আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস।

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১৬ জুলাই, ২০১৪, ১১:১১:৫৪ সকাল



আজ ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের রমজান মাসের এই দিনে বদর প্রান্তরে সলামের প্রথম সম্মুখযুদ্ধে মহান রাব্বুল আলামিন সরাসরি সাহায্য দানের মাধ্যমে মুসলমানদের বিজয় দান করেন। তাই এ দিবসকে ইয়াওমুল ফুরকান বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন বলা হয়। সত্যপথের অনুসারী অল্পসংখ্যক রোজাদার মুসলমান বিশাল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিথ্যার অনুসারী কাফের মুশরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে সত্য-মিথ্যার চিরপার্থক্য সূচিত হয়ে যায়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার অনুসারীরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে শান্তিতে অবস্থান করবেন, চতুর্দিকে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাবেন, হজরত মুহাম্মদের (সা.) নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে এটা কাফের কুরাইশ বাহিনী কখনই চায়নি। কোনো মুসলমান পেলেই কোনো কারণ ছাড়াই শুধু ইমান আনার অপরাধে তার ওপর অত্যাচারের খড়গ চালাত। নির্মম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে হত্যা করতে বিবেকে বিন্দুমাত্র নাড়া দিত না। এদিকে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ও তার বাহিনী সিরিয়া থেকে বিভিন্ন রসদ সামগ্রী নিয়ে মক্কায় ফিরতে ছিল। মহানবী (সা.) তার সাহাবাদেরকে কুরাইশদের গতিরোধ করার জন্য নির্দেশ দেন। মুসলমানরা বের হয়েছে এ সংবাদ মক্কায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তারা রণশাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মদিনায় আক্রমণ ও মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে বদর প্রান্তরে এসে জড়ো হয়। এদিকে আবু সুফিয়ান ও তার দল রাস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে পৌঁছে যায়। মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে জনবল ছিল মাত্র ৩১৩ জন। এদের ৭০ জন মুহাজির ও বাকিরা আনসার। অপরদিকে কাফের, কুরাইশ বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার। তন্মধ্যে ১০০ জন অশ্বারোহী, ৭০০ জন উষ্ট্রারোহী ও বাকিরা পদব্রজী ছিল। মূলত মুসলমানদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল না বরং কাফেরদের ব্যবসায়ী কাফেলাকে ধরা উদ্দেশ্য ছিল। রাসুল (সা.) যখন কাফেরদের বের হওয়ার কথা জানতে পারলেন তখন সাহাবাদের সংঘবদ্ধ করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছেন দুটি দলের একটি হয়তো ব্যবসায়ী কাফেলা অথবা অন্যটি সৈন্যবাহিনী। সাহাবাগণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিচলিত অবস্থা দেখে বললেন যে, হে রাসুল (সা.) আপনি আমাদেরকে ধৈর্যশীল, যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ় অবস্থানকারী, আনুগত্যশীল, সাহসী, অকুতোভয় ও নির্দেশ বাস্তবায়নে আপোসহীন ও দ্রুতগামী পাবেন। নবী করিম (সা.) মুহাজির ও আনসারদের কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি আল্লাহ তাআলার শপথ করে বলছি আমার এমন মনে হচ্ছে যে, আমি যেন মুশরিক জাতির হত্যাযজ্ঞ লক্ষ করছি। অতঃপর নবী করিম (সা.) সাহাবিদের নিয়ে বদর কূপের কাছে পৌঁছেন। কুরাইশরা অপর প্রান্তে অবস্থান করল। রাতে আল্লাহ তাআলা এমন বৃষ্টিবর্ষণ করেন যা কাফিরদের জন্য বিরাট বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা সম্মুখে অগ্রসর হতে পারেনি। অপরদিকে মুসলমানদের জন্য সুবিধা হয়। সম্মুখযুদ্ধ শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে ফরিয়াদ করতে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়ায় বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! এ কঠিন মুহূর্তে আপনি আমাকে সাহায্য করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি আমাকে দিয়েছেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রদত্ত ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির শপথ করে বলছি, যদি আপনি বিজয়ী না করেন, তাহলে এ পৃথিবীতে আপনার ইবাদত করার কেউ থাকবে না। মহান রাব্বুল আলামিন রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাদের ডাকে সাড়া দিলেন। যা আল-কুরআনের সুরা আল আনফালের ১২-১৪ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন, 'আর স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের কাছে এ মর্মে প্রত্যাদেশ পাঠালেন যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা পরস্পরে ইমানদারদের মনোবল ও সাহস বৃদ্ধি কর। আর আমি অচিরেই কাফেরদের অন্তঃকরণে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করব। তোমরা কাফিরদের ঘাড়ে আঘাত কর এবং জোড়ায় জোড়ায় আঘাত কর।' অন্যত্র বলা হয়েছে_ 'আর আল্লাহ এমন সৈন্যবাহিনী দিয়ে তোমাদের সাহায্য করেছেন যা তোমরা দেখ নাই।' রাসুল (সা.)-এর উৎসাহব্যঞ্জক কথা শুনে উমাইর ইবনে হুমাম (রা.) হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে বলতে লাগলেন, আমি কি শহীদ হলে জান্নাতে যাব? রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। এ কথা শুনে উমাইর (রা.) খেজুর রেখে দিয়ে বললেন, আমি যদি জীবিত থাকি এবং খেজুরগুলো খেতে থাকি, তাহলে আমার জীবন দীর্ঘ হয়ে যাবে। এ বলেই তিনি খেজুর নিক্ষেপ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদাত বরণ করলেন। যুদ্ধে কাফের কুরাইশ বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে এবং তারা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পলায়ন করে। ৭০ জন কাফের নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। অপরদিকে মুসলমানদের মধ্য হতে ১৪ জন শহীদ হন।

বদর যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছে। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। যুদ্ধে অল্পসংখ্যক সৈন্যবাহিনী বেশি সংখ্যক সৈন্যবাহিনীর ওপর বিজয় অর্জন করেছিল। সুরা আল ইমরানের ১৩নং আয়াতে আল্লাহ উভয় দলের পরিচয় তুলে ধরে বলেছেন, 'এদের মধ্যকার একটি দল আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে আর অপর দল ছিল কাফির।'

বিষয়: বিবিধ

১৭১৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

245155
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:২২
সন্ধাতারা লিখেছেন : Allahu Akbar
245233
১৬ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : বদরের চেতনায় মুসলমানদের এগিয়ে যেতে হবে সকল জুলুমের মোকাবেলা করতে হবে। ধন্যবাদ
245343
১৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:৪৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : লেখাটা শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খুবই ভালো লেগেছে।
246458
২০ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৩০
egypt12 লিখেছেন : আল্লাহ মহান Loser

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File