সহিহ হাদিস গ্রহণ সম্পর্কে চার ইমামের জোরালো মত।

লিখেছেন লিখেছেন তাহমিদ ইব্রাহীম ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৪৯:৪৬ দুপুর

সহিহ হাদিস গ্রহন সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা বলেছেন-

১) ইযা সাহহাল হাদিসু ফাহুয়া মাযহাবি।

অর্থ- হাদিস বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে তাই আমার মাযহাব।

দলীল- প্রখ্যাত হানাফি ফেকাহবিদ ইবনে আবেদিন শামি তাঁর "আল-হাশিয়া" কিতাবের প্রথম খন্দের ৬৬ পৃষ্ঠায় এবং "রসমুল মুফতি" কিতাবের চতুর্থ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর উক্ত বক্তব্য ইবনে হুমামের "শরহে হেদায়া" গ্রন্থের সূত্রে উদ্রিত করেছেন।

আরেক বরননায় ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর নিম্নের বক্তব্য উদ্রিত হয়েছে-

২) হারামুন আলা মান লাম ইয়ারেফ দলিলি আন ইয়াফতা বেকালামি।

অর্থ- যে আমার কথার দলীল প্রমান অবগত নয়, তাঁর জন্যে আমার বক্তব্য উদ্রিত করে ফতোয়া দেয়া হারাম।

দলীল- ইমাম আবু হানিফার এই বক্তব্য "রসমুল মুফতি" তে বর্ণিত হয়েছে।

৩) আমরা কোত্থেকে মাসালা গ্রহন করেছি, তা না জেনে আমাদের বক্তব্য গ্রহন কারো জন্যে জায়েয নয়

দলীল- ইবনেয়াব্দুল বারঃ আল এন্তেকা ফী ফাযায়েলিস সালাসাতিল আয়েম্মাতিল ফোকাহা, পৃষ্ঠা ১৪৫, আল্লামা ইবনুল কাইয়ুমঃ এলামুল মোয়াক্কেইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৯, ইবনুল আবেদিন (রঃ)- আল্বাহারোর রায়েক গ্রন্থের টীকা, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৩, রসমূল মুফতি, পৃষ্ঠা ৭৭।এ ধরনের বর্ণনা ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর ছাত্র যোফার, আবু ইউসুফ এবং আফিয়া ইবনে ইয়াজিদ থেকেও বর্ণিত রয়েছে।- আলইকাজ

৪) ফাইন্না বাশারুম নাকূলুল কাওলাল ইয়াওমে ওয়া নারজেউ আনহু গাদান।

অর্থ- আমরা মানুষ। আজ যে কথা বলি আগামীকাল সে কথা প্রত্যাহার করি।

তিনি আরো বলেন- ওহে ইয়াকুব (ইমাম আবু ইউসুফ), তোমার জন্য দুঃখ!! তুমি আমা থেকে যা কিছু শুন তা সবই লেখো না। কেননা, আমি আজ কোন বিষয়ে একটা অভিমত পোষণ করি এবং আগামীকাল তা পরিহার করি। আবার আগামীকাল যে মত পোষণ করি পরের দিন তা পরিহার করি।

দলীল- এ সম্পর্কে ইমাম শারানি আলমীযান গ্রন্থের প্রথম খন্দের ১৬২ পৃষ্ঠায় বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রঃ) সম্পর্কে আমি এবং আমার মতো ন্যায়ানুগ প্রকৃতির লোকদের বিশ্বাস, হাদিসসহ এল্মে শরিয়াতের বিধি বিধানগুলো লিপিবদ্ধ করার জন্যে হাদিসের আলেমগন যখন বভিন্ন শহর বন্দর এবং গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে নিজেদের মিশনে সফলতা লাভ করেন, তখন পর্যন্ত যদি ইমাম আবু হানিফা (রঃ) জিবদ্দশায় থাকতেন তবে তিনি হাদিস এবং শরিয়াতের লিপিবদ্ধ বিধি বিধানসমুহের আলোকেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতেন। যেসব বিষয়ে তিনি কেয়াসের আলকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন, সেসব ব্যাপারে কেয়াসের শরনাপন্ন হতেন না।এ বিষয়ে আল্লামা আবুল হাস্নাত মুহাম্মদ আব্দুল হাই (রঃ) 'আননাফেউল কবির' গ্রন্থে ১৩৫ পৃষ্ঠায় সবিস্তার আলোচনা করেছেন। আগ্রহীরা তা দেখে নিতে পারেন।

৫) ইযা কুলতু কাওলান ইউখালেফু কিতাবাল্লাহে তায়ালা ওয়া খবরির রাসুলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ফাতরুকু কাওলী।অর্থ- আমার কোন বক্তব্য যদি আল্লাহ্‌র কিতাব (কোরান) এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের বিপরিত প্রমাণিত হয় তবে তোমরা আমার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করো।

দলীল- সালেহ আলফাল্লানি আলইকায গ্রন্থের ৫০ পৃষ্ঠায় এটা ইমাম মোহাম্মদ (রঃ) এর বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এ বক্তব্য একজন মোজতাহেদ ইমামের চেয়ে একজন মোকাল্লেদ(নির্দিষ্ট ইমামের অনুসারী) এর জন্য বেশী প্রযোজ্য।

সহিহ হাদিস গ্রহন সম্পর্কে ইমাম মালেক বিন আনাস (রঃ) বলেছেন-

১) ইনামা আনা বাশারুন। উখতি ওয়া উসিব। ফানযুরু ফী রায়ী ফাকুল্লু মা ওয়াফাকাল কিতাবা ওয়াস সুন্নাতা ফাখাযুহু ওয়া কুল্লামা লাম ইউওয়াফেকিল কিতাবা ওয়াসসুন্নাতা ফাতরুকু।

অর্থ- আমি মানুষ। ভুল শুদ্ধ উভয়টাই করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার অভিমত সম্পর্কে গভীর অভিনিবেশ সহকারে ভেবে দেখো। টাতে যা কিতাব( কোরান) এবং সন্নতের সাথে মিলে, তদনুরূপ হয় তা গ্রহন করো। আর আমার যেসব অভিমত, সিদ্ধান্ত কিতাব ও সুন্নতের সাথে মিলবে না তা প্রত্যাখ্যান করো।

দলীল- ইবনে আব্দুল বারঃ আলজামেউ ফী বয়ানিল এলম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২; ইবনে হাযম, উসুলুল আহকাম, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৯; সালেহ আলফাল্লানিঃ আলইকায, পৃষ্ঠা ৭২।

২) লাইসা আহাদুম বাদান নাবিয়্যে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইল্লা ইউখাযু মিন কাওলিহি ওয়া ইয়াতরুকু।

অর্থ- রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পরে এমন কেউ নেই, যার কথার সবটুকুই গ্রহণীয়; বরং একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সঃ) ব্যতিত আর সকলের কথাতেই গ্রহণীয় বর্জনীয় দিক রয়েছে।

দলীল- পরবর্তীদের কাছে এটা হযরত ইমাম মালেক বিন আনাস (রঃ) এর উক্তি হিসাবেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। উক্তিটি তাঁর থেকে বর্ণিত হওয়ার বিশুদ্ধতা ইবনে আব্দুল হাদী সাব্যস্ত করেছেন।- এরশাদুল সালেক, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৫।

সহিহ হাদিস গ্রহন সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেছেন-

১)ওয়ামা মিন আহাদিন ইল্লা ওয়া তাযহাবু আলাইহি সুন্নাতু লেরাসুলিল্লাহে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ওয়া তাযুবু আনহু ফিহিমা কুনতু মিন কাওলিন আও আসালাতু মিন আস্লিন ফীহে মির রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা খেলাফা মা কুলতু ফাল্কাওলু মা কালা রাসুলুল্লাহে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ওয়া হুওয়া কাওলী।

অর্থ- এমন কেউ নেই যার থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু সুন্নত অপ্রকাশ্য থাকবেনা এবং তাঁর থেকে সে সন্নতের আমল ছুটে যাবেনা। তাই আমি যা কিছু বলেছি, যত মূলনীতি উদ্ভাবন করেছি, তাতে রাসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে বিশুদ্ধ সুত্রে আমার বক্তব্যের বিপরীত বক্তব্য পাওয়া গেলে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর বক্তব্যই হবে আমার বক্তব্য।

দলীল- হাকেম ধারাবাহিক সুত্রে ইমাম শফেয়ী থেকে তাঁর এ উক্তি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আসাকেরঃ তারিখে দেমাশক, সালেহ আলফাল্লানীঃ আলিকায, পৃষ্ঠা ১০০, আল্লামা ইবনুল কায়ুমঃ এলামুল মোয়াক্কেইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৩-৩৬৪।

২) আজমাআল মুস্লেমুনা আলা মানি স্তাবানা লাহু সুন্নাতান আন রাসুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা লাম ইয়াহেল্লা লাহু আন ইয়াদাহা লেকাওলি আহাদিন।

অর্থ- কারো সামনে যখনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন সুন্নাত (হাদিস) প্রকাশ পায়, সে ব্যাক্তির জন্য কারো কথায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত পরিত্যাগ জায়েয নয়। এ কথার উপর মুসলমানদের এজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দলীল- আল্লামা ইবনুল কাইয়ুমঃ এলামুল মোয়াক্কেইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬১; সালেহ আলফাল্লানীঃ আলঈকায, পৃষ্ঠা ৫৮।

৩) ইযা ওয়াজাদতুম ফী কিতাবী সুন্নাতা রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ওয়া দাউ মা কুলতু ওয়া ফী রেওআতিন ফাত্তাবেউহা ওয়ালা তালতাফেতু ইলা কাওলি আহাদিন।

অর্থ- তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক কথা পাবে, তখন রাসুল (সঃ) এর সুন্নত মোতাবেক কথা বলবে, আর আমি যা বলেছি তা পরিত্যাগ করবে। তাঁর থেকে আরেক বর্ণনায় আছে, এ অবস্থায় তোমরা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সুন্নতেরই অনুসরন করো। অন্য কারো কথার প্রতি দৃষ্টিপাত করো না।

দলীল- আলহেরাবিঃ যুম্মুল লালাম, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১ ও ৪৫; খতিবঃ আল এহতেজাজ লিশশাফায়ী, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২; ইবনে আসাকেরঃ তারিখ, পঞ্চদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯; ইমাম শরফুদ্দিন নববীঃ আল্মাজমু, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩; আল্লামা ইবনুল কাইয়ুমঃ এলামুল মোয়াক্কেইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬১; সালেহ আলফাল্লানীঃ আল ঈকায, পৃষ্ঠা ১০০; আবু নোয়াইম আলেসবাহানী- আলহেলিয়াতুল আওলিয়া, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৭।

৪) ইযা রাআইতুমুনি আকুলু কাওলান ওয়া কাদ সাহহাআনিন্নাবিয়্যে সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা খেলাফুহু ফালামু ইন্না আক্লী কাদ যাহাবা।

অর্থ- যদি তোমরা আমাকে দেখো এমন কথা বলছি যার বিপরীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহিহ হাদিস রয়েছে, তবে জেনে রাখ আমার জ্ঞান বিবেক হারিয়ে গেছে।

দলীল- ইবনে আবী হাতেমঃ আল আদাবুশ শাফায়ী- পৃষ্ঠা ৯৩; আবুল কাসেম সমরকন্দিঃ আল আমালি; আবু হাফস আল্মোআদ্দাবঃ আলমোন্তাকা, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৪; আবু নোয়াইম এসবাহানীঃ আলহেলইয়ায়াতুল আওলিয়া (বিশুদ্ধ বর্ণনা সুত্রে) নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৫; ইবনে আসাকেরঃ তারিখ, পঞ্চদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯২।

সহিহ হাদিস গ্রহন সম্পর্কে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) বলেছেন-

১) লা তুকাল্লেদুনি ওয়ালা তুকাল্লেদু মালেকান ওয়ালা তুকাল্লেদু মালেকান ওয়ালাশশাফেয়ি ওয়ালাল আওযাঈ ওয়ালা সসাওরী ওয়া খুজমিন হাইসু আখাযু।

অর্থ- তোমরা আমার, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম সুফিয়ান সাওরী এবং ইমাম আওযায়ী কারোই তাক্লিদ (শর্তবিহীন আনুগত্য) করো না; বরং তারা যে উৎস থেকে (সমাধান) গ্রহণ করেছেন তোমরাও সেখান থেকেই গ্রহণ করো।

দলীল- সালেহ আলফাল্লানীঃ আলঈকায, পৃষ্ঠা ১১৩; আল্লামা ইবনুল কাইয়ুমঃ এলামুল মোআক্কেইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০২।

২) রায়উল আওযাঈ রায়উল মালেক ওযা রায়ও আবী হানীফাতা কুল্লুহু রায়উন। ওয়া হুওয়া ইন্নী সাওয়াউন। ওয়া ইন্নামাল হুজ্জাতু ফিল আছার।

অর্থ- ইমাম আওযায়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফা, এঁদের সকলের অভিমত অভিমতই মাত্র। এরা সবাই আমার কাছে সমান। এঁদের অভিমত আমার দৃষ্টিতে সমমানের। তবে প্রমাণ হল কেবল আছার (সাহাবায়ে কেরামের বাণী)।

দলীল- ইবনে আব্দুল বারঃ জামে বয়ানিল এলম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৯।

বিষয়: বিবিধ

৩৩০৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

160419
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৪
ইমরান ভাই লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান.......
একটু পরেই দেখবেন বেঠিক ইসলাম এসে আপনার সাথে কি সুরু করে।

খুব ভালো লাগলো...ধন্যবাদ। Rose Rose Rose Rose
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
114944
তাহমিদ ইব্রাহীম লিখেছেন : ধন্যবাদ। Happy
160463
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা!

ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৪৬
114942
তাহমিদ ইব্রাহীম লিখেছেন : ধন্যবাদ Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File