২৮ অক্টোবর ছবি ব্লগ স্বাধীনতা তুমি রক্ষীবাহিনীর নর হত্যার জাল, বার বার আসে মানুষের ঘাড়ে ভয়নক বাকশাল।

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২৯ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৫১:৫৪ দুপুর



স্বাধীনতা তুমি রক্ষীবাহিনীর নর হত্যার জাল,

বার বার আসে মানুষের ঘাড়ে ভয়নক বাকশাল।

হে ঘুমন্ত মানুষ উঠ, জাগ,দাঁড়াও, তারপর সম্মুখে থাকাও, বিপ্লব তোমাকে ডাকে, বিপ্লব তোমাকে ডাকে............ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হও..

নিজেকে দেখে নাও!

চেতনার আরশীতে...

প্রজন্ম সামনে এগিয়ে চলো

মুক্তির পথ খোঁজো!

রক্তের ধমনীতে...

জামায়াত বাংলাদেশের মৌলিক জাতিস্বত্তা টিকিয়ে রেখেছে, আর আপনি জামায়াত কে নিয়ে বিদ্রুপ করছেন ?

কিছু কিছু অপরাধের জন্য কখনোই কিছু কিছু মানুষকে ক্ষমা করা যায়না। অন্তত আমি পারিনি, কেউ পারেনা, সে ও পারেনি।

আজ থেকে ৭ বছর আগের ঠিক এই দিনটি তে আমার চোখের সামনে একটি পরিবার কে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হতে দেখেছি । এবং সেটা আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর পরিবার।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আঙ্কেল গিয়েছিলেন অফিসে, অন্যান্য সকালের মতোই। কিন্তু কপাল খারাপ! লগি বৈঠার হানাহানিতে পড়ে যান তিনি। দাড়িওয়ালা যারাই ছিল সেদিন রাজপথে সবার উপর ই নেমে এসেছিল অকথ্য অমানুষিক নির্যাতন। আঙ্কেল কে হইহই করে তাড়া করেছিল লগি বৈঠাধারী মানুষ নামের কলঙ্করা। এরপর কোন বিল্ডিঙের কোনে লুকিয়ে জীবন বাচিয়েছিলেন। কানের পাশ দিয়ে শা করে গুলি চলে গিয়েছিল বেশ কয়েকবার। অনেক কষ্টে খোড়াতে খোড়াতে বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।

সেদিন রাতে টি ভি তে খবরে লগি বৈঠা দিয়ে মুজাহিদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু দেখে , আরও বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি আর সহ্য করতে পারেন নি। ব্রেন স্ট্রোক করেন ।

কুরবানি ঈদের কথা মনে পড়ে। আমার মামাতো বোন বারান্দা থেকে গরু জবাই দেখে কান্না করেছিল হাউমাউ করে। ২৮ এ অক্টোবর যাদের মারা হয়েছে তারা ও তো মানুষ! যদি মানুষের প্রাণ বিদ্যমান থাকে কারো বুকে তাহলে এমন দৃশ্য সহ্যাতীত। গ্রামাঞ্চলে কাকতাড়ুয়া থাকে যাদের শরীরের উপরে কাপড় থাকলেও ভিতরে থাকে বাশ।

সেদিন যেসব মানুষ কে খুন করা হয়েছিল, তাদেরকে কাকতাড়ুয়ার মতো পিটানো হয়েছিল। যেন তাদের গায়ে রক্ত মাংস নেই, আছে শুধু অস্থি!

সেদিন স্পটে থাকা সাংবাদিক থেকে পর্যন্ত কেঁদেছিল, কেঁদেছিল বিশ্ব বিবেক। আর আমরা শুধু দেখেছি চেয়ে , আর এমন অমানুষদের ই ক্ষমতায় বসিয়েছি।

মধ্যযুগীয় বর্বরতা কে সেদিন হার মানিয়ে লাশের উপর নৃত্য, জীবিত একজন মানুষের চোখের ভিতরে লগি ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে মারতে মারতে দাঁড়ানো মানুষকে শুইয়ে সেদিন তারা প্রমাণ করেছিল তারা ক্ষমার অযোগ্য।

আপনি একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি হতে পারেন। রাজনীতি নিয়ে আপনার মাথা ব্যাথা নাই থাকতে পারে। কিন্তু , অন্তত এই অমানুষদের সেদিনের কাজেকে সাপোর্ট করে বলবেন না , রাজনীতি তে এমন মারামারির খেলাই হয়! ঠিক ই আছে।

সেদিনের সেই লগি বৈঠার রাজনীতি কোন নিয়ম মানেনা, নীতি মানেনা, মানেনা মানবতার ধর্ম।

শিশুরা ও আঁতকে উঠেছিলো টি ভি সেটে এই নগ্ন উল্লাস লাশের বহর দেখে, কেঁদেছিল অনেক অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষ। আর আমার সেই বান্ধুবির বাবা! যে আই সি ইউ তে টানা ১৯ দিন জীবনের সাথে লড়াই করে ১৭ ই নভেম্বর সেই ২৮ এ অক্টোবরের প্রতি উপহাস করে পৃথিবীর মায়া ছাড়লেন!

একটি পরিবারকে দেখলাম চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে। বিশ্বাস করুন, বাবা কিংবা মায়ের মতো প্রিয়জন আর হয়না। যারা হারায় তারাই বুঝে। ওদের মুখে আমি বাবা হারানোর যে করুন আকুতি আমি দেখেছি, ওদের ঘরে যে হাহাকার দেখেছি একজন মানুষের জন্য তা এতো বছর পরেও পুরন হয়নি।

আর যেসব মায়েরা তাদের আগেই ছেলের লাশকে স্বাগত জানিয়েছেন তাদের জন্য সে লাশ অনেক ভারি।সে জন্যই বলেছিলাম- কখনো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, কখনো হয় রাজপথে। দেহের রক্তক্ষরণে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, হৃদয়ের রক্তক্ষরণেও ঠিক তাই।আঙ্কেলের সেদিন রাজপথে রক্ত ঝরেনি ঠিক ই, কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরণে পৃথিবী ছেড়েছেন।

২৮ এ অক্টোবর সেই দিন, যেদিন আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার জীবনে নেমে এসেছিল ধ্বংসের প্রলয়।

তাই বললাম ,কিছু মানুষকে ক্ষমা করা আমার সাধ্যের অতীত, তাদের মাঝেই পড়ে এসব লগি বৈঠাধারীরা।

লিখেছেনঃ শেখ সাফওয়ানা জেরিন

২৮ শে অক্টোবর ২০০৬ সালের নতুন কোন ছবি আপনাদের কাছে থাকলে মন্তব্যে দেওয়ার অনুরোধ রইল।



বিষয়: বিবিধ

২০৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File