এসব স্লোগানের উদ্দেশ্য কী?

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:২১:২১ বিকাল



ইসলামবিরোধী শক্তি ইসলামের লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টির জন্য নানা ধরনের কূটকৌশল ব্যবহার করে থাকে। কৌশল সবাই ব্যবহার করে। কিন্তু কূটকৌশল কখনও ভালো বলে গণ্য হয় না।

সম্প্রতি এমনি স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছেÑ ‘রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার’ বিবিসি সংলাপ ও শাহবাগীদের মুখে এটি শুনেছি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলা যে, প্রত্যেকে তার ধর্ম অনুসরণ করবে। রাষ্ট্রের সাথে কোনো ধর্মের সম্পর্ক করা যাবে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে এটা খুব ভালো। রাষ্ট্র কেন কিছু লোকের ধর্ম অনুসরণ করবে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠই হোক না কেন। এটা হচ্ছে বিভ্রান্ত সৃষ্টির অপপ্রয়াস। বিষয়টি এত সহজ সরল নয়। এটা হচ্ছে সেকুলারিজমকে (যে মতবাদে রাষ্ট্র ও শিক্ষা থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা হয়) রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অথচ রাষ্ট্রের বেশির ভাগ লোকই সেকুলার নয়।

বাংলাদেশে এর অর্থ হচ্ছে ইসলামকে রাষ্ট্রের আদর্শ বা আইডোলজি (ওফবড়ষড়মু) হতে বাধা সৃষ্টি করা। কে না জানে যে, ইসলাম কেবল নিছক একটি আকিদা বিশ্বাসই নয়, এটি একটি আইনব্যবস্থা ও সংস্কৃতিও। ইসলামের রয়েছে বিস্তারিত আইনকানুন। ইসলামে ব্যক্তিগত বিষয়াদি ছাড়াও রয়েছে ব্যবসা আইন, ব্যাংকিং আইন, শাস্তির আইন, যুদ্ধ ও শান্তির আইন, আন্তর্জাতিক আইন। ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার সমান। প্রধানমন্ত্রী মদিনার সনদ মোতাবেক দেশ চলবে বলেছেন। তাতে এক দিকে অমুসলিমদের অধিকার সমান বলা হয়েছে (ধারা ১৬)। আবার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কোরআন ও সুন্নাহ বলা হয়েছে (ধারা ২৩ ও ৪২)। ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের নিরাপত্তার বা অধিকারের কোনো সমস্যা নেই।

একটি রাষ্ট্রের আদর্শ হওয়ার জন্য একশত ভাগ লোকের তার অনুবর্তী হওয়ার প্রযোজন নেই। যেমন কমিউনিস্ট রাষ্ট্র বা সোশালিস্ট রাষ্ট্র বা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের সবাই কমিউনিস্ট বা সোশালিস্ট বা পুঁজিবাদী নন। শতভাগ লোক এসব আদর্শ সমর্থন করে না। তেমনিভাবে বাংলাদেশের একশত ভাগ লোকের মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই। বেশির ভাগ লোক মুসলিম হলেই রাষ্ট্রকে ইসলামি আদর্শকে তার মূল আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যারÑ এ স্লোগান উদ্দেশ্যমূলক ও প্রতারণামূলক। এটি একটা প্রতারণা, যার মাধ্যমে সেকুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় স্লোগানদাতারা। তদুপরি এসব স্লোগান মানব রচিত। এগুলো কুরআন বা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের কথা নয়। এসব মানার ব্যাপারে আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এরকম আর একটি স্লোগান হচ্ছে, ‘যার ধর্ম তার কাছে, রাষ্ট্রের কী করার আছে’। এটিও একই ধরনের প্রতারণা। এর জবাবে আমি যদি বলি, ‘যার ব্যবসায় তার কাছে, রাষ্ট্রের কী করার আছে’, তা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তা হলে রাষ্ট্র কি ব্যবসায় সম্পর্কে কোনো আইন করতে পারবে না?

এসব প্রতারণামূলক স্লোগান সম্পর্কে আমি সব ধর্মপ্রাণ এবং বিবেকবান ব্যক্তিকে সাবধান থাকতে অনুরোধ করছি।

লেখক : সাবেক সচিব বাংলাদেশ সরকার

উৎসঃ নয়া দিগন্ত

শাহ আবদুল হান্নান



বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File