সাম্প্রতিক রাজনীতির ভবিষ্যত ভাবনা

লিখেছেন লিখেছেন Nazrul Islam Rony ২৮ জুন, ২০১৩, ০৯:২২:৫৬ সকাল



সম্প্রতি রাজনীতির ময়দানে অস্থিতিশীলতার প্রধান নিয়ামক নির্বচনে দলীয় কিংবা নির্দলীয় সরকার

ব্যবস্থার টানাপোড়েন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সন্দেহমুক্ত নয় আবার দলীয় সরকারের অধীনে

নির্বাচন দেশে বিদেশে গ্রহনযোগ্য নয় । এ অবস্থার সমাধান হওয়া জরুরী, না হলে সংঘাত অনিবার্য ।

দুটি বড় দলের ভিতর সংঘাত দলীয় মতাদর্শে বিভক্ত সকল পক্ষের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদ বাড়ায় ।

বল প্রয়োগের মাধ্যেমে সব সমস্যার সমাধানে মানুষকে উৎসাহিত করে এবং পুরো জাতির জীবনীশক্তি ও

সৃষ্টিশীল উদ্যমকে নিঃশেষ করে দেয়। এ সংঘাত এড়ানোর একটা ভাল উপায় হতে পারে বিবাদমান

দলগুলোর মধ্যে আলোচনা বা সংলাপ। সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি

নতুন প্রজন্মও এর প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভব করে। একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

দিতে হলে সরকার ও বিরোধী দলের সহঅবস্থান প্রয়োজন। সংসদীয় রাজনীতিতে দলীয় কর্তৃত্ব রয়েছে

বটে, কিন্তু বিরোধী দলের ভূমিকাও এখানে মূখ্য। বিরোধী দলও সরকারের একটি অংশ। সংসদীয়

রাজনীতিতে বিরোধী দলের নেতাকে বলা হয় ছায়া প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দলকে যদি মূল ভূমিকায় আনা

না যায়, সে দেশে গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করতে পারে না। পশ্চিম ইউরোপ, যেখানে গণতন্ত্রের ভিত্তি

অত্যন্ত শক্তিশালী, সেখানে বিরোধী দলের সম্মান কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী দলের চাইতেও বেশি ।

অনেক সময় বিরোধী দলের নেতা সরকারেরও প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সেখানে সংসদে

বিরোধী দলের কোনো নেতা কিংবা সংসদ সদস্যের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এ রকম কোন

ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বাংলাদেশে এটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে । তাতে বাড়ছে ক্ষোভ আর সেই ক্ষোভ

জন্ম দিচ্ছে সহিংসতার । এ ধারা সাম্প্রতিক কালের নয়, এ ধারা চলে আসছে পঞ্চম সংসদ থেকে ।

লাগাতার সংসদ বর্জন বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে

হয় । অতীতে আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন সংসদ বর্জন করেছিল। তার পিছনে যুক্তি কাজ করেছিল তা

হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। লাগাতার সংসদ বর্জনের কারণে পঞ্চম সংসদ অকার্যকর হয়েছিল । সংবিধানের পঞ্চম সংশধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তির ফলে বর্তমান

রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী সাব জানিয়ে দিয়েছেন- অনির্বাচিত কোন ব্যক্তির

হাতে ক্ষমতা দেয়া হবে না । আর সুপ্রীম কোর্টের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

পূর্নবহালের সুযোগ নেই । অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি অতটা যুক্তিনির্ভর নয় । কারণ, তার যদি

সত্যি সত্যিই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে দেশের ৬৪ জেলায় তারা কি করে

অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগ দিলো এবং ঢাকা সিটি করপরেশনের নির্বাচিত মেয়রকে সরিয়ে দু’জন

অনির্বাচিত প্রশাসককে মেয়র খোকার স্থলাভিষিক্ত করলো ? অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে

অসাংবিধানিক বললেও উচ্চ আদালত দেশের জনগনের জানমাল ও সার্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতা

বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশে আরও দশ বছর থকতে পারে। বিরোধী

জোটও স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূর্নবহাল না চেয়ে আগামী দুটি নির্বাচন

নির্দলীয় সরকারের অধীনে করতে চাচ্ছে । তাদের এই চাওয়া সুপ্রীম কোর্টের রায়ের সাথে সংগতিপূর্ন । তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যে তত্ত্বাবধায়ক নামে হতে হবে এমন কোনো নয়, ভিন্ন নামেও হতে

পারে যেমন- অন্তর্বতী সরকার, কোয়ালিশন সরকার, নির্দলীয় সরকার । বাংলাদেশে দলীয় সরকারের

অধীনে নির্বাচন কখনও গ্রহনযোগ্যতা পায়নি । ১৯৮৬, ৮৮, এবং ৯৬ এর নির্বচন সে কথাই স্মরন

করিয়ে দেয় । স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব

বলা হলেও মনে রাখা প্রয়োজন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব ও প্রকৃতি এক

নয় । কোন পদ্ধতিতে হলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য হবে তা নিয়ে জাতি আজ দ্বিধা বিভক্ত

। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব জনগণের, তাই জনগণ কোন পদ্ধতিতে তাদের

সরকার নির্বাচন করতে চান সে বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়ভারটাও জনগণের উপরই বর্তায় ।

এক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকার অনলাইন জরিপগুলোর ফলাফল কাজে লাগানো যেতে পারে ।

বিষয়: বিবিধ

৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File