"একজন হিজাবী মেয়ের দেশ ছেড়ে কানাডাতে স্কলারশিপ নিয়ে আসার নেপথ্যে"

লিখেছেন লিখেছেন খালেদ সাইফুল্লাহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০৮:২৬ বিকাল



আজ এক বছর হতে চলল কানাডা আসলাম। গত বছর ঠিক এই দিন রাতে দেশ ছেড়েছিলাম অনেক চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে। আমার বিয়ের মাত্র দুই মাস পরেই চলে এলাম। বাবা, মা, ভাই আপনজন, আর প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে নয় হাজার মাইল দূরে অজানা অচেনা এক দেশে। কানাডা তে প্রচন্ড শীত। আমি যখন আসি ঐ দিন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস উনিশ। তার মধ্যে আমি হয়ে পরেছিলাম মারাত্মক অসুস্থ। ঠিক প্লেন এ ওঠার ঘণ্টা খানিক পরেই আমার খুব জ্বর আসে। তারপর সমস্ত শরীরে গোটা গোটা কি যেন উঠতে থাকে। পরে বুঝতে পারলাম এটা ছিল চিকেন পক্স। যাই হোক এভাবেই কানাডা আসি সাথে আরো দুজন বাংলাদেশী ভাই ছিলেন। আমরা একসাথে এসেছিলাম। এজন্য কিছুটা সাহস ছিল। এয়ার পোর্ট থেকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসেন আর একজন বাংলাদেশী ভাই। আমি ওনাদের কাছে ও আমার সুপারভাইজারের কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ।

কিন্তু আমি কেন এই ডিসিশন নিয়েছিলাম? আমার মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে। বিশেষ করে আমার মা। আম্মুর ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। কিন্তু ভাগ্যে ছিল না হয় নি।যদিও আমার এটা নিয়ে খুব একটা কষ্ট ছিল না। যখন খুলনা ইউনিতে ভর্তি হলাম আমার মা বাবা দুজনেই বলে দিল তোমাকে আমরা ইউনিভার্সিটি শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই। কথাটা আমার মাথায় ছিল। সেভাবেই করে যাচ্ছিলাম পড়ালেখা। আটটা টার্ম এর মধ্যে সাতটায় আমি ফার্স্ট হই। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হলাম। সিজিপিএ ৩.৯৫/৪ । আমার টিচাররাও অনেক পছন্দ করতেন আমাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি ডিবেট করতাম টুকটাক। এই কারণে বাড়তি একটা পরিচিতি ছিল। কিন্তু আমাকে সহ্যই করতে পারতেন না একরকম একজন টিচার ছিলেন। তিনি আবার ভীষণ প্রগতিশীল, মুক্তমনা ক্ষমতাধর। ওনার বড়ই ক্ষোভ একটা বোরখা পরা মেয়ে এমন হল কি করে!!! আমাকে এক দিন উনি বলেই ফেললেন কেন আমি বোরখা পরি। কিন্তু তখন অনেক কিছুর ভয়ে ওনার কথার উত্তরটা দিতে পারি নি। তিনি এমনই একজন মানুষ যিনি আমাকে ফাইনাল ইয়ারে লাস্ট সেমিস্টারে ওনার কোর্সে ভাইভাতে তিন দিয়েছিলেন ত্রিশ এর মধ্যে। কিন্তু আল্লাহর রহমত অন্য স্যাররা রেজাল্ট করার সময় খেয়াল করেন আমার সব সাবজেক্টে এ প্লাস। কিন্তু ওনার কোর্সে তিন পেয়েছি। আল্লাহর রহমত আর অন্য স্যারদের চেষ্টায় উনি নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন উনি নাকি ভুলে তেইশ এর জায়গায় তিন দেয়েছেন (আল্লাহ জানে ওনার মনে কি ছিল)। ওনাকে নিয়ে আরো অভিযোগ আছে। সেগুলো আর নাই বা বলি।

পরবর্তীতে এম এস এ ভর্তি হই। মাস্টার্সে পাঁচটা টার্মের মধ্যে যখন দুইটা শেষ হয় তখন ডিপার্টমেন্টে লেকচাচার নিয়োগ হয় তিন জন। আমি এপ্লাই করলাম। ভাইভা অনেক ভালো দিয়েছিলাম।কিন্তু রেজাল্ট জিরো। আমাকে বলা হল তুমি জুনিয়র। নেক্সট বার তোমাকে নিব। আচ্ছা আশা নিয়ে থাকলাম। এর মধ্যে যখন মাস্টার্স প্রায় শেষ তখন আবার সার্কুলার হল। আবার এপ্লাই করলাম। কিন্তু ভাইভার আগেই বুঝতে পেরেছিলাম কোন কাজ হবে না। আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আমার বাবা কোন রাজনীতি করে, আমার দাদা কি করতেন। আমার কথা জানত যে আমি কোন রাজনীতির সাথে ছিলাম না তারপরও আমার বাবা জামাত করে সুতরাং প্রশ্নই আসে না। আমাকে সেই প্রগতিশীল টিচার (উনি তখন ডিপার্টমেন্ট হেড) কোন ক্যান্ডিডেট হিসেবেই মনে করলেন না। ওনাকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনার এত রাগ কেন মেয়েটার উপর। ওনার সোজা সাপটা উত্তর। ওর বাবা জামাত করে

তারপরও আমি ভাইভা দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার ভাইভাতে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে নাই কারন আমি যদি ভাইভাতে ভালো করে ফেলি (যদিও ওদের কিছুই এসে যায় না) শুধু এক স্যার বলেছিলেন তোমার মাস্টার্স এ তো রেজাল্ট ফোর আউট অফ ফোর তাইনা। আর কোন কোন জবের জন্য ট্রাই করছি। এইতো ভাইভা শেষ। দুই মেয়াদে ৬ জন টিচার নিয়েছিল। আমার ব্যাচ থেকেও নিয়েছিল। ৬ জনের মধ্যে চারজন একটি বিশেষ ধর্মের আর দুজন মুসলিম। সবাই ঐ টিচাররের অতি আপনজন। সবার চাইতে আমার জিপিএ, পাবলিকেশন্স সবই ভালো ছিল। কিন্ত তাতে কি এসে যায়।

পরে বাংলাদেশ এর আরো অনেক ইউনিতে ভাইভা দিয়েছি। কিন্তু প্রবলেম এক জায়গায় আমার বাবা ইসলামী আন্দোলন করেন।

আলহামদুলিল্লাহ আমার বেশীদিন কষ্ট পেতে হয় নি । কিছুদিনের মধ্যে আমার স্কলারশিপ হয়ে যায় কানাডাতে।মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য তাই আর দেরী না করে চলে এলাম। আমি আসার কিছু দিন পর আমার জামাই ও চলে আসে তার বিশ্বের অন্যতম মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির জব ছেড়ে।

এই খবরটা কিভাবে জানি আমার খুলনা ইউনির টিচাররা জেনে ফেলেছিলেন। আমার খুব পছন্দের একজন হিন্দু টিচার (মানুষ হিসেবে স্যার অসাধারন) আমাকে ফোন করে বলেছিলেন “ সিরাজুম মুনিরা আমরা তোমাকে রাখতে পারলাম না”।

যাইহোক, আমার এই লেখার কারণ নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য না। আমার মত অনেকেই আছে বাংলাদেশে যারা তাদের প্রাপ্য টুকু বুঝে পায় না। আর এখন দেশের যা অবস্থা মানুষের জীবনেরই দাম নেই। আর জামাত শিবির হলে তো প্রগতিশীল দের কাছে মানুষই মনে হয় না। দেশের জন্য সারাক্ষণ মন কাঁদে। মানুষের এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। নিজেকে মাঝে মাঝে স্বার্থপর মনে হয়। যে দেশের খেঁটে খাওয়া মানুষের রক্ত পানি করা পয়সা দিয়ে আমাকে এত দূর নিয়ে এল তাদের জন্য কি করলাম! জানিনা কবে দেশের কাছে মাটির কাছে ফিরে যাব। কিন্তু আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ইনশা'আল্লাহ কিছু তো করতেই হবে দেশের জন্য তথা মানুষের মুক্তির জন্য।

সিরাজুম মুনিরা রুমি

30 December 2013 at 22:40

কানাডা

বিষয়: রাজনীতি

১৪৪৯ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

182592
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২২
পলাশ৭৫ লিখেছেন : পুরান জিনিস ও জামাতি মিথ্যা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
135115
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : তাই মনে হলে সরেজমিনে যেয়ে দেখতে পারেন । মিথ্যা বলা অভ্যাস কাদের জাতী তা জানে , নতুন করে বলার নাই কিছু ।
182599
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৬
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগল পুরো কাহীনিটা।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
135117
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ
182600
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগছে খুব
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
135118
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : খুব ধন্যবাদ
182630
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪০
135119
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : আপ্নাকেও পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
182638
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৩
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : "দেশের জন্য সারাক্ষণ মন কাঁদে। মানুষের এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। নিজেকে মাঝে মাঝে স্বার্থপর মনে হয়।" আমারও
ধন্যবাদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪১
135120
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : আল্লাহ আবার আপনাকে দেশে ফিরিয়ে আনুক এই দোয়া করি
182660
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১২
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪১
135121
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ
182687
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : সবরের পরিনাম যে উত্তম প্রতিদান আছে তাই আবারো প্রামানিত হলো। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে লিখাটি। আপনি তো আমাদের রেহনুমা আপুর প্রতিবেশি হন দেখছি! Day Dreaming

শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য Good Luck
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪২
135122
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : সুন্দর উপমা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ । আপনার জন্যও শুভ কামনা ।
182775
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
135450
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : ঢোনয়বাড
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
135451
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ
182815
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২১
শেখের পোলা লিখেছেন : 'সিরাজুম মুনীরা' নামের মর্যাদা রাখতে পারবেন আশা করি৷ যদি টরোন্টয় থাকেন তবে আপনাদের আমার বাড়ী দাওয়াত রইল৷ জামাই না বলে বর বা স্বামী বলাই ভাল৷ জামাই বলতে বাংলায় অন্যকিছু বোঝায়৷ আল্লাহ আপনার সহায় হোন৷
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
135452
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : াপুর পক্ষে দাওয়াত কবুল করলাম । ধন্যবাদ ।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৪
135610
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিতো আপনাকেই আপু মনে করেছিলাম৷ নিক নেম আর আসল নেমের মার প্যাচে আর কি? টরোন্টয় থাকেন কিনা জানা গেলনা৷
১০
182846
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অগেও পড়েছি।
ধণ্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
135453
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ
১১
183046
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৪৬
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আমাদের দেশে মেধার মূল্য নেই বলেই বিদেশে মেধা পাচার হয়ে যায়। আপনি কোন শহরে আছেন? আমি ক্যাল্গেরীতে।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৭
135454
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : সহ্মত
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৮
135455
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : Happy Happy Happy Happy Happy
১২
183200
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
আমি চাঁদপুরি লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ
১৩
183289
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৮
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ
১৪
213325
২৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৫:৩৫
সাদাচোখে লিখেছেন : নেতৃস্থানীয় মানুষজন সিরিয়াস রকমের দূর্বৃত্ত হয়ে গেলে যা হয় - বাংলাদেশ এখন পুরোটাই তাই। বাংলাদেশের সমাজ পতিদের অবস্থা, বিচার বিবেচনাবোধ, লিখা ও বক্তব্যের সাথে আমি আদ, সামুদ ইত্যাকার জাতির কথা ও কাজের কোন পার্থক্য পাইনা। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
১৫
243004
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৪৯
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : সহমত
১৬
371698
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:৫৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আপনার লেখায় বাস্তবতা উঠে এসেছে। স্বদেশে মেধার মূল্য নেই বলেই তো মেধাবীরা প্রবাসী। আল্লাহ সহায় হোক করলের। জাযাকুমুল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File