ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ইসলাম কি বলে?"

লিখেছেন লিখেছেন ডাক্তার রিফাত ০৭ মার্চ, ২০১৪, ১১:৪৪:১৫ রাত



২৪ জানুয়ারী ২০১৪ শুক্রবার।ফজরের নামাজের পর মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে প্রসব ব্যাথায় কাতর এক পাগল মহিলাকে ঘিরে কিছু কুকুরের তীব্র আর্তনাদ।মানুষরূপী কোন জানোয়ারের লালসার শিকার হওয়া পাগলীর প্রসব বেদনায় কাতর কুকুর গুলো তীব্র স্বরে খেউ খেউ করে আশপাশের মানুষগুলোকে জানিয়ে দিচ্ছিল অনাগত সন্তানের আগমনী বার্তা।যদি কেউ এগিয়ে আসে!সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়!

নারী নির্যাতনের ছোট্ট এক ছবি।

আজ একদিকে আমরা নারী স্বাধীনতার কথা শুনছি,ঠিক তার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে নারী নির্যাতনের মত ভয়ঙ্কর কিছু চিত্র।আজ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে,পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা।কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য বন্ধ হয়নি নারী নির্যাতন!

গেল ২০১৩ বছরটি নারীর জন্য ছিলো আতঙ্ক,দূর্ঘটনা আর নিরাপত্তাহীনতার বছর।যেকোন দুর্যোগেই নারীকেই হতে হয় প্রধান শিকার।তাই রানা প্লাজা ধসে যেমন সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে নারীকে,তেমনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও এই নারীকেই হতে হয়েছে অপদস্ত।

খুব সংক্ষেপে নারী নির্যাতনের চিত্র-২০১৩

ইভটিজিং-৪৯৪জন

আত্মহত্যা-২৪জন

ধর্ষন-৯৭৫জন

গনধর্ষন-১৮৫জন

ধর্ষনের পর হত্যা-৯৪জন

ধর্ষনের চেষ্টা-১৫৩জন

শ্লীলতাহানির শিকার-১৫৪জন

এসিদ সন্ত্রাসের শিকার-৫০জন

এসিডে মৃত্যুবরণ করেছে-৪জন

অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়-২৭জন;নারী নির্যাতনের এই চিত্র পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নেয়া।বাস্তব অবস্থা এর চেয়ে আরো ভয়াবহ।এছারাও ছিলো যৌতুকের জন্য নির্যাতন,ফতোয়ার শিকার নারী,গৃহপরিচারিকা নির্যাতন।

প্রতিটি ক্ষণ নানাভাবে নারী আজ নির্যাতিত ও শোষিত হচ্ছে।বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।

নারী নির্যাতনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রূপ হচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতন। প্রতি তিন জন নারী’র একজন তার স্বামীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছে। যে নারী ও পুরুষ জীবনে সুখী হওয়ার জন্য সংসার জীবন গড়ে তুলেছেন, তাদের কাছে এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত দুঃখজনক। পবিত্র কোরানের সুরা রূমের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “মহান আল্লাহ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা পরস্পরের কাছে সুখ ও আল্লাহ’র রহমত লাভ করতে পারো। যারা চিন্তাশীল তাদের জন্য এতে আল্লাহর মহিমার নিদর্শন রয়েছে।” কিন্তু যে সব পুরুষ তাদের ঘরকে নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত করেন, যারা শুধু স্ত্রী নয় সেই সাথে সন্তানদেরকে শারিরীক ও মানসিকভাবে কষ্ট দেন, তারা আল্লাহ’র দৃষ্টিতে অত্যাচারী।

ইভটিজিং আজ এদেশে সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে।প্রতিরোধ আইন থাকা সত্যেও নিত্য-নতুন কৌশলে আবির্ভূত হচ্ছে ইভটিজিং। এদিকে ইভটিজারদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে নাম জানা-না জানা বহু কিশোরী।শুধু তাই নয়, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমানকে, মেয়ের জন্য প্রাণ হারাতে হয়েছে মা চাঁপা রানী ভৌমিককে, নাতনিকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় প্রাণ দিতে হয়েছে নানাকে।

এখন ইভটিজিং শুধু রাস্তা-ঘাটে বা স্কুল-কলেজেই সীমাবদ্ধ নয়,বিভিন্ন কায়দায় ইভটিজিং করা হচ্ছে যেমন—মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে।অনেক তরুণীর ভিডিওচিত্র মোবাইলে ধারণ করে পরিবারের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।অন্যদিকে ইভটিজারদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে এ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আসলে প্রাচীন গ্রীস থেকে শুরু করে সময়ের শত পট পরিবর্তন সত্ত্বেও বর্তমান পর্যন্ত প্রতিটি সভ্যতাই নারীকে প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার দিতে আজ পুরোপুরি ব্যর্থ।নারী কখনো ভোগের সামগ্রী,কখনো দাসী,কখনো জীবন্ত পুঁতে ফেলার আপদ।যুগে যুগে দেশে দেশে নারীর প্রতি বৈষম্য,বঞ্ছনা,লাঞ্ছনা এবং নারীকে নিয়ে টানা হেচড়ার এক নির্মম নির্লজ্জ ইতিহাস।ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কোন কালে কোন দেশেই মানুষ হিসেবে কিংবা নারীকে নারী হিসাবে তার যথার্থ মুল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।যার ফলে নারীদের লাঞ্ছনা আর দুর্গতির ইতিহাসই আমাদের চোখে পড়ে।শুধুমাত্র এবং একমাত্র ইসলামই নারীকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব,কর্তব্য,অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। ইতিহাস জ্বলন্ত সাক্ষী,কিভাবে ইসলাম নারী জাতির মর্যাদাকে জীবনমৃত অবস্থা থেকে উঠিয়ে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্টিত করেছে।ইসলাম পুরুষের মতই নারীকেও মর্যাদাবান করেছে।নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদুত কে?কে সর্বপ্রথম শুনিয়েছে নারীর জীবনে প্রকৃত মুক্তির বানী?হ্যা, মানবতার দিশারী মহানবী (সঃ) বিশ্বে সর্বপ্রথম শুনিয়েছে নারীর মানবীয় সত্তার স্বীকৃতি।পবিত্র কোরআনে এভাবেই ঘোষনা হয় “হে মানুষ;তোমাদের স্রষ্টার ব্যাপারে সাবধান হও,সতর্ক হও।যিনি একক অস্তিত্ব থেকে তোমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন ।একই সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সহচরকে এবং এই উভয় থেকে বিস্তৃত করেছেন অসংখ্য নারী পুরুষকে।“

বিষয়: বিবিধ

১৯৬০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188737
০৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:১৯
সজল আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
188763
০৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৫১
হতভাগা লিখেছেন : 'নারী নির্যাতনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রূপ হচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতন। প্রতি তিন জন নারী’র একজন তার স্বামীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছে। ''

০ ইসলাম ধর্মে স্ত্রীকে প্রহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে স্বামীকে একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে ।

এটাকে এখন নির্যাতনের কালার দেওয়া হচ্ছে




আজকের প্রথম আলোর প্রথম পাতাতেই এই জরিপ এসেছে ।

মুসলমান নামধারী মেয়েরা যতই নিজেদের ইসলাম মনঃষ্ক বলে চেষ্টা চালাতে থাকে না কেন , তাদের আচার আচরনে তারা যে ইসলামী শরিয়তের বিরোধী তা প্রকাশ পায় :

১. এই জরিপের ৮৯% পুরুষ যা বলেছে তা কিন্তু ইসলাম ধর্মেই বলা আছে । অথচ এটাকে নারী নির্যাতনের কালার দেওয়া হয়েছে ।
শরিয়তের এই আদেশকে নির্যাতন হিসেবে ফেলে এটার বিরুদ্ধে আইন বানানো হয়েছে । মামলাও হচ্ছে ।


কোন নারীকে আইসিডিডিআরবি এর এই জরিপকে বলতে দেখা যায় না যে, অন্যায় করলে স্ত্রীকে মারার অধিকার আমার ধর্মই আমার স্বামীকে দিয়েছে ।

০ কোন নারীকে বলতে দেখা যায় না যে আমার ধর্মই আমার স্বামীকে ৪ টা পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দিয়ে রেখেছে , সেখানে তাকে আমার কাছ থেকে অনুমতি নেবার প্রশ্নই আসে না । মামলা ঠুকাও না ।

০ সম্পত্তির সমবন্টনের ব্যাপারে উনাদের গলা খুব চড়া হয়ে উঠে । কিন্তু এটা বলে না যে আমার ধর্ম আমার ভাইকে আমার চেয়ে ২ গুন দিতে বলেছে , কারণ তার দায়িত্ব আমার চেয়ে অনেক বেশী ।

০ স্বামী তার জন্য খরচ করার পরেও সে স্বামীর উপর বসিং করে । এটা বলে না যে আমার বসিং করার কোন অনুমতি আমার শরিয়ত আমাকে দেয় না ।




এটা রবি ঠাকুরে. ''রবির দশা '' আপনাদের জন্য । যার গান আপনাদের স্বনামধন্য এক স্বজাতির কাছে ইবাদত তুল্য(নাউজুবিল্লাহ) । যার গান শুনতে শুনতে এতটাই মগ্ন হয়ে যাওয়া যায় যে সামনে আর কি ঘটেছে মনে থাকে না ।

''নারীদের ছলনা ভয়ংকর''- সূরা ইউসূফ

সূরা ইউসূফের ঘটনায় আমরা জানতে পারি যে নারীদের যে আমরা ধোয়া তুলশী পাতা মনে করি আদতে তা একেবারেই ঠিক নয় ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File