ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য সুদূর পরাহত

লিখেছেন লিখেছেন কণ্ঠনালী ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৩৪:৫৫ রাত

১৯২১ সালের ২১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে । বাঙালি মুসলমান সমাজে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে। যে লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে সে লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে কতটুকু ভুমিকা রাখছে তা অবশ্যই বিশ্লেষণের দাবী রাখে । ঠিক একইভাবে বিশ্লেষণের দাবী রাখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চর্চার। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠেছিল বর্তমানে তাকে একটি আদর্শকে (সেক্যুলার)বাস্তবায়নের পরাকাস্টা দেখানো হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় ছাত্ররাজনীতির উন্মেষকেন্দ্র। কিন্তু বরাবরই রাজনৈতিক বৈষম্য আদর্শিক রাজনীতিকে করেছে কলুষিত। চল্লিশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা দেখা যায়। সে রাজনীতি ছিল সুষ্ঠু, আদর্শিক। রাষ্ট্রভাষাকে রক্ষার জন্য ছাত্র-শিক্ষক মুখোমুখি হয় পাকিস্তানী শাসকের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছে ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ । সে সময় রমনার রেসকোর্সে ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং পূর্ববঙ্গের জনগণ জোরালোভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বলা যায় এর মাধ্যমেই রোপিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনের বীজটি। এই আন্দোলন আরো বিস্তৃতি লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। সেই দিনের আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপরের প্রত্যেকটি যুগান্তকারী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ৫২ থেকে শুরু করে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৭৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ। এমনকি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশেও রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সোচ্চার।

এখন সেই আদর্শিক রাজনীতির মুখে কালিমা লেপন করে ছাত্র-শিক্ষকরা নৈতিক অবস্থান হারিয়ে বসে হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। নীতিহীন ছাত্ররাজনীতির কবলে পড়ে অসহায় আজ সাধারণ ছাত্রসমাজ। দলীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের মধ্য দিয়ে জাতিকে মেধাহীন করার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রগতির নামে অশালীন সংস্কৃ্তি ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নৈতিক অবক্ষয় আজ জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক পর্যন্ত এসে গড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯২তম বর্ষে পদার্পন করেছে। এতদস্বত্তেও আশা রাখছি সকল বাস্তবতাকে সামনে রেখে এই অঙ্গন এগিয়ে যাবে আপন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের মতই ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন ছিল অসাম্প্রদায়িক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বাঙালী মুসলমানের মুক্তবুদ্ধির বিকাশ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সকল মতের মিলন ঘটুক এই অঙ্গনে, সকল আদর্শের জয়গান হোক এ ক্যাম্পাসে, বিশ্বমান সম্পন্ন একাডেমিক পরিবেশ গড়ে উঠোক এখানে।

বিষয়: বিবিধ

১০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File