শেষ প্রহর!

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২০:৪৪ দুপুর

আজগর সাহেব বসে আছেন।রুমের মাঝে আলো বলতে গেলে নেই। জানালায় মোটা পর্দা টানা। ইদানীং তার কিছু নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার মাঝে একটা হল আলোর সমস্যা; চোখে আলো লাগলে চোখ চিরচিরকরে উঠে।তিনি একটু নড়ে চড়ে বসলেন। থেমে থেমে অনেকক্ষণ ধরে টেলিফোন বেজেই চলছে।কয়েকবার গিয়ে ফোন ধরেছিলেন। কিন্তু অন্যপাশ থেকে ফোনের বিপ্ বিপ্ আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলেন না। তার নতুন সমস্যাগুলোর মাঝে এটাও একটা সমস্যা। কোন এক অজানা কারণে তিনি টেলিফোনের রিং এর শব্দ শুনতে পাচ্ছেন।আজগর সাহেব ভাবলেন 'ফোনটা ধরা দরকার, জরুরী কোন ফোন হতে পারে।' জরুরী ফোন বলতে আজগর সাহেবের মেয়ের ফোন। লীনা, তার ৫ বছরের মেয়ে বীণা আর স্বামীর সাথে প্রায় ৮/৯ বছর ভার্জিনিয়া থাকে।- গফুর গফুর!হঠাৎ মনে পরল তার এই বিশাল বড়িতে একমাত্র তিনিই একা আছেন। গফুর দুদিনের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছে। আজ চারদিন হতে চলল, কিন্তু তার কোনো দেখা নেই।আজগর সাহেব একসময় চা বাগানের ম্যানেজার ছিলেন। বছর দুই হল তার স্ত্রী নাজমা মারা গিয়েছেন। নাজমা বেগম প্রচুর কথা বলতেন। আজগর সাহেব মাঝে মাঝেই বিরক্ত হতেন। কিন্তু আজ নিঃসঙ্গতা আর নিঃস্তবতা তাকে প্রচুর কষ্ট দিচ্ছে।লীনা কয়েক বছর ধরেই দেশে আসবে বলছেকিন্তু প্রতিবারই কোননা কোন সমস্যায় পরে যাচ্ছে। আজগর সাহেবের নাতনীর বয়স ৫ বছর কিন্তু এখনো তিনি তার নাতনীর মুখটি দেখেন নি। আজগর সাহেব জানেন তার হাতে সময়ও খুব বেশি নেই। মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে বলতে একটা কথা আছে। তার ইচ্ছা হল তার নাতনীর মুখটা দেখা।গফুর অনেকক্ষণ ধরে বেল বাজাচ্ছে। ভিতর থেকে কোন সাড়াই পাওয়া যাচ্ছে না। টেলিফোনটাও বহু ধরে বেজেই চলেছে। গফুরের ডাকা ডাকিতে আসেপাশের মানুষজন জড়ো হল। সবাই ঠিক করল দরজা ভাঙা হবে। দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পেল আজগর সাহেব চেয়ারে বসে আছেন। চোখগুলো খোলা, দেহে যে প্রাণ নেই তা মুখ দেখে বোঝা মুসকিল। তার মুখের উপর কয়েকটা মাছি শুধু ভনভন করছে।আজগর সাহেবের মৃত্যুর প্রায় দুদিন পর সবাই তার মৃত্যুর কথা জনতে পারল।

বিষয়: বিবিধ

৯৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File