নাস্তিকদের কিছু গঁৎবাধা বুলি [পর্ব-১]

লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ১৪ জুন, ২০১৫, ১০:২৫:৪৭ রাত

‘শয়তান তুই আমার দেহ পাবি, মন পাবি না’ কিম্বা ‘চৌধুরী সাব আমরা গরীব হতে পারি, আমাদেরও সম্মান আছে’ --বাংলা সিনেমার এইসব কমন ডায়ালগের মতই নাস্তিকদেরও কিছু কমন ডায়ালগ আছে। বর্ণনা বৈচিত্র্যের কারনে একটু হেরফের হলেও একটু খেয়াল করলেই দেখবেন ঘুরে ফিরে সেই একই কথা। অতীতের নাস্তিকেরাও প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নানা সংশয় প্রকাশ করেছে। আরজ আলী মাতুব্বরের মত স্বশিক্ষিত নাস্তিকও করেছে এবং হাল আমলের ইন্টারনেট ভিত্তিক নাস্তিকেরাও করে চলেছে। ডকিন্সের বাংলা অনুবাদ পড়ে , বন্যা আহমদের বিবর্তন পড়ে, অভিজিৎ রায়ের সৃষ্টি তত্ত্ব আর বিশ্বাসের ভাইরাস পড়ে বাংলার ইন্টারপাশ নব্য নাস্তিক হওয়া ‘বিজ্ঞান মনস্ক’ নাম ধারনকারীরাই লাফালাফি করছে বেশী। নিত্য নতুন ডায়ালগ মারতে ওস্তাদ এরা।

এসব নাস্তিকদের কিছু কমন ডায়ালগ:

১। ‘কোন কিছু আবিস্কার হলেই কেবল মুসলমানেরা সেটা কোরআনে খুঁজে পায়’

জবাব:

একটু খেয়াল করুন, মুসলমানেরা কোরআনেই বিশ্বাস করেন। কোন নতুন আবিস্কার যদি তারা কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখেন, তাতে নাস্তিকদের গা জ্বলবে কেন? বিজ্ঞান কি নাস্তিকদের পৈত্রিক সম্পত্তি? তাদের গা জ্বলছে একটা কারনে তাহলো তাদের দৃঢ বিশ্বাস বিজ্ঞানের এসব বিষয় কোরআনে থাকতেই পারে না। তাদের ধারনা কোরআনে থাকবে সব আজগুবি গল্পগুজব এবং অবৈজ্ঞনিক কথাবার্তা। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কার কেন কোরআনে থাকবে? আর যদি থাকে, তাহলে নাস্তিকতা প্রচারে সেটা চরম বাধার সৃষ্টি করে। বিগব্যাং থিউরী মুসলমানেরা আবিস্কার করেনি, গ্রহ নক্ষত্র ঘূর্ণনের কথা মুসলমানেরা আবিস্কার করেনি, বহু বিশ্ব থাকার কথাও মুসলমানেরা আবিস্কার করেনি। কিন্তু এসব আবিস্কার হওয়ার পর মুসলমানেরা সেটা কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখেছে। যখন কোরআনের সাথে কোন বৈপরিত্য খুঁজে পায়নি, তখন সেটা বিশ্বাস করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আবিস্কার হওয়ার পর কেন কোরআনে এলো, আগে কেন কোরআনে তারা খুঁইজ্জা পাইলো না- এসব বুলি আওড়ে তারা মুসলমানদের কাবু করতে চান।

২। ‘পৃথিবী ঘুরছে এটা কোরআনের কোথাও নেই’

জবাব:

-কোরআনে ‘চন্দ্র, সুর্য প্রত্যেকে যার যার কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৩] কথা লেখা থাকলেও, পৃথিবী ঘুরছে এটা কেন সুস্পষ্টভাবে লেখা নেই তা নিয়ে যত মাথা ব্যাথা। কোরআনে যা লেখা আছে, তা কেয়ামত পর্যন্ত সত্যই থাকবে। যে সময়ে কোরআন নাজিল হয়, ঐ সময়ে কেবল পৃথিবী ঘুরছে একথা বললে লোকজন এটাকে প্রত্যাখ্যান করতো। কিন্তু প্রত্যেকে যার যার নিজস্ব কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে এটাতে সে যুগে যেমন কোন অসুবিধা হয়নি, এ যুগেও হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে না।

৩। ‘কোরআনে আছে পৃথিবী সমতল’

জবাব:

কোরআনের কোথাও পৃথিবী সমতল এমন কথা লেখা নেই। কিন্তু নাস্তিকদের ধারনা কোরআনে তো এমনটাই থাকা উচিত। কোরআনে যদি তেমনটা থাকতো, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান সেটাই বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞানের কথাকে পাত্তা দিতেন না। কাজেই নাস্তিকদের এসব কথার কোন যুক্তি নেই।

৪। মুসলমানেরা বিবর্তনবাদ-এর ‘ব’-ও বুঝে না। ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হবে বলেই তারা বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করে।

জবাব:

-নাস্তিকেরা এমন একটা ভাব করে যেন তারাই বিজ্ঞানের সব বুঝে ফেলেছে। তারাই বিজ্ঞান মনস্ক, বিবর্তনবাদ কেবল তারাই বুঝেছে। অন্যরা না বুঝেই লাফাচ্ছে। প্রকৃত সত্য হলো, নাস্তিকেরা আসলে বিবর্তনবাদ বিশ্বাস করে ফেলেছে। আর মুল সমস্যাটা সেখানেই। শত যুক্তি আর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিয়েও তাদেরকে এ বিশ্বাস থেকে টলানো যাবে না। ধার্মিকেরা যেমন ধর্মে বিশ্বাস করেন, তেমনি নাস্তিকেরাও বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করেন। সরল অ্যামিবা থেকে এলোমেলো বিবর্তন কোন বৈজ্ঞানিক সত্য নয়। এটা একটা বিশ্বাস মাত্র। ফসিল রেকর্ড চরম ত্রুটিপূর্ণ এবং কল্পনা নির্ভর। এক প্রজাতির সাথে আরেক প্রজাতির ডিএনএ কাছাকাছি হলেই বিবর্তনবাদ সত্য হয়ে যায় না। বিবর্তনবাদীরা বলেন, বানর থেকে মানুষ হয়নি, বরং বানর এবং মানুষ একটি কমন পূর্বপূরুষ বা প্রাইমেট থেকে এসেছে। আর সেই কমন প্রাইমেট-এর ফসিল বা প্রমাণ কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি। বিবর্তনবাদ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য নয়। এটা কোটি কোটি বৎসরের কাল্পনিক ইতিহাসের বর্ণনামাত্র। সৃষ্টিকর্তায় যাদের বিশ্বাস নেই, বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনী মানা ছাড়া তাদের আর কোন বিকল্পও নেই।

৫। কোন বিজ্ঞানই মনে করে না যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও প্রাণের উদ্ভবের জন্য একটা ‘অলৌকিক ভেলকিবাজী’র প্রয়োজন আছে।

জবাব:

ইসলাম ধর্মের কোথাও কিম্বা কোরআন-হাদীসের কোথাও কি মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও প্রাণের উদ্ভবের জন্যে ‘অলৌকিক ভেলকিবাজীর’ কথা আছে? এটা নিছকই একটা প্রোপাগান্ডা। নাস্তিকেরা মনে করে কোরআনে এমন কোন ভেলকিবাজির কথা আছে।

৬। ধর্মের বই বাজারে না ছেড়ে আল্লাহ তো মানুষের জেনেটিক কোডে একটু পরিবর্তন করে দিলেই পারতেন।

জবাব:

সেটা পারতেন। আল্লাহ কোরআনে তা বলেছেনও। [সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯] জেনেটিক কোডে পরিবর্তন করে দিলে তো সবাই ধার্মিক হয়ে যেতো? তাহলে দুনিয়াটা পরীক্ষাগার হলো কি করে? আল্লাহর স্বর্গ নরক সৃষ্টির সার্থকতা কোথায় থাকলো? আর যেহেতু ইলেকট্রনিক মিডিয়া পৃথিবীর আদি যুগ থেকে ছিল না, সে কারনেই বই ছাড়া। এমন আবাল প্রশ্নের জবাব আবাল ছাড়া কি হতে পারে? ধর্মের বই বাজারে আছে বলেই তো ধর্ম টিকে আছে। ধর্মের বই বাজারে আছে বলেই তো নাস্তিকদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

১১২৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

325868
১৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নাস্তিকরা যদি নাস্তিক্যবাদ প্রচার করতেন সেটাতে সমস্যা ছিলনা। সমস্যা সৃস্টি হয় যখন তারা বিজ্ঞানকে নাস্তিক্যবাদ এর সমর্থক দাবি করেফেলেন। অথচ স্রষ্টায় বিশ্বাস বা অবিশ্বাস এর সাথে কোন সম্পর্ক নাই পৃথিবিতে সবসময় ঘটে চলা প্রাকৃতিক ঘটনাবলির।
১৫ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৫০
268149
এনামুল লিখেছেন : Applause
325869
১৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:১০
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অনেক সুন্দর করে বঝিয়েছেন, আসলে যাদের অন্তরে বক্রতা আছে, তারা সেভাবেই চলবে। জাযাকাল্লাহ খাইর
325886
১৫ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৮
অসমাপ্ত গল্পের রাজকুমার লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
অনেক ভালো লাগলো পড়ে।

আসলে নাস্তিকরা হল বয়রার মতো তাদের যতই যুক্তি ,
প্রমান দিয়ে বোঝানো হোক্না কেন তারা তা বুঝবেই না।
325889
১৫ জুন ২০১৫ রাত ০৩:০২
শিহাব আহমদ লিখেছেন : পবিত্র কুরআন মহান স্রষ্টা কর্তৃক নাযিলকৃত মানব জাতির জন্য উপদেশ বাণী সম্বলিত এক ঐশী গ্রন্থ। মানুষকে সতর্ক ও সাবধান করার জন্য এবং স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনে সুপথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ্ এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন। স্বয়ং আল্লাহ্ কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে উল্লেখ করেছেন। এতে যেমন মানব জাতির জন্য জীবন-যাপনের দিক-নির্দেশনা ও শিক্ষনীয় উপদেশ রয়েছে তেমনই এতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা ও মানব জাতির উত্থান-পতনের ইতিবৃত্তও রয়েছে। বিশ্বাসীদের জন্য কুরআন রহমত স্বরূপ এবং অবিশ্বাসীদের জন্য তা মনোবেদনা ও ক্ষতির কারণ।
325945
১৫ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:২০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ আনোয়ার আলী ভাই। নাস্তিকরা এই ব্লগে না থাকলে আপনি লেখায় উৎসাহ পাবেন না!..আপনি লিখতে থাকুন। নাস্তিকদের কোন উপকারে না আসলেও আমাদের জন্য বড়ই উপকার হবে।আমাদের বিশ্বাস আরো মজবুত এবং জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণের ক্ষেত্রটা আরো প্রবল হবে..।
326712
১৯ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:০৫
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : কিসের মোহে তারা আল্লাহ বিরোধীয় সময় ও শ্রম ব্যয় করে যাচ্ছে তা বোধগম্য নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File