আরাকানের ইতিহাস (ব্লগার হানিফ )

লিখেছেন লিখেছেন হানিফ খান ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৪:০১ সন্ধ্যা



আরাকানে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নদী আছে যথা: নাফ (Naf), মায়ু (Mayu), কালাদান (Kaladan), লেমব্রু (Lembru), অনন (Ann), তানগু (Tangup) ও স্যান্ডোয়ে (Sandoway) প্রভৃতি। এর মধ্যে নাফ, কালাদান, লেমব্রু ও মায়ু আরাকানের প্রধান প্রধান নদী।

নাফ নদী ছোট মনে হলেও বেশ খরস্রোতা। এটি বাংলাদেশ ও আরাকানের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমারেখা হিসেবে কাজ করে। নাফ নদীর পূর্বতীরে আরাকানের মংডু টাউনশীপ এবং পশ্চিমতীরে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ অঞ্চল। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ মাইল এবং প্রস্থ ১ থেকে দেড় মাইল। নাফ নদীর সম্মুখভাগে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জিনজিরা বা সেন্টমার্টিন। এখানকার অধিবাসীদের অধিকাংশই আরাকানের হবিপাড়া থেকে এসে এ এলাকায় বসতি স্থাপন করেছে। পরমা ((Purma), মায়ুথিট (Myothit), সাবিবিনিইন (Sabebinyin), উশিঙ্গা (Ushingya), মিংলাগুই (Minglagyi), পিনবায়ু (Pyinbyu), কাইন (Kayin), তাতমাগী (Tatmagyi), গদুছারা (Gawdusara), তুন (Tun) এবং ঘাকুনডু (Ngakungdo) প্রভৃতি ছোট ছোট প্রবাহ নালা ও হ্রদ মায়ু পাহাড়ে উৎপত্তি হয়ে মংডু টাউনশীপের মধ্য দিয়ে নাফ নদীতে এসে মিশেছে। অবশেষে নাফ নদী গিয়ে মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের সাথে।



কালাদান (Kaladan) আরাকানের সবচেয়ে বড় ও প্রধান নদী। এই ইয়াহু (Yahaw) স্টেটের চিন পাহাড় থেকে বইনু (Boinu) নামে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণের পার্বত্য আরাকানে প্রবেশের পর কালাদান নাম ধারণ করেছে। এটি প্রথমত দক্ষিণাভিমুখে অতঃপর উত্তরাভিমুখে এবং অবশেষে পূর্বে দিকে বা নিয়ে সরাসরি লুসাই পাহাড় অঞ্চল অতিক্রম করে পুনরায় দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে উত্তর আরাকানের শেষভাগ হয়ে আরাকানের পূর্বাংশে চলে গেছে। অবশেষে এটি আকিয়াব বন্দরের নিকটবর্তী স্থানে এসে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। বর্মীভাষায় Kala শব্দের অর্থ বিদেশী, Dan শব্দের দ্বারা স্থান অর্থাৎ কালাদান বলতে বিদেশীদের স্থান বুঝানো হয়ে থাকে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সপ্তদশ শতক থেকে আরাকানীরা পর্তুগীজ জলদস্যুদের সহযোগিতায় দক্ষিণ ও পূর্ববাংলার নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকৈ মানুষ অপহরণ করে নাফ নদীর তীর থেকে কালাদান নদীর উত্তর তীরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাদেরকে ধান উৎপাদনের জন্য ভূমিদাস রূপে নিযুক্ত করেছিল। তাই এ নদীর নাম কালাদান হয়েছে।

লেম্রু (Lemro) আরাকানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৪ মাইল। এ নদীটি আরাকানের ইয়োমা পাহাড়ের পাদদেশীয় অঞ্চরের পানি গ্রহণপূর্বক উত্তর আরাকান হয়ে আকিয়াব শহরের ১০ মাইল উত্তর দিয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। এ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন সভ্যনগরী বৈশালী, লংগিয়েত, পেরিন এবং ম্রাউক-উ রাজবংশের রাজধানী শহর ম্রোহং; যা বর্তমানে পাথুরেকেল্লা নামে প্রসিদ্ধ।

আরাকানের অন্যান্য প্রসিদ্ধতম নদীগুলোর অন্যতম হলো মায়ু (Mayu) নদী। এটি প্রায় ১০ মাইল দীর্ঘ; যা আরাকানের রাথিদং ও বুচিদং টাউনশীপের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এবং বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হবার পূর্বে কালাদান নদীর সাথে একত্রিত হয়েছে। মায়ু নদীর সম্মুখভাগে (Upper portion) এসে এটি কালাপানজিন (Kalapanzin) নদী নামে পরিচিত হয়। পাহাড় থেকে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণা-নালা, হ্রদ এর সাথে এসে মিলিত হয়েছে।

আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস  -ড. মাহফুজুর রহমান থেকে সংক্ষেপিত। 

বিষয়: বিবিধ

১০৪১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383941
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ রাত ০৯:১৮
হতভাগা লিখেছেন : পড়ে মনে হল যে আরাকান শুধুই নদীর জন্য বিখ্যাত ।

এই সময়ে আরাকানের নাম আসছে কেন সবার মুখে মুখে ? সেখানকার সামরিক শাসকের হাতে মুসলমানদের নির্বিচারে নৃশংস হত্যা করার কারণে - এটাই তো ?

আরাকান রাজ্যে একসময়ে মুসলিম সাহিত্য চর্চা হত বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগে ।

এখন বলেন - আরাকান রাজ্যকে কি দখল করে নেওয়া যায় মায়ানমার থেকে ? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তো বিদেশে ব্যাপক নাম কামিয়েছে । আর বাংলাদেশের তো বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য আরও জায়গা চাই ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File