ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১৮ জুলাই, ২০১৩, ১২:০৯:৪৭ দুপুর
আজ বিতর্কিত ট্রাইবুনালে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদকে ভয়ংকর অপরাধী সাজিয়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। আসলেই কি তিনি অপরাধী বা অসৎ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন !!! যদি তাই হতেন তবে বিগত চল্লিশ বছরে তার বিরুদ্ধে কেন একটি অভিযোগও কেউ দিলনা? কেন ফখরুদ্দীন সরকার তার বিরুদ্ধে কোন দূর্নীতি প্রমাণ করতে পারলো না ?? তার একমাত্র কারণ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ শুধু মিথ্যা নয়, জিঘাংষার চরম বহিঃপ্রকাশই বটে। আসুন আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের জীবন থেকে সংগ্রীহিত কিছু বাস্তব ঘটনা জেনে নেই। আসা করি যারা তার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন, তাদেরকে তার সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দিবে।
তথ্যগুলো ভালো লাগলে তা সবার সাথে শেয়ার করুনঃ
#ঘটনা -০১
একবার (সময়টা মনে নেই) ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয়
সেক্রেটারিয়েট সহ সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিদের একটা জরুরী বৈঠক ডাকা হল।
তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি (খুব সম্ভবত আকন্দ
ভাই) ফোন করলেন আলী আহসান মুজাহিদ ভাইকে।
ফোন করে বললেন, আমরা আগামীকাল বাদ ফজর আপনার বাসায়
আসবো এবং জরুরী বৈঠকে বসব এরপর নাস্তা করে চলে আসব।
মুজাহিদ ভাই ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলেন।
কিছুক্ষন পরেই কি মনে করে আবার ফোন ব্যাক করলেন
সিপিকে (সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট)। বললেন, আগামীকাল তোমরা অন্য কোথাও প্রোগ্রাম
এরেঞ্জ করো। সিপি আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করল, কোনও সমস্যা ? মুজাহিদ ভাইতো মুখের
উপর না বলার মত মানুষ নন। এই প্রশ্নের জবাব মুজাহিদ ভাই প্রথমেই দিতে চাননি। কিন্তু
পরে সিপি জোরাজুরি করলে তিনি জবাব দিলেন, তোমরা এতজন সম্মানিত মানুষ আমার বাসায়
আসবে, কিন্তু তোমাদেরকে বসতে দেয়ার মত এতোগুলো চেয়ার কিংবা ভাল কোনও সোফা সেট আমার নেই। তাছাড়া, এতজন মানুষের সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করার সামর্থ্যও আমার নেই। তাই বলছি, তোমরা অন্য কোথাও প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করো। একথা শুনে সিপি চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের
সেক্রেটারি জেনারেল বলছেন একথা !!!
ধরা গলায় সিপি বললেন, সোফার দরকার নেই,
আমরা মাটিতেই বসবো এবং নাস্তাও আমরা সঙ্গে করে নিয়ে আসবো, আপনাকে কিছুই করতে হবেনা। এরপর দিন যথাসময়ে আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের বাসায় প্রোগ্রাম শুরু হল।
#ঘটনা -০২
আরেকবার খুব সকালে মন্ত্রনালয় থেকে ফোন এল।
খুব জরুরী ভিত্তিতে তাঁর অফিসে যাওয়া দরকার। তিনি রেডি হয়ে তাঁর
জন্য নীচে প্রস্তুত রাখা সরকারী গাড়ীতে গিয়ে উঠে বসলেন।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছেলে দৌড়ে এল এবং বলল,
বাবা, আমি কলেজে যাবো, তুমি যাওয়ার পথে আমাকে নামিয়ে দিয়ো।
কিন্তু মুজাহিদ ভাই তাঁর ছেলেকে গাড়ীতে উঠতে দিলেন না।
তিনি বললেন, বাবা, এটা তোমার বাবার
গাড়ি নয়, এটা মন্ত্রীর গাড়ি। তাছাড়া এই গাড়ী শুধু মন্ত্রনালয়ের সরকারী কাজে ব্যবহার
করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে,
আমার ব্যক্তিগত কোনও কাজে কিংবা তোমাকে কলেজে নামিয়ে দেয়ার
জন্য নয়। এই বলে তিনি ছেলের হাতে ২০ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
তুমি পাবলিক বাসে করে কলেজে চলে যাও।
এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলে দিলেন তাঁর সরকারী পি এস।
#ঘটনা -০৩
ছোট বেলায় যে কোন কিছুতেই আব্বার কাছে বায়না ধরতাম।
একবার শুনলাম সিলেটে একজন মন্ত্রী আসছেন
আব্বা উনাকে আনতে যাবেন। বায়না ধরলাম
আব্বা আমাকে সাথে নেয়া লাগবে। অনেক
কিছু বলেও আব্বা আমাকে থামাতে পারলেননা।
আমাকে নিলেন সাথে করে। আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম রেল
স্টেশনে কেনো নিয়ে এসেছেন।
আব্বা বললেন তুমিনা মন্ত্রীকে অভ্যর্তনা দিতে এসেছো।
আমি বললাম মন্ত্রীতো প্লেইনে আসবেন।
তিনি বললেন না এই মন্ত্রী ট্রেইনে আসবেন।
প্রিও বন্ধুরা এই মন্ত্রী ছিলেন
আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ। মন্ত্রীর
সঙ্গে সফর সঙ্গীরা থাকায় তিনি চিন্তা করলেন
সরকারী টাকা অযতা খরচ করার দরকার
নেই। তাই ট্রেনে এসেছিলেন। আমি অবাক
হয়ে মন্ত্রী সাহেবের কাছে গেলাম।
হেসে বলেছিলেন চাচা ভালো আছো তুমি?
আমার মনে এখনো সেই কথা ভাসে।
পরে শুনতে পারলাম মন্ত্রী থাকা অবস্থায়
তিনি প্রতিদিন টিফিনে করে খাবার নিয়ে যেতেন।
#ঘটনা -০৪
২০০২ সালের কথা। আমি তখন ক্লাস ফোরে।
আমার বাবা তখন নাটোর শহরে ব্যবসা করত। আমরা নাটোরেই
থাকতাম। একদিন বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক ভদ্রলোক
সাহায্যের জন্য আসল। লোকটা পংগু। নাটোরের সিংড়া উপজেলার
বিখ্যাত কলম গ্রামের অধিবাসি তিনি। অভিজাত বংশের লোক। চাকুরী করত পূর্ব-পকিস্তান এয়ারফোর্সে। স্বাধীনতার দু-এক বছর আগে একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাতে তিনি চির পংগুত্ব বরন করেন। প্যারাস্যুটের সাহায্যে কোন রকম জীবন বাঁচান তিনি। তখন থেকেই মানুষের সাহায্য ছাড়া তার সংসারের ভরন পোষনের আর কোন পথ ছিলনা। তার মেয়ে মাদরাসায় পড়ে। পড়লেখার যাবতীয় খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। যাওয়া আসার জন্যে বোরকা কিনতে মাদরাসা থেকে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু তার তো সংসার ই চলেনা বোরকা কেনার টাকা পাবে কই? এ ধরনের আর ও সমস্যার কথা অকপটে বলে ফেলল বাবার কাছে।
বাবা মনোযোগ দিয়ে তার সবকথা শুনলেন।
তাকে বললেন-
”আমি তো ছোট ব্যাবসা করি, আপনাকে খুব
ভাল সাহায্য করা হয়তো যাবেনা।
তবে আমি আপনাকে একটা ঠিকানা দিতে পা
আপনি যেহেতু এয়ারফোর্সে চাকরী করতেন
ঢাকা শহর ভাল চিনবেন।
সচিবালয়ে আপনি সমাজকল্যান মন্ত্রীর
সাথে দেখা করে আপনার
সমস্যা খুলে বলতে পারেন।”
বাবার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি যেতে মনস্হির করলেন।
বাবা তাকে আসা-যাওয়ার খরচ দিয়ে ঢাকার একটি গাড়িতে তুলে দিলেন।
বাবা কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। মুজাহিদ সাহেব একজন মন্ত্রী,জামায়াতের
সেক্রেটারী জেনারেল, অনেক ব্যস্ত থাকেন। তার কাছে পংগু
লোকটাকে পাঠানো হল। তার সাথে কোন ধরনের আচরন করেন! তিনি যদি সাহায্য
না পেয়ে ফিরে আসে?ইত্যাদি।
দুদিন পর লোকটি বাবার কাছে ফিরে আসলেন। চোখে আনন্দের অশ্রু।
অশ্রু ভেজা চোখে প্রতিক্রীয়া ব্যাক্ত করলেন-
“আমি সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাইলে মন্ত্রীর
অনুমতি পেলাম। মন্ত্রীর নির্দেশে উনার পি এস আমাকে রেস্ট
রুমে নিয়ে বসতে দিলেন, আমাকে ফ্রেশ হতে বললেন, আমার জন্যে উন্নতমানের
খাবারের ব্যাবস্হা করলেন অতপর উনি আসা পর্যন্ত আমাকে বিশ্রাম
নিতে বললেন। কিছুক্ষন পর উনি আসলে সমস্যার কথা খুলে বললাম।
সমবেদনা জানালেন। আমাকে নগদ কিছু টাকা দিলেন আর মোটা অংকের একটি চেক ধরিয়ে দিলেন তারপর উনার পি এস এর মাধ্যমে আমাকে গাবতলী নিয়ে নাটোরের গাড়িতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী কি এমন হতে পারে! নিজের রেষ্ট রুমে নিয়ে আমার মত একজন পংগু লোক কে এভাবে সামাদর করতে পারলেন!! এমন মানুষ আমি আর কোথা ও দেখিনি!!!”
বাবার প্রতিক্রীয়াঃ
আমার নেতার মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ।
রাসুলে খোদার আদর্শ এমনই ছিল। একেই
বলে ইসলামী আন্দোলেনের নেতা। এ
আন্দেলনের নেতারা এমনই হয়ে থাকেন।
#ঘটনা -০৫
মুজাহিদ সাহেবকে নিয়ে মানিকগঞ্জের একটি ঘটনা ।।
একবার মন্ত্রনালয়ের কাজে মুজাহিদ
সাহেব আসবেন মানিকগঞ্জ জেলায়। তৎকালীন
জেলা প্রশাসক জামায়াতের জেলা আমীরকে ফোন করে বললেন, অমুক
দিন তো মন্ত্রী সাহেব আসছেন, দুপুরের
লাঞ্চও করবেন, তার সাথে আপনার দলের
স্থানীয় নেতা- কর্মী কতজন গেস্ট হবেন লাঞ্চের জন্য???
তখন জেলা আমীর প্রশ্ন করলেন, কিসের গেস্ট?
জেলা প্রশাসক বললেন, কোন মন্ত্রী সফরে আসলে তিনি যে দলের মন্ত্রী -
সেই দলের প্রায় ২০০ স্থানীয় নেতা-
কর্মী তার সাথে লাঞ্চের গেস্ট হন। তাই
আপনি বলুন আপনার দলের কতজন গেস্ট হবেন
এবং আমরা তাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করব।
জেলা আমীর উত্তর দিলেন, মুজাহিদ
ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি সার্কিট
হাউসে খাবেন না, তিনি খাবেন আমাদের বাসায়
তার জন্য ধনেপাত ভর্তা ও সাধারণ কিছু
খাবার প্রস্তুত করতে বলেছেন।
#ঘটনা -০৬
মানুষটা খুবই রাগি। যেমন বিচার চলাকালীন কোর্ট
থেকে তাঁকে প্রিজন ভ্যানে উঠানোর সময়
তিনি পুলিশকে ধমক দিয়েছিলেন
কারন কোর্ট তাঁর জন্য আরাম দায়ক
গাড়ি দিতে বলেছিল। এর আগে তত্বাবধায়ক সরকারের
সময় পুলিশ নাকি বিনা অনুমতিতে আলী আহসান
সাহেবের বাসায় ডুকেছিল।
তিনি কষে একটা চড় মেরে ছিলেন
পুলিশের সেই কর্মকর্তাকে। যার
কারনে পরবর্তিতে তাঁকে আটক
করা হয়েছিল।
#ঘটনা -০৭
চট্টগ্রামের কোন পার্বত্য জেলায়
তিনি সফরে গিয়েছিলেন সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় সমাজ
সেবা মন্ত্রণালয়ের কাজে ১হাজার ফনিক্স সাইকেলের
বিল পাশ করে নেয়া হয়েছিল তাঁর কাছ থেকে।
সেখানে গিয়ে তিনি সেই সাইকেল গুলো দেখতে চাইলেন। তিনি সেই
কাগজের ফনিক্স নামের এক্সপেলিং আর সাইকেলের
গায়ের এক্সপেলিং মিলিয়ে দেখেন
সাইকেল গুলো দুই নম্বর। সাথে সাথে তিনি সেই
কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুত করেন। রাতে সেখানকার জেলা প্রশাসক
নাকি কার বাসায় তাঁর দাওয়াত ছিল। সেখানে গিয়ে দেখেন তাঁর
জন্য বিশাল খবারের আয়োজন। বিশাল বিশাল গলদা চিংড়ি,
বিশাল সাইজের মুরগী, ছাগলের রান সহ রাজকীয় সব খাবার।
তিনি টেবিলে খাবারের আইটেম দেখে বললেন, তোমার মাসিক আয়
কত? শেষমেশ বেচারা ধরা খেলেন। তারও চাকুরীটা হারাতে হয়েছিল।
#ঘটনা -০৮
মন্ত্রী হবার পর দলের সবাইকে বলে দিয়েছিলেন যাতে মন্ত্রনালয়ে গিয়ে কেউ দেখা না করে। এটা অনেকেই বাকাঁ চোখে দেখেছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রমানিত হয়েছিল তার এই কড়াকড়িই তাকে এবং দলকে সন্মানের আসনে বসিয়েছে। দুর্ণীতির একটা কণাও তার নামে উপস্থাপন করা যায়নি।
#ঘটনা -০৯
মন্ত্রী হবার পর মুজাহিদ ভাই ভাবীকে নিয়ে কোন একটা ঘরোয়া প্রোগ্রামে গিয়েছিলেন। তার গলায় ছিল একটি স্বর্নের হার। অন্য অতিথি মহিলারা তাকে জিজ্ঞেস করল, " মন্ত্রী হবার পর ভাই কি এই হারটা আপনাকে দিয়েছেন?" জবাবে ভাবী কেঁদে ফেললেন। বললেন, মন্ত্রী হবার পর সংসার চালাতেই হিমসিম খ্যাঁটে হয়, তিনি দেবেন হার। মন্ত্রী হবার আগে তিনি তার ব্যবসায় সময় দিতে পারতেন, এখন তিনি তাও পারেন না। এই হার আমার ভাই আমাকে দিয়েছে।
এই হল এই লোকের জীবন কাহিনীর ক্ষুদ্র একটা অংশ।
যিনি দূর্ণিতিকে এক ফোটা প্রস্রয় দেননি। দেশের স্বার্থে কাজ করেছেন।
একটা দূর্ণিতিও কোন সরকার তাঁর নামে প্রমান করতে পারেনি।
অথচ আজ তাঁকে হত্যা, লুন্ঠন,ধর্ষনের দায়ে আটক করে রাখা হল।
সেই বানোয়াট অভিযোগেই এই সিংহ পুরুষের রায় দিবে আওমী ক্যাঙ্গারু ট্রাইবুনাল।
আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ শুধু এটাই, তোমার
দ্বীনের সৈনিক, তোমার দ্বীনের
সিপাহসালারদের হেফাজত করো। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন