মুসলিমরা কেন মার খাচ্ছে?

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নীল৫৬ ১১ জুলাই, ২০১৪, ১২:১৩:০৯ দুপুর

মুসলিমরা আল্লাহর প্রিয়. তবুও আমরা কেন বারবার মার খাচ্ছি? কোথায় গলদ ? আসুন একটু দৃষ্টি দেয়া যাক

ক. ঈমান- মুসলিমরা সঠিক ঈমান হারিয়ে ফেলেছে . আজ অনেকেই জানেনা কি কি জিনিস তাকে বিশ্বাস করতে হবে ? সে যে শুধু আল্লাহরই গোলামী করবে . গোলামী করবে না নিজের ইচ্ছার, কোনো নেতার বা কোনো পীরের .

খ. জ্ঞান-ইসলামের উপর সম্যক ধারণা অনেক মুসলিমের নেই . সরাসরি কোরআন ও সুন্নাহ পড়ার অভ্যাস নেই অনেকেরই . বিভিন্ন আলেম বা পীরের বই পড়ে কিন্তু মূল গ্রন্থ অর্থ বুঝে পড়তে চায় না . শুধু তিলওয়াত করে সোয়াব নিতে চায় কিন্তু নির্দেশগুলো শুনতে চায় না .

গ. অনৈক্য – মুসলিমরা এক জাতি . তাদের একজন নেতা থাকবে এটাই ছিল স্বাভাবিক ,যেমন ছিলেন রাসুল (সা) . আজ মুসলিমদের কোনো নেতা নেই . হাজার হাজার দল . হাজার হাজার মত. আর নিজেদের মাঝে আছে মারামারি . অথচ হিন্দু, খ্রিস্টান কিংবা ইয়াহুদীরা নিজেদের মাঝে ধর্মীয় কারণে মারামারি করছে এমনটা এখন আর শুনা যায় না .

ঘ. আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজ দায়িত্ব পালন না করা –আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সাহায্য করবেন বান্দার চেষ্টা ও দোয়ার ভিত্তিতে . আজকে আমরা শুধু দোয়া করতে চাই কিন্তু চেষ্টা করতে রাজি না . পরীক্ষা পাশের জন্য বই পড়ছি না, শুধু দোয়াই করে যাচ্ছি . শুধু দোয়াতে কাজ হলে নবীজী (সা)কে আর যুদ্ধ করতে হতো না .

ঙ. আমল-আজ নামধারী মুসলিম ভুরি ভুরি . কিন্তু শুধু পাচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতে পড়ে কয়জন ? আর বাকি আমলগুলোর কথা নাইবা বললাম .

চ. আকিদা-মুসলিমদের জন্য রাসুল সা দুটি জিনিস রেখে গেছেন –এক কোরআন দুই সুন্নাহ . এ দুটিকে আকড়ে ধরলে কখনো বিভ্রান্ত হবে না মুসলিমরা তিনি বলেও গেছেন . কিন্তু আমরা এ দুটি বাদ দিয়ে কত যে মতবাদকে আকড়ে ধরলাম তার ইয়ত্তা নাই .

ছ. জামাত বদ্ধ শক্তি –শুধু সংখ্যা বৃদ্ধি তেমন কোনো কাজে আসে না . যদিনা প্রত্যেকে এক নেতার পেছনে একই উদ্দশ্যে কাজ করে . যেমন কোনো আর্মিতে যদি কোনো কমান্ডার না থাকে সৈন্যরা একা একা কে কিভাবে কাজ করবে বুঝে উঠতে পারবে না .বা কমান্ডারের কথা না শুনলে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবে না . যুদ্ধে তারা হেরেই যাবে . মুসলিমদেরও এক নেতা এক উদ্দেশ্য থাকতে হবে .

জ. পরিস্থিতি আমলে না নেয়া-রাসুল (সা ) মক্কী জীবনের ১৩ বছর শুধু মার খেয়েছেন . মার দেন নি . সে সময় চলেছে শুধু দাওয়াতি কাজ ও জন কল্যানমূলক কাজ . পরবর্তিতে শক্তি অর্জন করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন অনাচার দূর করার জন্য . দাওয়াত আর জনকল্যানমূলক কাজ চলেছিল সব সময় . আজকে অনেকেই অপরিপক্ক অবস্থায় জিহাদে নেমে পড়ে নিজের ও আন্দোলনের সমূহ ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসেন , বুঝতে হবে কোন পরিস্থিতিতে কি করবেন ?

অনেক নবী শুধু দাওয়াতি কাজ করেই জীবন শেষ করেছেন . যুদ্ধ জয় করার পরিস্থিতিতে ছিলেন না .

ঝ. জিহাদ ছেড়ে দেয়া- অফেন্স ইজ ডিফেন্স . আজ আমেরিকাকে আমরা কেন ভয় পাই . কারণ তার সামরিক শক্তি আছে , সে সবার উপর খবরদারি করে . মুসলিমরা জিহাদের কথা ভুলেই গেছে . অথচ ইজরাইল তার প্রত্যেক জনসাধারণের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে. যেদিন থেকে মুসলিমরা জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে সেদিন থেকেই কুফর শক্তি মাথা চাড়া দিয়েছে .

ঞ. নেতা নির্বাচন পদ্ধতি ও আনুগত্য –নেতা কিভাবে নির্বাচন করবো এটা মুসলিমরা ঠিক করতে পারছে না . এখানে দুটি ক্রাইটেরিয়া – এক নেতা নিজে নেতা হতে চাইবেন না , দুই তিনি সত্ ও যোগ্য হবেন . নেতা নির্বাচনের জন্য প্রথমে সত্ ও যোগ্য লোকদের মনোনিত করবে একটি বোর্ড, তারপর গোপন ভোটের মাধ্যমে যোগ্য লোকদের মধ্য হতে একজন নেতাকে নির্বাচিত করতে হবে .যাকে অধিকাংশ মানুষ চায় . কোনো রকম প্রচার প্রচারণা চলবে না . শুধু জানিয়ে দেয়া হবে যোগ্য লোকদের লিস্ট . যিনি নেতা নির্বাচিত হবেন তাকে সবাই মেনে নিবেন . নেতার আনুগত্য সব সময় করতে হবে ব্যতিক্রম হবে অন্যায় কাজে . নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা যাবেনা যতক্ষণ সে নামাজ কায়েম করে . যদিও নেতার ভুলগুলোর ব্যাপারে মৌখিক ভাবে তাকে সতর্ক করতে হবে .

ট. লং টার্ম পরিকল্পনার অভাব- মুসলমানরা কেন জানি মাথা গরম । দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রনয়ন ও তার বাস্তবায়ন করার চেষ্টা আমাদের মাঝে নেই যা আছে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের মাঝে । কাজের আগেই যদি আপনি না জানেন কিভাবে কখন কি কাজ করবেন তাহলে অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছতে পারবেন না ।

আসলে ঈমান আমল সব দিকেই আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি . আল্লাহর প্রিয় হিসেবে নিজেরা দাবি করলেও সত্যিই আল্লাহর প্রিয় হিসেবে থাকতে পারছি না কারণ আমাদের কাজ প্রিয় হবার দাবিদার না

বিষয়: বিবিধ

১৪২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

243744
১১ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : সত্যি কথা বলেছেন এবং এটাই যথার্থ। দ্বিতীয়ত, ইসলামী দলগুলো এর আমুল পরিবর্তনের জন্য টার্গেট নিয়ে কাজ করলেও যে পরিমাণ নেতা কর্মী দ্বীনকে এগিয়ে নেবার জন্য এটিকে একমাত্র জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য মনে করলে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে, সে পরিমান এখনও অনুপস্থিত।

অধিকাংশ নেতাই নিজেকে ইসলামের জন্য সপে দিলেও তার পরিবার আত্মীয় স্বজনকে সেভাবে সাথে নিতে পারেননি।
- নিজেকে সমাজের কাছে মডেল হিসেবে পেশ করতে পারেন নি।
- দলের জন্য যতটুকু নিবেদিত, জনগনের জন্য ততটুকু নয়। সীমাবদ্ধতা যেন নিজেকে আটকে রেখেছে একটি বন্দীশালায়।
- ভেতরে লুকিয়ে থাকা সিন্ডিকেট রাজনীতির কারণে অনেক যোগ্য লোক উঠে আসতে পারছেনা।
- রাসুলের সময়ে আভিজাত্য ফ্যামেলীর লোকদের ইসলামে যোগ দেয়ার হিড়িক ছিল ইসলামের বড় বিজয়ের সুচনা। যেটি জামায়াতে শুরু হয়নি। ওদের আসারই রাস্তা নেই। পথ রুদ্ধ। উপশাখায় বসতে হবে, তার পর নাকে খত দিয়ে ঈমানের কঠিন পরীক্ষা দিয়ে উপরে আসতে হবে।
- ভেতরে গণতন্ত্র চর্চায় প্রশ্নোত্তরে স্লিপ সিষ্টেম উঠিয়ে দিতে হবে। এতে কর্মীদের সামনে নেতা নিজেকে পেশ করতে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। অনেক সত্য দামাচাপা পড়ে যায়।
- সর্বোপরী, সংগঠনের কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত নেত্রী স্থানীয় লোকেরা এমন হতে হবে, সংগঠন দিলে খাব না হয় উপোস। এ স্তরের লোকেরা ব্যাক্তিগত ব্যবসা করতে গিয়ে সংগঠনের বারোটা বাজিয়েছে। সহজ ও নিবেদিত কর্মীদের নিজের কাছে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করেছে।

- হযরত ওমরের মত রাতের আধারে কর্মীদের খবর নেয়ার নেতা তৈরী হতে হবে।
- সামাজিক কাজে নেতা ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে ছেলে মেয়ে বিয়ে না দিয়ে হয়রত আলীর মত দরীদ্র কিন্ত আমল আখলাকে উন্নত ছেলের কাছে বিয়ে শাদী দেয়ার মাধ্যমেই তৈরী হবে ওমরের এ যুগের আর্য়িুবী।

আজ এতটুকুই থাক। ধন্যবাদ আপনাকে । খুব ভাল লাগল।
243747
১১ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:১১
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File