় এক একজন নামকরা বাঘা বাঘা শিক্ষাগুরুর? সন্ত্রাস আর মনুষ্যত্ব ভুলার শিক্ষা দেয়ার জন্য নয় নিশ্চয়ই। দেশ পরিচালনা করে কিছু মূর্খ আর পাড়ার সন্ত্রাসী টাইপ মানুষ। আজকে যে ছেলেটা পাড়ার চরম বেয়াদব, যার বিরুদ্ধে অপকর্মের ফিরিস্তি লিখতে গেলে হাত ব্যথা হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে সেই ছেলেটাই জোয়ান হয় হবে দুর্দান্ত মাস্তান, কয়দিন পর হবে পাড়ার নেতা, এমপি। তারপর একদিন দেখা যাবে সংসদের মহান পবিত্র চেয়ারে ঘুমাতে! বড় বিচিত্র রীতি আমাদের। এই ভাবে অযোগ্যদের জায়গা ছেড়ে দেবার সিলসিলার সূচনার জন্য কি শুধু আমরা একাই দায়ী? আমার তো মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সবচাইতে বেশি দায়ী। আমি ঢালাওভাবে অবশ্যয়ই তাদের দোষারোপ করব। তারাই তো শিক্ষা দেয় সব ঝামেলা থেকে দূরে থাক বাছা! জীবনে মঙ্গল হবে! বউ-বাচ্চা নিয়ে ছাপোষা জিন্দেগীর হাতছানি তারাই প্রথম দেখায়। দরকার নাই বাবা তোমার নেতা হবার। ওদেরকে লুটে পুটে খেতে দেওনা! যা হবার হোক!! এই মানসিকতার বীজ বপন করে এই শিক্ষকরাই।

শিক্ষকদের মান আজ কোথায় এই প্রশ্ন এখন উঁকি দেয় মনে। জানি আর বেশিদিন উঁকি দেয়ার সম্ভাবনা নাই। কিছুদিনেই অভ্যস্ত হয়ে যাবার কথা। তাঁরা ছাত্রদের শিখাতে পারেনি পরমতকে অস্বীকার করলেও সেই মতকে শ্রদ্ধা করা উচিত। সংঘর্ষ হবে মতের সাথে মতের, আদর্শের সাথে আদর্শের। আদর্শ ধারণকারী মানুষটিকে বানাতে হবে আপনের চেয়ে বেশি আপন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কয়েকমাস আগে কোনো এক শীতের বিকেলে এক দাঁড়িয়ালা ভাইকে ধরা হল। ক্যাম্পাস জুড়ে রীতিমত উৎসব রব। শিবির ধরা গেছে একটা। আনা হল অডিটোরিয়ামের সামনে। হাত বাঁধা হল, পা বাঁধা হল। পাড়ার চোরকে যেমন করে বেঁধে রাখা হয় তেমনি বাঁধা হল তাঁকে গাছের সাথে। আর কয়েকমাস পড়ে যেই ছেলেটি বের হবে এক সফল প্রকৌশলী হয়ে তাঁকে পেটানো শুরু হল এলোপাথারে। অপরাধ তো একটাই। শিবির করে! সবচেয়ে যে বিষয়টা মজার খেলার মাত্রা দিল তাহল যেস্থলে এই ‘শিবিরবধ’ চলছে তার ঠিক সামনেই দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাস। বাসে বসা ফ্যাকাল্টির ডিন, ডিপার্টমেন্টাল হেড সহ জাঁদরেল সব প্রফেসর। এত বড় জ্ঞানীদের কেউ বাস থেকে নামল না একবারের জন্য। জিজ্ঞেস করলনা এই ছেলের অপরাধ কি! ডাঃ শামসুজ্জোহা কি আর এই যুগে পাওয়া যাবে?? তাঁরা তো সেই পাকিস্তান আমলেই বিদায় নিয়েছেন! যুগ বদলাইছে না!! আরে ভাই বলেন, আমাদের যে শিক্ষকরাই এত বিশাল বিবেকের চাষবাস করেন তাদের সাগরেদ হয়ে আমরা কি করব এত বিচলিত হয়ে??

বিষয়: বিবিধ

১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File